বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে দেশকে পিছিয়ে দেয়া হয়েছে’

  •    
  • ১৫ আগস্ট, ২০২১ ২২:৫৬

ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় আলোচকরা বললেন, বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকলে বাংলাদেশ তার আরাধ্য সোনার বাংলা অর্জনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যেত। তার আরাধ্য ছিল মানুষের প্রতি ভালোবাসা।

পঁচাত্তরে ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে দেশকে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সঙ্গে তার সোনার বাংলার স্বপ্নকেও খুন করা হয়েছিল। তিনি জীবিত থাকলে বাংলাদেশ তার আরাধ্য সোনার বাংলা অর্জনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যেত।

রোববার জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ‘রক্তে ভেজা আগস্ট, রক্তস্নাত বাংলাদেশ, রক্তাক্ত বাঙালি’ শিরোনামে এক ভার্চুয়াল আলোচনা অনুষ্ঠানে আলোচকরা এ কথা বলেন। এটির আয়োজক ছিল অনলাইন সংবাদ পোর্টাল নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকম।

আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, এক্সিম ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম মজুমদার ও পদ্মা ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি চৌধুরী নাফিজ সরাফাত।

আলোচনায় অংশ নিয়ে কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা যারা বঙ্গবন্ধুর বেশি ঘনিষ্ঠ ছিলাম, আগস্ট মাস এলেই আমাদের চোখ ভিজে যায়। আগস্ট মাস এলে ভয় লাগে। আমরা ভীত সন্ত্রস্ত্র হই। কেননা শুধু বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে ওরা হত্যা করেছে, তাই না। এই আগস্ট মাসে আমাদের জননেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপরও হামলা করা হয়েছে।’

অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু আমাদের গণতন্ত্র সমাজতন্ত্র, বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং ধর্মনিরপেক্ষতা – এই চারটি স্তম্ভ দিয়ে গেছেন। এই চারটি স্তম্ভকে অনুসরণ করে তিনি দেশ পরিচালনা করছিলেন। সেটিই ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে আমরা বুঝতে পারি, তিনি যেভাবে দেশকে নেতৃত্ব দিতে শুরু করেছিলেন, তাতে তিনি যদি জীবিত থাকতেন তাহলে বাংলাদেশ আজকে কোথায় থাকত।’

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জীবনের মূল আদর্শ ছিল মানুষের প্রতি ভালবাসা। সে কথা তিনি বহুবার বলেছেন। দেশকে ভালবাসার বাইরে তিনি যেতে পারলেন না। তিনি মানুষের ভালবাসা নিয়েই পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন। মানুষকে ভালবাসেন বলেই তিনি আশপাশের কাউকে অবিশ্বাস করেন নি।’

এক্সিম ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, ‘১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কারা ছিলেন, আমরা যদি এটা বিশ্লেষণ করি, তাহলেই বোঝা যাবে। যেহেতু বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধে মতো মহান কাজ অতি অল্প সময়ের মধ্যে করে ফেলেছিলেন, তাই প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য পাকিস্তানিরা আমাদের দেশের কিছু স্বাধীনতাবিরোধীর সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল।’

তিনি বলেন, ‘অনেকেই একে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বলে থাকে, কিন্তু আমি তা বলতে চাই না। আমি বলি, একটি স্বাধীন দেশের বিরুদ্ধে এটি একটি বিরাট ষড়যন্ত্র। সদ্যস্বাধীন দেশকে স্বাধীনতার পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র। মানে তারা আবার দেশকে পাকিস্তান করতে চেয়েছিল।’

তিনি বলেন, ‘১৫ আগস্ট ক্যু সংঘটনের পরপরই ক্ষমতা দখল করেন খোন্দকার মোশতাক আহমেদ। উনি একটা কালো অধ্যায়ের সৃষ্টি করেছিলেন। এদিন সকালেই সামরিক আইন জারি করেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মাত্র ৪১ দিনের মাথায় ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ নামক একটি কালো আইন জারি করা হয় ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর। এ কালো আইনের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সকালে সামরিক আইন ঘোষণার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া রুদ্ধ করা।

‘পরবর্তী সময়ে অবৈধ জিয়া সরকার ক্ষমতা দখল করে এবং সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার এবং ৯ এপ্রিল ১৯৭৯ সালের মধ্যে সরকার কর্তৃক গৃহীত সব পদক্ষেপকে বৈধতা দেয়।

‘অবৈধ জিয়া সরকার বিদেশি মিশনে লাভজনক চাকরি দিয়ে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের পুনর্বাসন করলেন এবং বাংলাদেশের মাটিতে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে মন্ত্রী বানালেন, বড় বড় পদে বসালেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিদেশে কূটনীতিক বানানো হলো। জিয়া তাদের সব রকম সুবিধা দিলেন। এ থেকে বঙ্গবন্ধু হত্যার মূল হোতা এবং সুবিধাভোগী কারা ছিলেন, তা বোঝা কি খুব কঠিন?’

ষড়যন্ত্রকারীরা কেন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলো এর বিশ্লেষণে পদ্মা ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত বলেন, ‘১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের মহান স্বাধীনতা অর্জন করি।

‘পাকিস্তানি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারী স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধু। তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন এবং সোনার বাংলায় পরিণত করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে শুরু করেন। তবে দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীরা ১৯৭১ সালে অপমানজনক, শোচনীয় পরাজয় মেনে নিতে পারেনি। তারা সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ করার পাশাপাশি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য একের পর এক ষড়যন্ত্র চালিয়ে যায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী অশুভ চক্র ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীরাই অবশেষে ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট রাতের অন্ধকারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে। ১৯৭৫ সালের ওই ঘটনা মানবতার ওপর চরম আঘাত।’

তিনি বলেন, ‘শত শত সমস্যাজর্জরিত যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন ও পুনর্বাসনে শূন্য থেকে দেশ গড়ার কাজে হাত দেন বঙ্গবন্ধু। তার সরকারের প্রধান দায়িত্ব ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠন। বঙ্গবন্ধু সরকারের গৃহীত চারটি মূলনীতি -জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং জনগণের প্রতি গভীর ভালোবাসাই ছিল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের পুনর্গঠনের প্রধান প্রেরণাদায়ী স্তম্ভ।

‘ভঙ্গুর ভৌত অবকাঠামো ও অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য বঙ্গবন্ধু যে সমস্ত নীতি গ্রহণ করলেন, তার মধ্যে আছে ১০৭ কোটি টাকার একটি স্বল্পমেয়াদি পুনর্বাসন কর্মসূচি। এতে দুই কোটি শরণার্থীর পুনর্বাসন ও অন্নসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়। প্রথম পর্যায়ে মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর সরকার এ ব্যাপারে পূর্ণতা দিতে পেরেছিলেন।’

১৫ আগস্ট না হলে কেমন হতো আজকের বাংলাদেশ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে তিনি এত সব প্রতিকূলতা পায়ে দলে ঠিকই সোনার বাংলা অর্জনের পথেই হাঁটছিলেন। কিন্তু তার শাহাদাত বরণের পর স্বদেশ চলতে থাকে উল্টো দিকে। মাথাপিছু আয় কমতে থাকে। আসলেই পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্নও খুন হয়েছিল।

‘কল্পনা করুন, যদি অবিচ্ছিন্নভাবে আরো দুই দশক তিনি চালিয়ে যেতে পারতেন তার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের অভিযাত্রা, তাহলে কোথায় পৌঁছে যেত বাংলাদেশের অর্থনীতি! তাঁর আরাধ্য সোনার বাংলা অর্জনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যেতাম আমরা।

‘পরিসংখ্যান দিয়েই কথার সত্যতা যাচাই করা যাক। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে চার বছর নমিন্যাল জিডিপি বছরে গড়ে ২৮ শতাংশ হারে বেড়েছিল। অথচ তিনি শহীদ হওয়ার পরবর্তী ৩৩ বছরে নমিন্যাল জিডিপি বছরে গড়ে মাত্র ৬ শতাংশ হারে বেড়েছে। তবে ২০০৯ থেকে আমাদের গড় বার্ষিক নমিন্যাল জিডিপি বৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক ধারায় ফিরতে শুরু করেছে। আবার ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সময়কালে প্রতিবছর গড়ে ২৫ শতাংশ হারে পার-ক্যাপিটা জিডিপি বাড়লেও তার পরের ৩৩ বছরে তা বেড়েছে গড়ে মাত্র ৩ শতাংশ হারে। এখানেও ২০০৯ সাল থেকে ইতিবাচক ধারা লক্ষ করা যাচ্ছে।’

এ বিভাগের আরো খবর