করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সরকারি চাকরিতে আবেদন করার বয়সীমা যাদের শেষ হয়ে গেছে বা শেষ হতে যাচ্ছে তাদের জন্য ২১ মাস ছাড় দিচ্ছে সরকার। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত যাদের বয়স ৩০ পূর্ণ হয়েছে, তারা এ বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে নিয়োগের জন্য যত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হবে সেখানে আবেদনের সুযোগ পাবেন।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমরা বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে প্রণোদনা দিয়েছি। সেক্ষেত্রে চাকরিপ্রার্থীদের জন্য একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে, আবার নতুন করে। গত বছরও আমরা করেছিলাম, গত বছর ২৫ মার্চ থেকে যাদের চাকরির বয়স শেষ হয়েছে, তারা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য বয়স শিথিল করেছিলাম। আবার নতুন করে আরেকটি প্রস্তাব পাঠিয়েছি।’
প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে জানিয়ে ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে অনুমোদন হয়ে আসলে সেই বিষয়ে আমরা বলতে পারব। প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিলে চাকরি প্রার্থীরা একটা ছাড় পাবে। গত বছরের ২৫ মার্চ যাদের বয়স ৩০ বছর হয়েছে, তারা এই ছাড়ের আওতায় আসবে।’
তিনি বলেন, ‘তারা ২১ মাস পর্যন্ত বয়সের ছাড় পাবে। এটা একটা বড় সহযোগিতা। প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিলে আমরা এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করব।’
অনুমোদনের পর সিদ্ধান্তটি সরকারের দপ্তরে পাঠানো হবে জানিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা যেসব বিজ্ঞাপন দেবে সেই বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করবে, যাদের বয়স ২৫ মার্চ ৩০ বছর হয়েছে তারা আবেদন করতে পারবে।’
বর্তমানে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছর, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ক্ষেত্রে ৩২ বছর। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হয়। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদগুলোতে নিয়োগের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের।
করোনা মাহামারির প্রথম দফায় সাধারণ ছুটির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত চাকরি প্রার্থীদের বয়সের ক্ষেত্রে ছাড় দেয় সরকার। তখন গত ২৫ মার্চ যাদের বয়স ৩০ বছর পূর্ণ হয়েছিল তাদের পরবর্তী ৫ মাস, অর্থাৎ আগস্ট পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে আবেদনের সুযোগ দেয়া হয়।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ হঠাৎ করে আবার বেড়ে গেলে এপ্রিল থেকে শুরু হতে ১০ আগস্ট পর্যন্ত চলে বিধিনিষেধ। ফলে এ সময়ের মধ্যে মন্ত্রণালয়, বিভাগ কিংবা সংস্থাগুলো চাকরির জন্য বিজ্ঞপ্তি দিতে পারেনি।
করোনার কারণে অন্য সবকিছুর মতো প্রভাব পড়েছে নিয়োগ পরীক্ষাগুলোতেও। এই সময়ে সরকারি চাকরির তেমন কোনো নতুন সার্কুলার নেই। ফলে চাকরিতে প্রবেশে যাদের বয়স প্রান্তিকসীমায় ঠেকেছে তারা পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।
করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে প্রণোদনা হিসেবে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩২ করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন চাকরি প্রত্যাশীরা। এ দাবিতে রাজধানীতে সমাবেশও হয়েছে।
চাকরি প্রত্যাশীরা বলছেন, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ হওয়ায় করোনার কারণে দেড় লাখ তরুণ-তরুণী (করোনার শুরুর সময়ে যারা ২৮+ বয়সের ছিল) চাকরির পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার সুযোগই পাচ্ছেন না। আর যেসব শিক্ষার্থী ২৬ বছর বয়সে শিক্ষাজীবন শেষ করে সেই করোনা শুরুর সময় থেকে আশায় বসে আছে চাকরির পরীক্ষায় অবতীর্ণ হবেন, তারাও এই দেড় থেকে দুই বছর হারাতে বসেছেন।