স্ত্রীকে হত্যার দায়ে বিচারিক আদালত ফাঁসির আদেশ দেয়ার ১১ বছর পর উচ্চ আদালতে খালাসের আদেশ পেলেন এক ব্যক্তি। সর্বোচ্চ আদালতে প্রমাণ হয়, যাকে খুনের দায়ে এই প্রাণদণ্ডের আদেশ এসেছে, তিনি আসলে খুন হননি, আত্মহত্যা করেছিলেন।
আপিল বিভাগে বাদী এসে বলেছেন, পুলিশ তাকে মামলা দিতে বাধ্য করেছে। আর বিচারিক আদালতে আসামি পুলিশের নির্যাতনের কারণে খুনের কথা স্বীকার করতে বাধ্য হন বলে জানিয়েছেন।
বিনা দোষে এক দশকের বেশি সময় ধরে কনডেম সেলে বন্দি এই ভুক্তভোগীর নাম সাহেব আলী ফকির। তিনি বাগেরহাটের মোল্লাহাট থানার আডুয়াদিঘী গ্রামের বাসিন্দা।
রোববার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনসহ পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
২০১০ সালে ফাঁসির আদেশ হওয়ার পর থেকে সাহেব আলী কনডেম সেলে বন্দি রয়েছেন। তাকে অবিলম্বে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ। আসামিপক্ষে ছিলেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী এস এম আমিনুল ইসলাম।
স্ত্রী শিউলী বেগমকে বিষ প্রয়োগ করে হত্যার অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৮ নভেম্বর সাহেব আলীর বিরুদ্ধে মামলা হয়। আসামি ছিলেন তার তিন ভাইও।
ওই দিনই সাহেব আলীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তদন্ত করে তাকে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন দেয় পুলিশ।
বিচারিক আদালত ২০১০ সালের ১৫ জুন সাহেব আলীকে মৃত্যুদণ্ড এবং অপর তিন আসামিকে খালাস দেয়। এরপর তার মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স পাঠানো হয়।
সাহেব আলীও হাইকোর্টে আপিল করেন। তবে হাইকোর্ট বিভাগে তার আবেদন বিফলে যায়। মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে ২০১৫ সালের ৫ জুলাই রায় দেয় হাইকোর্ট বেঞ্চ।
পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে জেল আপিল করেন সাহেব আলী।
যে কারণে খালাস
মামলার বাদী সাহেবের শ্বশুর আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে বলেছিলেন, পুলিশ তাকে মামলা করতে বাধ্য করেছে।
আর আসামি ১৬৪ ধারায় দেয়া স্বীকরোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন, পুলিশ তাকে নির্যাতন করে জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছে।
এ ছাড়া নিহতের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্যাতনের কোনো চিহ্ন নেই। ভুক্তভোগী আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রতীয়মান হয়। এসব বিবেচনায় নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সাহেব আলীকে খালাস দিয়েছে।