বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দেশে এলো রূপপুরের দ্বিতীয় চুল্লিপত্র

  •    
  • ১২ আগস্ট, ২০২১ ২২:০০

রিঅ্যাক্টর ও স্টিম জেনারেটর প্রত্যেকটির ওজন ৩৪০ টন ও দৈর্ঘ্য যথাক্রমে ১২ ও ১৪ মিটার। এগুলোকে প্রথমে প্লান্টের বিশেষ বার্থে নেয়া হয় এবং সেখান থেকে যন্ত্রাংশগুলোকে জাহাজে করে জলপথে নভোরোসিস্কে নেয়া হয়। সেখান থেকে এগুলো ১৪ হাজার কিলোমিটার সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসে পৌঁছায়।

দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় রিঅ্যাক্টর বা চুল্লিপত্র দেশে এসে পৌঁছেছে। এই রিঅ্যাক্টর ভ্যাসেলের সঙ্গে এসেছে চারটি স্টিম জেনারেটর।

বৃহস্পতিবার প্রকল্পের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রোসাটম (রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি করপোরেশন) থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এর আগে গত বছরের অক্টোবর মাসে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের রিঅ্যাক্টর ভেসেল এবং স্টিম জেনারেটর বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে নকশা অনুযায়ী রিঅ্যাক্টর ভেসেল স্থাপনের কথা রয়েছে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রোসাটমের প্রকৌশল শাখার নকশা অনুযায়ী নির্মিত হচ্ছে।

এর আগে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, রাশিয়ার জেএসসি এইএম টেকনোলজির ভল্গোদনস্ক শাখা (রোসাটমের যন্ত্র প্রস্তুতকারী শাখা এটোমএনার্গোম্যাস) রূপপুর প্রকল্পের মূল যন্ত্রাংশ তৈরি করেছে।

রিঅ্যাক্টর প্ল্যান্ট প্রস্তুতি অত্যন্ত উচ্চ প্রযুক্তির একটি কাজ, যার দক্ষতা বিশ্বে অল্প কয়েকটি দেশের রয়েছে। জেএসসি এইম টেকনোলজি রাশিয়ার একমাত্র কোম্পনি, যারা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্টিম জেনারেটিং প্লান্টের সম্পূর্ণ অংশ তৈরি করে। অ্যাটোমম্যাস বছরে সর্বোচ্চ চার সেট যন্ত্রাংশ প্রস্তুত করতে পারে।

পাবনার রূপপুরে পারমাণবিক চুল্লির জন্য ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর কংক্রিটের মূল স্থাপনা নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরের বছর জুলাইয়ে দ্বিতীয় চুল্লির নির্মাণকাজ শুরু হয়।

কাজ শুরুর ৬৮ মাসের মধ্যে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল স্থাপনা নির্মাণের কথা রয়েছে রাশিয়ার কোম্পানি অ্যাটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের।

রোসাটম জানিয়েছে, রিঅ্যাক্টর নির্মাণপ্রক্রিয়ায় ৭৬৮টি অপারেশন এবং ১৪৩টি কন্ট্রোলিং পয়েন্টসহ এটি নির্মাণ করতে মোট সময় লাগে দুই বছর। এই প্ল্যান্টের বিশেষজ্ঞরা ইউনিটের স্ট্যান্ডার্ড কভার যুক্ত হাইড্রোলিক টেস্টসহ চুল্লি পাত্রটির সব ধরনের পরীক্ষা চালিয়েছেন।

এই পরীক্ষা চলার সময় চুল্লিটির অভ্যন্তরে ২৪ দশমিক ৫ এমপিএ চাপ সৃষ্টি করা হয়, যা অপারেটিং চাপের চেয়েও ১ দশমিক ৪ গুণ বেশি। যন্ত্রাংশ প্রস্তুতির শেষ ধাপ হলো অভ্যন্তরীণ যন্ত্রাংশ পরীক্ষামূলকভাবে সাজানো।

নকশা অনুযায়ী কোর ব্যারেল, কোর বাফেল এবং প্রতিরক্ষামূলক টিউব ইউনিটকে চুল্লি পাত্রের অভ্যন্তরে স্থাপন করা হয়।

রিঅ্যাক্টর ও স্টিম জেনারেটর প্রত্যেকটির ওজন ৩৪০ টন ও দৈর্ঘ্য যথাক্রমে ১২ ও ১৪ মিটার। এগুলোকে প্রথমে প্লান্টের বিশেষ বার্থে নেয়া হয় এবং সেখান থেকে যন্ত্রাংশগুলোকে জাহাজে করে জলপথে নভোরোসিস্কে নেয়া হয়। সেখান থেকে এগুলো ১৪ হাজার কিলোমিটার সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসে পৌঁছায় ।

এর আগে জেএসসি এইএম টেকনোলজির ডিরেক্টর জেনারেল ইগোর কটভ বলেছিলেন, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, এই কাজে বাংলাদেশি সহযোগীদের যেকোনো জিজ্ঞাসা এবং অনুরোধের বিষয়ে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

‘চুক্তির নিয়ম অনুযায়ী এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের মূল যন্ত্রাংশগুলো সময়মতো পাঠানো হচ্ছে। এ প্রক্রিয়া সম্ভব হয়েছে আমাদের কার্যকর মিথস্ক্রিয়া ও আমাদের ওপরে ভরসা রাখার জন্য। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের এই সহযোগিতা যেকোনো প্রকারে বজায় থাকবে।’

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিটের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে দেয়া হবে। পরের বছর চালু হবে সমান ক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিট। রূপপুর প্রকল্প এলাকায় ১ হাজার ৬২ একর জমির ওপর চলছে বিপুল কর্মযজ্ঞ।

রাশিয়ার সহায়তায় এ প্রকল্পে দুই ইউনিট মিলিয়ে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার (১ লাখ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা)।

আট হাজারের মতো জনবল এখন এ প্রকল্পে কাজ করছে, যার মধ্যে ১ হাজার ৮০০ জন রাশিয়ানসহ বিদেশি জনবল রয়েছে প্রায় ২ হাজার।

তৃতীয় প্রজন্মের প্রযুক্তি ব্যবহার করে নির্মাণ করা হচ্ছে পাঁচস্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা-সংবলিত এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র।

২০২০ সালের ১০ নভেম্বর প্রকল্প এলাকার নবনির্মিত জেটিতে নোঙর করে প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের চুল্লিপাত্র এবং জেনারেটরবাহী বিশেষায়িত বার্জ। নৌবাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় মোংলা বন্দর থেকে বার্জটি রূপপুরে নেয়া হয়। যন্ত্র দুটি নির্মাণ করা হয়েছিল ভোলগাদোনস্কে। ওই চুল্লিপাত্রটির ওজন ছিল ৩৩৩ দশমিক ৬ টন এবং স্টিম জেনারেটরের ওজন ৩৪০ টন।

একই বছরের আগস্টের শেষ দিকে রাশিয়ার পেট্রোজাবাদ বন্দর থেকে যন্ত্র দুটি নিয়ে বিশেষ জাহাজ বাংলাদেশে রওনা দেয়। ১৪ হাজার কিলোমিটার আন্তর্জাতিক নৌপথ পাড়ি দিয়ে সেগুলো ২০ অক্টোবর মোংলা বন্দরে পৌঁছায়।

১৯৬১ সালে পদ্মার তীরে পাবনার রূপপুরে এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হলেও সেটি প্রকল্পের চেহারা নিতে অর্ধশতক পার হয়ে যায়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর এ প্রকল্পে গতি আসে; চুক্তি হয় রাশিয়ার সঙ্গে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালের অক্টোবরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তি স্থাপন করেন। প্রকল্প বাস্তবায়নে ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর রোসাটমের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশের পরমাণু শক্তি কমিশন।

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড ব্যয়ের এ প্রকল্পে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়।

এ বিভাগের আরো খবর