আফগানিস্তান আবার তালেবানের দখলে চলে যাওয়ার বাস্তবতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যখন নিরাপত্তা শঙ্কায় তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিচ্ছে, তখন কয়েকজন বাংলাদেশিকেও ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের কোনো ভূমিকা নেই আফগানিস্তানে। দূতাবাস নেই, আছে কনস্যুলেট। সেখানে বাংলাদেশি কর্মী আছেন কি না বা থাকলেও কতজন, সে বিষয়ে এখনও তথ্য প্রকাশ পায়নি।
তবে বাংলাদেশি এনজিও ব্র্যাকের নানা প্রকল্প আছে দেশটিতে, আর তালেবানের জয়জয়কারের মধ্যে উদ্বেগ আছে সেখানে কাজ করা বাংলাদেশি কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়েও।
যোগাযোগ করা হলে নিউজবাংলাকে ব্র্যাক জানিয়েছে, আগামী ২২ আগস্ট বাংলাদেশি কর্মীদের দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।
ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক শামেরান আবেদ বলেন, ‘আফগানিস্তান থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক সেনা প্রত্যাহার শুরুর পর থেকে দেশটিতে ক্রমবর্ধমান সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে ব্র্যাক তার কর্মীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নিয়েছে।
‘আফগানিস্তানে কর্মরত কর্মীদের ঝুঁকি নিরসন করে তাদের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনাল।’
আফগানিস্তানে শিক্ষাসহ নানা কার্যক্রম পরিচালনা করে ব্র্যাক। ছবি: ব্র্যাকের ওয়েবসাইট থেকে
দেশটিতে পশ্চিমা সেনাবাহিনী অবস্থান করার সময় ২০১৬ সালের ১৭ মার্চ সংঘাতপ্রবণ আফগানিস্তানের কুন্দুজ থেকে বাগলান যাওয়ার পথে অপহৃত হয়েছিলেন ব্র্যাকের দুই বাংলাদেশি কর্মী শওকত আলী ও সিরাজুল ইসলাম সুমন। পরে দেনদরবার করে এপ্রিলে তাদের উদ্ধার করা হয়।
২০০১ সালের ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক বাহিনীর অভিযানের মুখে তালেবানরা কাবুল ছেড়ে যাওয়ার পর দেশটি পুনর্গঠনে যে কর্মযজ্ঞ শুরু হয়, তাতে অংশ নেয় ব্র্যাকও।
২০০২ সালে ব্র্যাক নানা প্রকল্প নিয়ে যায় দেশটিতে। ১৯ বছরের বেশি সময় ধরে আফগানিস্তানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কমিউনিটির উন্নয়ন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধ সংক্রান্ত সহায়তা, মানবিক সহায়তা এবং খাদ্য নিরাপত্তা খাতে কাজ করে আসছে সংস্থাটি।
দেশটির ১০টি প্রদেশে ব্র্যাককর্মীর সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। এর মধ্যে বাংলাদেশি কর্মীর সংখ্যা ১২ জন বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। তবে এদের সবাই এই মুহূর্তে সেখানে নেই।
ব্র্যাক জানিয়েছে, দেশটির বিদেশি কর্মীদের মধ্যে তিন বাংলাদেশিসহ পাঁচজন ছুটিতে দেশটির বাইরে থাকায় তাদের আগে থেকেই সেখানে যেতে নিষেধ করা হয়েছিল।
বাকি ৯ জনের মধ্যে তিন বাংলাদেশি গত শুক্রবার ঢাকায় আসেন। বাকি ছয়জনের ২২ আগস্ট দেশের পথে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে।
অর্থাৎ আরও এক সপ্তাহ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে থাকতে হবে বাংলাদেশিদের। এটি নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করছে কি না, সে প্রশ্ন বড় হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশি ছাড়াও ব্র্যাকের হয়ে কাজ করা আরও ১৪ জন কর্মী আছেন অন্যান্য দেশের। তাদেরও নিজ নিজ দেশে ফেরত নেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
আফগানিস্তানের মাটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের পর পতনের মুখে পড়েছে প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির সরকার। দেশটির বেশির ভাগ এলাকা দখলে নেয়ার পর এবার তালেবান যোদ্ধারা কাবুল দখলে নিতে শুরু করেছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, এখন প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির সামনে দুটি পথ খোলা আছে, একটি তালেবানের কাছে আত্মসমর্পণ অথবা রাজধানী কাবুল বাঁচাতে তালেবানের সঙ্গে যুদ্ধ করা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আশরাফ ঘানির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, রক্তপাত এড়িয়ে একটি রাজনৈতিক সমাধানের পথে আসতে।