১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড সম্পূর্ণরূপে প্রতিবিপ্লব ছিল বলে মন্তব্য করেছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক, লেখক ও নিউজবাংলার সম্পাদক স্বদেশ রায়।
তার মতে, যে ঘটনার মধ্য দিয়ে একটি জাতির সংবিধান বদলে যায়, সেই ঘটনাকে কখনোই একটি হত্যাকাণ্ড হিসেবে চিহ্নিত করা যায় না।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীলদলের আয়োজনে ‘বঙ্গবন্ধু পরবর্তী বাংলাদেশ’ শিরোনামে রোববার বিকেলে এক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে স্বদেশ রায় এসব মন্তব্য করেন।
নিউজবাংলার সম্পাদক বলেন, ‘প্রতিবিপ্লবীরা রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে আমাদের সংবিধানে যে পরিবর্তনগুলো এনেছিল, সেসব দিয়ে তারা প্রতিবিপ্লবটিকে একেবারে সাংবিধানিকভাবে বাস্তবায়িত করেছিল।’
তিনি বলেন, “দেশের সংবিধানের প্রস্তাবনাই সংবিধানের মূল সুর এবং মূল বিষয়। মূল প্রস্তাবনায় বলা ছিল, ‘জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রামের মাধ্যমে’ রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠা হয়। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ওই জায়গাটা পরিবর্তন করে বলা হয় ‘ঐতিহাসিক যুদ্ধের মাধ্যমে’। সংগ্রাম কথাটি বাদ দিয়ে যুদ্ধ কথাটি আনা হয়েছে শুধুমাত্র নয় মাসের যুদ্ধটাকে রাখার জন্য। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ২২ বছর পাকিস্তানি শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম করেছিল তা বাদ দেয়ার জন্য। এর মধ্য দিয়ে অসহযোগ আন্দোলন, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও ভাষা শহীদের এবং ৬ দফাকে অস্বীকার করা হয়েছে বাঙালি, বাংলা ভাষা ও জাতীয়তাবাদকে শেষ করে দেয়ার জন্য।’
জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ এখনও বিনির্মাণ হয়নি বলে মনে করেন স্বদেশ রায়। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর যে বাংলাদেশ ছিল, সেই বাংলাদেশে আমরা এখনও পৌঁছাতে পারিনি। সে জন্য আমাদের আরও দীর্ঘ সংগ্রাম করতে হবে। বঙ্গবন্ধু পরবর্তী বাংলাদেশে গত ৪৬ বছরে রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিকসহ অনেক পরিবর্তন ঘটেছে।
‘রাষ্ট্রধর্ম যে ইসলাম করা হলো, সেটি এখনও বাতিল করা হয়নি। সংবিধানের ৩৮ নম্বর অনুচ্ছেদে শর্ত ছিল, কোনো ধর্মীয় সংগঠন বা সমিতি করা যাবে না। পরে সেটি পরিবর্তন করা হয়, যার ফলে জামায়াতে ইসলামী দাপিয়ে রাজনীতি করছে।’
ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কী বলেছেন, আমি তা নিজেই শুনেছি বঙ্গবন্ধুর মুখ থেকে। বর্তমানে বাংলাদেশ রিলিফ নেয় না, বরং পাশের দুই দেশকে রিলিফ দিয়েছে।’
ওই সময় তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘কারা আমাদের শত্রু আর কারা মিত্র তা এত বছরেও প্রজন্মকে শেখাতে পারিনি।’
অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল অ্যান্ড কালচারাল স্টাডিজ কলকাতার পরিচালক অরিন্দম মুখোপাধ্যায়।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জাতির পিতা শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতের মানুষের মনেও গভীরভাবে রেখাপাত করেছেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, ধর্ম নিরপেক্ষতা বাঁচিয়ে রাখা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করতে হবে। শত্রুর বিরুদ্ধে, অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে; সোশ্যাল মিডিয়াতে অ্যাকটিভ হতে হবে।’
ওয়েবিনারে আলোচক ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এস এম আনোয়ারা বেগম।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে এ বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু তার ত্যাগ, জুলুম-অত্যাচার, নিপীড়ন (সহ্য করে), নেতৃত্ব সব কিছুর বিনিময়ে এ বাংলাদেশ দিয়ে গেছেন। একাত্তর সালে আমরা যারা যুদ্ধ করেছি, তাদের কাছে বঙ্গবন্ধুই ছিল একমাত্র অনুপ্রেরণা।
‘যুদ্ধকালীন সময়ে আমাদের একটাই ব্রত ছিল, যেকোনো মূল্যে বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে হবে।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নীলদলের সভাপতি অধ্যাপক মো. আবুল হোসেনের সভাপতিত্বে ওয়েবিনারের শুরুতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন নীলদলের সহসভাপতি ও ওয়েবিনারের আহ্বায়ক ড. মো. ছিদ্দিকুর রহমান।
ওয়েবিনার সঞ্চালনায় ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল কাদের ও সমাজকর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বুশরা জামান।
আলোচনায় অন্যদের মধ্যে অংশ নেন ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ সেলিম ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিপ্রা সরকার।