বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মেরামতে ব্যস্ত পরিবহন শ্রমিক-মিস্ত্রিরা

  •    
  • ১০ আগস্ট, ২০২১ ২২:৪৪

‘কালকে গাড়ি খুলবে বলে সবাই অনেক ব্যস্ত। গাড়ি লকডাউনের পর থেকে বন্ধ আছিল। তাই ইঞ্জিন জাম হইয়া গেছে। আমরা সকাল থেকেই মেরামতে আছি।’

মঙ্গলবার দিনভর গাড়ি মেরামতে ব্যস্ত সময় পার করেছেন রাজধানী পরিবহনের ইঞ্জিন মিস্ত্রি আব্দুল আজিজ।

লকডাউন শেষে দীর্ঘ ১৮ দিন পর বুধবার চালু হবে গণপরিবহন। তাই ছোট-বড় সব বাসেই রঙ করা এবং মেরামতের ধুম পড়েছে।

মঙ্গলবার দুপুরে সে কাজেই ব্যস্ত ছিলেন আজিজ। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আজকে খুব ব্যস্ত ভাই। কারণ কাইল (বুধবার) থেকে ফের বাস ছাড়ব। হ্যার লাইগ্যা অখন সব কিছু ঠিক কইর‌্যা রাখতাছি।’

তবে আজিজের মন থেকে ভয় যায় না। তার আশংকা, যে কোনো সময় আবার বাস বন্ধ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘কবে আবার গাড়ি বন্ধ হবে এ নিয়ে সব সময় টেনশনে থাকা লাগে।’

আজিজ বলেন, ‘কালকে গাড়ি খুলবে বলে সবাই অনেক ব্যস্ত। গাড়ি লকডাউনের পর থেকে বন্ধ আছিল। তাই ইঞ্জিন জাম হইয়া গেছে। আমরা সকাল থেকেই মেরামতে আছি।’

তিনি জানালেন, এই গাড়ি শুধু ঢাকা সিটির মধ্যে চলাচল করে।

গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনালেও এমন চিত্র দেখা গেল। গাড়ি মেরামত ও পরিষ্কারে ব্যস্ত সবাই।

রাজধানীর এই দুই বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেল, গাড়ির বিভিন্ন পার্টস খুলে মোছার কাজ করছে পরিবহন শ্রমিকরা।

শেষ মুহূর্তের সার্ভিসিং চলছে। ছবি: নিউজবাংলা

পরিষ্কারের কাজ চলছে বাস কাউন্টারগুলোতেও। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণে ধুলা জমে ময়লা হয়ে আছে কাউন্টারগুলো।

মঙ্গলবার দুপুরে গাবতলীতেও চোখে পড়ে একই চিত্র। সেখানে রাজবাড়ীগামী সেলফী পরিবহনের বাস মেরামতের কাজ করছেন শ্রমিকরা।

তারা বলেন, ‘কালকে থেকে গাড়ি চলবে, তাই সার্ভিসিং করাইতাছি। তয় এইবার যে কয়দিন চলে ঠিক নাই।’

আগামী বুধবার থেকে শাটডাউন নামে পরিচিত বিধিনিষেধ তুলে নিয়ে গণপরিবহন চলার অনুমতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু এবার বলা হচ্ছে, যাত্রী থাকবে সব আসনেই, কিন্তু গাড়ি চলবে অর্ধেক। এর আগে লকডাউন ও শাটডাউন সীমিত করার পর গণপরিবহন তার আসনের অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। আর ভাড়া বাড়ান হয়েছিল ৬০ শতাংশ।

এ বিষয়ে গাবতলীতে এক পরিবহনের সহকারী বলেন, ‘অর্ধেক গাড় চলবো আর অর্ধেক বন্ধ থাকবো। তাইলে বন্ধ গাড়ির ড্রাইভার আর স্টাফরা কি মানবো? অর্ধেক তো কেউই মানবো না। কারণ আমরা রাস্তায় গাড়ি বাইর করলে অর্ধেক কইবো ওরা গাড়ি বাইর করলে আমরা কী দোষ করছি।’

চলছে গাড়ি ধোয়ামোছার কাজও। ছবি: নিউজবাংলা

দেশের উত্তরবঙ্গগামী হানিফ পরিবহনের গাবতলী কাউন্টারের ব্যবস্থাপক সানাউল হক সুমন। বুধবার গাড়ি খোলার প্রস্তুতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা গাড়িগুলোর সার্ভিসিং করছি, কাউন্টারগুলো খুলিয়েছি। আমাদের গ্যারেজে গাড়িগুলোর পুরোমাত্রায় সার্ভিসিং চলছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের নিজেদের ব্যবসার স্বার্থে বাসগুলো পরিষ্কার করব। কারণ না হলে তো যাত্রীরা আমাদের ওপর রাগ করবেন।’

তিনি অবশ্য মনে করেন সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা মানতে তাদের কোন সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের সিডিউল কমিয়ে দেব। কারণ আগে আমরা যখন অর্ধেক সিট খালি রেখে যখন গাড়ি চালাতাম তখন ১০ গাড়ি চলত। কিন্তু সব সিটে একই যাত্রী নিয়ে চলাচল করলে তা ৫ গাড়িতেই হবে। তাহলে তো গাড়ি এমনিতেই কমে গেল।’

সরকার কীভাবে এ বিষয়টি নজরদারি করবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকার চাইলেই মনিটরিং করতে পারবে। কারণ আমার তো সার্ভার আছে, সেটা চেক করলেই তারা জানতে পারবে।’

তবে বর্তমান যাত্রী সংখ্যা কম থাকায় অনেক পরিবহনই তাদের অর্ধেক পরিবহন রাস্তায় নামাবে বলে তিনি মনে করেন। বলেন, ‘এখন যাত্রী সংখ্যা কম। আমরা এমনিতেই সিডিউল কমায় রাখব। এটা কাউকে বলা লাগবে না। এটা আমরা আমাদের ব্যবসার স্বার্থে আমরা করব।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকার যে কোনো নির্দেশনা দিলে আমরা তা মানতে প্রস্তুত। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, একটি বাসে সব সিটে যাত্রী নিয়ে বাস চলাচল করলে করোনা কমবে না।’

মহাখালী বাস টার্মিনালে ঢাকা-জামালপুর পরিবহন রাজিব এন্টারপ্রাইজে সহকারী নাজমুল হক বলেন, ‘মাত্র আইজ বাড়ি থিকা আইলাম। গাড়ি পরিষ্কার করতাছি। এর পর কাউন্টার থিক্যা গাড়ির কাগজপত্র নিয়া আগামীকাল গাড়ি খোলার প্রস্তুতি নিব।’

এবার সরকারের নির্দেশনা অনুসারে, ‘আগের ভাড়ায় পুরো সিটে যাত্রী নেয়ার বিষয়টি জেনেছেন কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কিছু শুনি নাই। জানি না। তবে আগামীকাল সকালে কাউন্টার থেকে যেভাবে আমাকে নির্দেশনা দিবে সেভাবেই কাজ করুম।’

তিনি বলেন, ‘সরকার থেকে আমাদের যে নির্দেশনা দিবে আমরা চাই যাব। এখানে আমাদের কোনো বেনিফিট নাই।’

মহাখালী বাস টার্মিনালে ঢাকা-কমলাকান্দাগামী (নেত্রকোণা) ক্রাউন ডিলাক্স পরিবহনের সুপারভাইজার মো. মানিক বলেন, ‘আমরা আজকে সারা দিনই ব্যস্ত। গাড়িগুলা অনেক দিন পড়ে ছিল। তাই সেগুলোর সার্ভিসিং করাইছি। নাইলে গাড়ি রোডে নামানো যাবে না।’

সরকারের নির্দেশনা সম্পর্কে অবগত রয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা অবশ্যই সম্ভব। মালিক পক্ষ যা বলবে আমরা তাই করব। প্রত্যেক সিটে যদি মানুষ বসে তাহলে আগের ভাড়ায় গাড়ি চলবে।’

গত রোববার সরকারের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘সড়কপথে গণপরিবহন চলাচলের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন (সিটি করপোরেশন এলাকায় বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক) নিজ নিজ অধিক্ষেত্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সংশ্লিষ্ট দপ্তর, সংস্থা, মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিদিন মোট পরিবহন সংখ্যার অর্ধেক চালু করতে পারবে।’ তবে যাত্রী ও বাসসংশ্লিষ্ট সবাইকে কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে সরকার।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘গণপরিবহন স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে অবহেলা পরিলক্ষিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব বহন করবে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর