শান্তি মিশনে থাকা অবস্থায় ও ছুটিতে দেশে ফিরে ধর্ষণের অভিযোগে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) বাগেরহাট জেলার পুলিশ সুপার মোক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেছেন এক নারী পুলিশ পরিদর্শক।
বৃহস্পতিবার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক মোছা. কামরুন্নাহারের আদালতে মামলাটি করা হয়।
বিচারক কামরুন্নাহার ক্যামেরা ট্রায়ালের মাধ্যমে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে বাদীর জবানবন্দি নেয়ার পর জানান, এ বিষয়ে পরে আদেশ দেয়া হবে। পরে একই দিন বিকেলে মামলাটি রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানার ওসিকে এজাহার হিসেবে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ফারহানা আফরোজ অরেঞ্জ।
মামলার আবেদনে ওই নারী পুলিশ পরিদর্শক জানান, ২০১৯ সালের মে মাসে আসামি পুলিশ সুপার মোক্তার হোসেন সুদানে জাতিসংঘের শান্তি মিশনে পুলিশের কন্টিনজেন্ট কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত হন। সুদানে একই মিশনে আগে থেকে কর্মরত থাকায় মিশনসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা নেয়ার নাম করে বাদীর সঙ্গে যোগাযোগ করতেন পুলিশ সুপার মোক্তার।
আসামি বাদীকে বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য বললে লজিস্টিক অফিসার হিসেবে তিনি সরল বিশ্বাসে ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে একটি বাসার ব্যবস্থা করে দেন।
মামলার আবেদনে আরও বলা হয়েছে, আসামি বাদীকে জানান তিনি নিজে রান্না করে খেতে পারেন না। রেস্টুরেন্টের খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। পরে তিনি বাদীর সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করার অনুরোধ জানান।
বিদেশে নিজের দেশের একজন মানুষ, তার ওপর ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা- এ কারণে বাদী সহানুভূতিশীল হয়ে আসামির খাওয়া-দাওয়ার প্রস্তাবে রাজি হন। এভাবে কিছুদিন যেতে না যেতেই আসামি বাদীকে তার পারিবারিক কলহ, স্ত্রীর সঙ্গে অশান্তির কথা ও বনিবনা না হওয়ার কথা বলেন। এসব কথা বলার অজুহাতে তিনি সময়ে-অসময়ে বাদীর বাসায় যাতায়াত শুরু করেন।
মামলার আবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের ২০ ডিসেম্বর দুপুরে খাওয়া-দাওয়া সেরে আসামি বাদীর বাসা থেকে চলে যান। এর ঘণ্টাখানেক পর আসামি ফিরে এসে বাদীর দরজায় নক করেন। পরে ওই নারী পরিদর্শকের গাড়ির চাবি নেয়ার কথা বলে ঘরে ঢোকেন। একপর্যায়ে অপ্রস্তুত অবস্থার সুযোগ নিয়ে আসামি ওই নারী পরিদর্শককে ধর্ষণ করেন।
পরে তিনি বাদীকে ঘটনা কাউকে না জানানোর জন্য ভয়ভীতি দেখিয়ে হুমকি দিয়ে চলে যান। এর দুই দিন পরে ২২ ডিসেম্বর ক্ষমা চাওয়ার অজুহাতে বাদীর বাসায় এসে আবার ধর্ষণ করেন।
মামলার আবেদনে বলা হয়েছে, পরে আসামি বারবার সময়-অসময়ে বাদীর ঘরে জোর করে ঢুকে যেতেন। এরপর তিনি বাদীকে মুখে মুখে কলমা পড়ে বিয়ের প্রলোভন দেখান।
আরও পড়ুন: ‘বিয়ের প্রলোভনে’ যৌন সম্পর্ক কি ধর্ষণ?
মামলার আবেদনে আরও বলা হয়েছে, ছুটিতে দেশে ফিরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ঢাকার উত্তরার একটি হোটেলেও বাদীকে কয়েকবার ধর্ষণ করেন আসামি। একই বছরের জুন মাসেও সুদানের খার্তুমে একটি হোটেলে বাদীকে ধর্ষণ করা হয়। একইভাবে ওই বছরের নভেম্বরেও ঢাকার উত্তরার একই হোটেলে কয়েকবার ধর্ষণের শিকার হন বাদী।
মামলার আবেদনে বলা হয়েছে, আসামিকে বাদী নিকাহ রেজিস্ট্রি করার তাগিদ দিলে আসামি টালবাহানা করা শুরু করেন। ২০২১ সালের ১২ এপ্রিল রাজারবাগে আসামির বাসায় বাদী হাজির হয়ে কাবিননামা করতে বললে আসামি অস্বীকৃতি জানান। এ সময় আসামির বাসায় তার স্ত্রী এবং পরিবারের অন্য সদস্যরা উত্তেজিত হয়ে বাদীকে মারধর করেন।
মামলার আবেদনে ওই নারী পরিদর্শক আরও উল্লেখ করেছেন, করোনা মহামারির কারণে আদালত বন্ধ থাকায় মামলার আবেদনে দেরি হয়েছে।
এ বিষয়ে পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মোক্তার হোসেনকে মাসখানেক আগে পিবিআইতে পোস্টিং দেয়া হয়েছে। আমরা এই অভিযোগের বিষয়ে কোনো আদেশ পাইনি। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে মামলা হওয়ার বিষয়টি শুনেছি।’
তিনি বলেন, ‘আদালতের নির্দেশে আমাদের তদন্তের জন্য বলা হলে, সাধারণ নাগরিকের ক্ষেত্রে যেভাবে কোনো মামলার তদন্ত হয় আমরা সেভাবেই এই মামলাটি তদন্ত করব। এ ছাড়া পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনা পেলে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তার ব্যাপারে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’