পদ্মা সেতুর পিলারের সুরক্ষায় স্রোতের তীব্রতা কমার আগ পর্যন্ত শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুটে যাত্রী ও মালবাহী ফেরি না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এক মাসের কম সময়ের মধ্যে পদ্মা সেতুর পিলারে দুটি রো রো ফেরির ধাক্কার পরিপ্রেক্ষিতে সচিবালয়ে জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয় বলে জানালেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
সেতুর পিলারে ফেরির ধাক্কায় দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু হচ্ছে বাংলাদেশের সম্মান মর্যাদার একটা স্থাপনা। এটার সঙ্গে আমাদের অনুভূতি জড়িয়ে আছে। এই অনুভূতি আমাদের আত্মসম্মানের অনুভূতি। আমরা খুবই বিব্রত। দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে পরপর দুটি দুর্ঘটনা এখানে ঘটে গেল।’
সেতুর পিলারে ফেরির কোনো সংঘর্ষ যাতে না হয় সেজন্য বৈঠকে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নদীর তীব্র স্রোত পুরোপুরিভাবে নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত এ রুটে ভারী যানবাহন নিয়ে ফেরি চলাচল করবে না। হালকা যেসব যানবাহন আছে, জরুরি যেগুলো আছে- অ্যাম্বুলেন্স, প্রাইভেট কার এ ধরনের যানবাহন ফেরিতে পারাপার করা হবে।’
যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী গাড়ি পারাপারে বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানিয়ে নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘পণ্যবাহী এবং যাত্রীবাহীর জন্য আমরা ডেডিকেটেড করেছি পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া। সেখানে ফেরির সংখ্যা বাড়ানো হবে। পণ্যবাহীর জন্য চাঁদপুরের হরিণা এবং শরীয়তপুরের আলুবাজার ঘাটে ফেরির সংখ্যা বাড়ানো হবে। সেই রুটটি পণ্যবাহী যান পারাপারে ব্যবহার করা হবে।’
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘তার মানে আমাদের পদ্মা সেতুর নিচ দিয়ে যে ফেরিগুলো যাবে এগুলো শুধু হালকা যেসব যানবাহন আছে সেগুলো পারাপার করবে। এটা নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত বাকি সব বন্ধ থাকবে।’
দুর্ঘটনার কারণ ব্যাখ্যায় প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুটে স্রোতের প্রচণ্ড তীব্রতার কারণে ওভারলোড ফেরিগুলো চলাচল দুসাধ্য হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে ফেরিগুলোকে কন্ট্রোল করার জন্য পুরোপুরি সক্ষমতা আমাদের ফেরি পরিচালনার সঙ্গে যারা যুক্ত আছেন সেখানে দুর্বলতা আছে।’
ফেরি পরিচালনার দুর্বলতা নিয়ে জানতে চাইলে খালিদ মাহমুদ বলেন, ‘আমি তো বলেছি তীব্র স্রোত। বিদ্যুৎ বিভাগের কিছু পিলার স্থাপন করা হয়েছে নতুনভাবে, পদ্মাসেতু স্থাপন করা হয়েছে, ফলে এ জায়গাটায় স্রোতের চরিত্র পরিবর্তন হয়ে গেছে।…আনপ্রেডিক্টেবল অবস্থা তৈরি হয়ে গেছে।’
মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাট থেকে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে যাওয়ার সময় সোমবার সন্ধ্যায় পদ্মা সেতুর ১০ নম্বর পিলারের সঙ্গে বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর নামের একটি রো রো ফেরির ধাক্কা লাগে।
এতে পিলারটি সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও ফেরিতে ছিদ্র হয়ে পানি ওঠা শুরু হয়। ধাক্কায় ফেরিতে থাকা একটি গমভর্তি ট্রাক পাশের দুইটি প্রাইভেট কারের উপর হেলে পড়ায় এর যাত্রীরা সামান্য আহত হন।
দুর্ঘটনার পর পুলিশ ট্রাক ও প্রাইভেট কার নিজেদের জিম্মায় নেয়।
এর আগে ২৩ জুলাই নির্মাণাধীন সেতুটির ১৭ নম্বর পিলারের সঙ্গে ‘শাহজালাল’ নামের একটি রো রো ফেরির ধাক্কা লাগে। এতে ফেরিটির অন্তত ২০ যাত্রী আহত হন। ঘটনার পরপরই ফেরির ইনচার্জ ইনল্যান্ড মাস্টার অফিসার আব্দুর রহমানকে বরখাস্ত করে বিআইডব্লিউটিসি।
এ ঘটনার দিনই বিআইডব্লিউটিসি তদন্ত কমিটি করে। ২৫ জুলাই কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে সেতুর সুরক্ষায় তিনটি সুপারিশ করা হয়। এর একটিতে পিলারগুলো প্লাস্টিক দিয়ে মোড়ানোর কথাও বলা হয়েছে।
এ ছাড়া বর্তমান যে শিমুলিয়া ফেরিঘাট আছে, সেই ঘাটটি সরিয়ে পুরোনো মাওয়া ঘাটে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয় সুপারিশে। যুক্তি হিসেবে বলা হয়, সে ক্ষেত্রে ফেরিগুলোকে সেতু ক্রস করতে হবে না। পুরোনো মাওয়া ঘাট থেকে ফেরি বাংলাবাজার চলে যাবে।
আর যদি সেটা সম্ভব না হয় সে ক্ষেত্রে বাংলাবাজার ফেরিঘাটকে সরিয়ে মাঝিরঘাটে নিয়ে আসার সুপারিশ করে কমিটি। সে ক্ষেত্রেও ফেরিগুলোকে সেতু ক্রস করতে হবে না। সেতু যেহেতু ক্রস করতে হবে না, তাই আগামীতে দুর্ঘটনা ঘটারও আশঙ্কা থাকবে না।
ওই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পর পদ্মা সেতুর পিলারে রো রো ফেরি ‘শাহজালালের’ ধাক্কার ঘটনায় বিশদ তদন্তে ২৯ জুলাই পৃথক একটি কমিটি করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়।
কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে নৌসচিবের কাছে সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়।