বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চলছে ইঞ্জিন স্টার্ট আর ধোয়ামোছা

  •    
  • ৯ আগস্ট, ২০২১ ২১:৪৯

চালক দেলোয়ার বলেন, ‘কয়েক দিন গাড়ি বসি থাকলে ইঞ্জিনও ঠান্ডা হয়ে বসি যায়। একটু ধাক্কা না দিলে স্টার্ট নেয় না। এখন ঘণ্টাখানেক চালু রাখমু।’

রাজধানীর মহাখালী আন্তজেলা বাস টার্মিনালে সৌখিন পরিবহনের একটি বাসের ইঞ্জিন চালু করার চেষ্টা করছিলেন চালক দেলোয়ার, কিন্তু কিছুতেই সেটি স্টার্ট নিচ্ছিল না। তাই বাসটিকে ধাক্কা দিয়ে একটু সামনে ফাঁকা স্থানে নিয়ে যাচ্ছিলেন হেলপারসহ কয়েকজন। কয়েকবারের চেষ্টায় স্টার্ট নেয় গাড়ি।

চালক দেলোয়ার বলেন, ‘কয়েক দিন গাড়ি বসি থাকলে ইঞ্জিনও ঠান্ডা হয়ে বসি যায়। একটু ধাক্কা না দিলে স্টার্ট নেয় না। এখন ঘণ্টাখানেক চালু রাখমু। কোনো সমস্যা আছে কি না দেখমু। ইঞ্জিনের সাউন্ড শুইনাই বুঝা যাইব ইঞ্জিন কেমন আছে।

‘সমস্যা হইলে একটু ঘষামাজা দেয়া লাগব। বুধবার থেইকা তো রাস্তায় নামমু। এতদিন পর রাস্তায় নাইমা গাড়ি নষ্ট হইলে কী চলব? তাই সব চেক করতাছি। কাইল আবার চেক করমু।’

এক দিন পরই শিথিল হচ্ছে চলমান ১৯ দিনের বিধিনিষেধ। অর্ধেক মাসের বেশি বসে থাকার পর ঘুরবে গণপরিবহনের চাকা।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে বুধবার থেকে চালু হচ্ছে কল-কারখানাসহ সরকারি-বেসরকারি অফিস। সড়কে নামবেন যাত্রীরা।

সারা দেশেই চলবে বাস, ট্রেনসহ সব ধরনের গণপরিবহন। এরই মধ্যে সড়কে নামতে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে পরিবহন কোম্পানিগুলো।

বিধিনিষেধ শিথিলের বিষয়ে রোববার প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ঈদুল আজহার পর থেকে চলা কঠোর বিধিনিষেধ উঠছে বুধবার (১১ আগস্ট)। তবে সড়কপথে অর্ধেক যানবাহন চলবে।

রাজধানীর বিভিন্ন টার্মিনালের চালক ও হেলপাররা জানান, অনেক দিন ধরে গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ থাকায় প্রথমে এগুলো চালু করে দেখা হচ্ছে, ঠিকমতো কাজ করছে কি না। বসে থাকায় গাড়িতে ধুলা-ময়লা জমে যাওয়ায় তা পরিষ্কার করতে হচ্ছে। যন্ত্রপাতি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।

দূরপাল্লার বাসের কাউন্টারগুলো বন্ধ থাকলেও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মঙ্গলবার থেকে এগুলো টিকিট বিক্রির জন্য খুলবে।

বাস টার্মিনালগুলো ঘুরে দেখা যায়, শ্রমিকরা কেউ ব্যস্ত বাস ধোয়ামোছার কাজে, কেউ আবার ব্যস্ত রং করায়। কোনো বাসে চাকা ঠিক আছে কি না, তা দেখা হচ্ছে, কেউ আবার চাকা পরিবর্তনও করছে। আবার কেউ কেউ ব্রেক, গিয়ার কাজ করছে কি না, তা দেখছেন।

পরিবহনকর্মীদের কাজে বাগড়া দিচ্ছে থেমে থেমে আসা বৃষ্টি।

ইঞ্জিনের ছোটখাটো কাজ হলে তা ড্রাইভার ও হেলপাররা ঠিক করতে পারেন। কিন্তু সমস্যা বেশি হলে প্রশিক্ষিত মেকানিকের শরণাপন্ন হতে হয়।

মহাখালী বাস টার্মিনালে বাস ধোয়ামোছায় ব্যস্ত শ্রমিকরা। ছবিটি সোমবার তোলা। ছবি: নিউজবাংলা

মহাখালীতে ঢাকা-জামালপুর রুটের রিজোয়ান পরিবহনের একটি গাড়ির ইঞ্জিনের কাজ করছিলেন মিস্ত্রি বাবলু।

তিনি বলেন, ‘লাইন চালু থাকলে মালিক সহজে বাস বসায়া রাখতে চায় না। তাই অনেক সময় ইঞ্জিনের সমস্যা নিয়াও দিনের পর দিন বাস চলে।

‘আবার অনেক দিন বসায়া রাখলে ইঞ্জিন ড্যামেজ হয়ে সমস্যা হয়। দুই দিন পরেই রাস্তায় নামবে। তাই মালিক ইঞ্জিনের কাজ করাচ্ছে।’

মহাসড়কে পাল্লা দেয়ার কারণে প্রায়ই একটি বাসের অপরটির সঙ্গে লেগে রং উঠে যায় বা নানাভাবে ক্ষতি হয়। এ জন্য অনেক মালিকই গাড়ি রং করে নতুন চেহারা দিচ্ছেন।

ড্রিমল্যান্ডের একটি গাড়িতে রং করছেন রংমিস্ত্রি জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘একটা বাসের পুরো বডি রং দিতে ৭ থেকে ১০ দিন লাগে। রঙের কাজ শুরু অইছে আরও আগে। এখন শেষের দিকে।’

ড্রিমল্যান্ড পরিবহনের গাড়ির চালক হাসিব বলেন, ‘২০ বছর ধইরা গাড়ি চালাই। এমন অবস্থায় আর পড়ি নাই। আয়-রোজগার শেষ। ঈদের পর থেইকা অনেক দিন তো বইসা থাকলাম; বাড়িত আর বালা লাগে না।

‘বাস চালুর খবরে ড্রাইভাররা টার্মিনালে আসা শুরু করছে। গাড়ি চেক করতাছে। এখনও যারা আসে নাই, কাইল তারাও চইলা আসব। লকডাউন বুধবার খুললেও কাইল রাইত থাইকাই গাড়ি রাস্তায় নামব। হের লাইগাই রেডি হইতাছি।’

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী মোট গাড়ির অর্ধেক কীভাবে চলবে, তা বুঝতে পারছেন না হাসিব।

তিনি বলেন, ‘গাড়ি চলব কি চলব না, এ নিয়া মালিকও কিছু বলে নাই। এতদিন গাড়ি বসায়া রাখার পর হেরা কি গাড়ি আর বসায়া রাখব? আবার এতদিন বইসা থাকার পর কোনো ড্রাইভাররে যদি কেউ বলে গাড়ি নামাইছ না, হেয় কি মানব? মানব না।’

একতা পরিবহনের বাসের হেলপার সোহান বলেন, ‘গাড়ি বন্ধ থাকা মানেই আয় বন্ধ; খাইয়া না খাইয়া কাটাইতে হয়। কাম করলে যা পাই তা দিয়াই চাইল-ডাইল কিনি। লকডাউনে খাইলাম কী না খাইলাম কেউ খবরও নেয় নাই।’

এ বিভাগের আরো খবর