শাটডাউন তুলে দিয়ে গণপরিবহন চালু করে অর্ধেক বাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়ার পেছনে এর আগে ৬০ শতাংশ ভাড়া দিয়েও আসনের অর্ধেক যাত্রী তোলার বিষয়টি নিশ্চিত করতে না পারার কথা বলেছেন একজন প্রতিমন্ত্রী।
এখন যদি সড়কে বাস কমিয়ে দেয়া হয়, তাহলে সেটি যে ভোগান্তি তৈরি করবে, সেটি অবশ্য স্বীকার করেছেন তিনি। বলেছেন, ধীরে ধীরে বাসের সংখ্যা বাড়ানো হবে।
চলমান শাটডাউনের অবসান ঘটিয়ে আগামী বুধবার থেকে খুলে দেয়া হচ্ছে অফিস-আদালত, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, গণপরিবহন।
এই আদেশে গণপরিবহনের বিষয়ে যে কথার উল্লেখ আছে, তাতে উঠেছে বিতর্ক।
এর আগে লকডাউন ও শাটডাউন সীমিত করার পর গণপরিবহন তার আসনের অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। আর ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল ৬০ শতাংশ। কিন্তু এবার বলা হচ্ছে, যাত্রী থাকবে সব আসনেই, কিন্তু গাড়ি চলবে অর্ধেক।
কিন্তু এতে সড়কে গাড়ি কমে যাবে, আর তখন যাত্রী বেশি থাকলে সড়কে তৈরি হবে ভিড়, গাড়িতে গাদাগাদি করে চলতে হতে পারে। একজন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ নিউজবাংলাকে বলেছেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত তাই অগ্রহণযোগ্য।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ এই প্রসঙ্গে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমাদের কিছু জানানো হয়নি। যেটা শুনলাম তাতে এটা অযৌক্তিক মনে হয়েছে। বাস্তবায়ন করা কষ্টকর হবে।’
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন
আবার সরকার যেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচলের কথা বলছে, সেখানে গাড়ির সংখ্যা কমিয়ে ভিড় বাড়িয়ে দিলে সেটা পালন সম্ভব কি না, তা নিয়েও আছে প্রশ্ন। বরং গাড়ির জন্য সড়কে মানুষের ভিড় বাড়লে যাত্রী আসনের চেয়ে বেশি উঠবে, এটা নিশ্চিত। তখন ঝুঁকি বাড়বে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লেনিন চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যে সিদ্ধান্তে মানুষের গাদাগাদি ও ভিড় তৈরি হবে, সে সিদ্ধান্ত অবশ্যই গ্রহণযোগ্য নয়। সেটি ক্ষতিকর। ঢাকা শহরে সব অফিস খুলে দেয়া হলে অফিসমুখী মানুষের চাপ বাড়বে। অর্ধেক বাস চললে স্বাস্থ্যবিধিতে উদাসীনতার সঙ্গে সঙ্গে ভোগান্তিও বাড়াবে।’
এ বিষয়গুলো কি সরকার বিবেচনা করেনি?
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘অর্ধেক আসনের নামে বাসগুলো সব আসনে যাত্রী নেয়, ভাড়া আদায়ের ক্ষেত্রেও ৬০ শতাংশ বেশি রাখে। তাই জনভোগান্তি কমাতে নেয়া হয়েছে এই সিদ্ধান্ত।’
তিনি বলেন, ‘অর্ধেক যাত্রী না করে ফুল যাত্রী করা হয়েছে এ জন্য যে, বারবার অর্ধেক যাত্রী দিলে ওরা ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়া নিচ্ছে, আবার একই সঙ্গে দেখা যাচ্ছে ফুল যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে। লাভ হচ্ছে না এতে। শুভংকরের ফাঁকি। তাই বলা হয়েছে সমসংখ্যক যাত্রী নেয়ার কথা।’
অফিস চালু হলে, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা হলে সড়কে মানুষের চলাচল যখন বাড়বে, তখন অর্ধেক গাড়িতে ভিড় যে আরও বেশি হবে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, তারা মনে করছেন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে প্রয়োজন ছাড়া মানুষ খুব একটা বের হবে না।
তিনি বলেন, ‘অধিক্ষেত্রের মধ্যে প্রয়োজন অনুযায়ী (গাড়ি চলবে), এমনিতেই মানুষ কম বের হবে। আস্তে আস্তে হয়ে যাবে। প্রথমে শুরুটা করুক। আমরা তো ধীরে ধীরে বাড়াব, বাড়ানো হবে।’
অর্ধেক গাড়ি চলাচলের সিদ্ধান্ত নিয়ে আরও জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আর বলা হয়েছে, যেখানে ৪০টা গাড়ি ছাড়তেন, সেখানে ২০টা গাড়ি ছাড়বেন। প্রথম পর্যায়ে ২০টার বেশি লাগবে না। কারণ, এখনও মানুষের মধ্যে ভয়-আতঙ্ক আছে আক্রান্ত হতে পারেন। আস্তে আস্তে পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী সেটা আমরা বাড়াব।’