মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামির আপিল শুনানির সময় জানতে পারলেন আসামির বাড়ি নিজের পার্শ্ববর্তী গ্রামে। এই কারণে মামলার শুনানি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন আপিল বিভাগের বিচারক মো. নূরুজ্জামান ননী।
কিশোরগঞ্জের ইটনা থানার ছিলনী গ্রামের বাসিন্দা মকবুল হোসেন ওরফে মকবুল হাসানের আপিল শুনানিকালে এ সিদ্ধান্ত নেন বিচারক।
পরে মো. নূরুজ্জামানকে ছাড়াই প্রধান বিচারপতিসহ চার বিচারকের আপিল বেঞ্চে মামলাটি শুনানি হয়। শুনানি শেষে আগামী ১৭ আগস্ট এ মামলার রায়ের জন্য দিন রাখে আপিল বিভাগ।
এ মামলার আপিল শুনানি শুরু হলে আসামি মকবুলের গ্রামের নাম শুনে বিচারক নূরুজ্জামান বলেন, ‘তার বাড়ি যেহেতু আমার পাশের গ্রামে এ মামলার শুনানিতে আমি থাকতে চাই না।’
পরে প্রধান বিচারপতির অনুমতিক্রমে বিচারক নূরুজ্জামান মামলার শুনানি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন।
মামলায় আসামিরপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান ও উম্মে কুলসুম বেগম রেখা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ।
আইনজীবী ফজলুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মামলাটি আজকে আপিল বিভাগে শুনানির জন্য ছিল। সকালে শুনানি শুরু হলে মামলায় আসামির ঠিকানা দেখে মাননীয় বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান নিজেকে শুনানি থেকে প্রত্যাহার করে নেন। মামলার রায়ের ক্ষেত্রে যাতে কোনো ধরনের প্রভাব না পড়ে কিংবা নিজের অজান্তে কোনো সিমপ্যাথি (সহানুভূতি) চলে না আসে এজন্য তিনি মামলার শুনানি থেকে নিজেকে প্রত্যার করে নিয়েছেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, আইনের কথা হচ্ছে শুধু ন্যায় বিচার করলেই হবে না, ন্যায় বিচারকে দৃশ্যমান করতে হবে। আজকে বিচারপতি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেটি সঠিক সিদ্ধান্ত। তিনি সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতি। আর মামলাটি এখানে বিচারাধীন।
‘এখন ধরেন আদালতের রায়ে যদি আসামির সাজা হয়, তাহলে হয়তো মানুষ মনে করতে পারে বিচারপতি এলাকার। আবার আসামির যদি খালাস হয় সেক্ষেত্রেও একই ভাবনা আসতে পারে। ন্যায় বিচারের স্বার্থেই তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’
মামলা সূত্রে জানা যায়, আসামির নাম মকবুল হোসেন ওরফে মকবুল হাসান। তার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা থানার ছিলনী গ্রামে। কাজের জন্য তিনি ঢাকার সবুজবাগ থানার উত্তর মুগদাপাড়া এলাকায় থাকতেন। ২০০৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর ওলিউল্লাহ নামে একজন খুন হয়। সেই মামলায় আসামি করা মকবুল হোসেনকে।
ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ২০০৬ সালে মকবুল হোসেনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দেয়। এরপর ডেথ রেফারেন্স হিসেবে মামলাটি হাইকোর্টে আসে। আসামিও আপিল করেন। হাইকোর্ট শুনানি নিয়ে ২০১২ সালে তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে। এ রায়ের বিরুদ্ধেও আপিল দায়ের মকবুল হোসেন। ওই আপিলটি শুনানির জন্য মঙ্গলবার আপিল বিভাগের কার্য তালিকার এক নম্বরে ছিল।