দীর্ঘ চার মাসের বিধিনিষেধ শেষে বুধবার থেকে যানবাহন, দোকানপাট, অফিস-আদালতসহ সবকিছু খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হলেও বন্ধই থাকছে দেশের পর্যটনকেন্দ্রগুলো। সেই সঙ্গে জনসমাবেশ থেকেও ওঠানো হচ্ছে না নিষেধাজ্ঞা।
দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় শর্ত সাপেক্ষে আগামী বুধবার থেকে অফিস-আদালত, যানবাহন, শপিংমল, দোকানপাট খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত জানায় সরকার।
এ বিষয়ে রোববার বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়েছে।
এতে অফিস-আদালত, দোকানপাট খুলে দেয়ার কথা বলা হলেও উল্লেখ নেই পর্যটনকেন্দ্র, বিনোদন কেন্দ্র, জনসমাগম, সামাজিক অনুষ্ঠানের মতো বিষয়গুলোর।
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ না করার অর্থ এগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকছে বলে নিউজবাংলাকে জানালেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, ‘প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ নেই মানেই আগের শর্ত বহাল থাকছে। অর্থাৎ কঠোর বিধিনিষেধ চলার সময় যা ছিল, তা-ই থাকবে।’
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের কথাতেও পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ থাকার ইঙ্গিত মিলেছিল। সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ে রোববার দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পর্যটনকেন্দ্র খোলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, মনে হয় না।’
কবে খোলা হতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘পর্যটনকেন্দ্রগুলো মনে হয় এ মুহুর্তে না, ওই যে ধাপে ধাপে... এটা আরও পরে।’
করোনাভাইরাসের তীব্র সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে এপ্রিলের শুরু থেকে একে একে বন্ধ হতে থাকে দেশের পর্যটনকেন্দ্রগুলো। কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, সিলেট, কুয়াকাটাসহ সব পর্যটনকেন্দ্র বন্ধের ঘোষণা আসতে থাকে। শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনেও আলাদা করে দেশের সব পর্যটনকেন্দ্র বন্ধের ঘোষণা আসে।
করোনার মধ্যে পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ থাকায় দেশি ট্যুর অপারেটররা ৭ হাজার কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে দাবি করেছে ট্যুর অপারেটরদের শীর্ষ সংগঠন টোয়াব। ২৫ মে টোয়াবের এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় এ তথ্য জানায় সংগঠনটি।
২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে সারা দেশে বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। এ সময় জনসমাগম এড়াতে পর্যটনকেন্দ্রগুলোও বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
তবে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলে গত বছরের জুনের পর পর্যায়ক্রমে তুলে নেয়া হয় বিধিনিষেধ। কিন্তু এরপরেও করোনা-আতঙ্কে বেশির ভাগ পর্যটনকেন্দ্রই ছিল পর্যটকশূন্য। অবশ্য অক্টোবর-নভেম্বরের দিকে পর্যটনকেন্দ্রগুলো পর্যটকে ভরে ওঠে।
এর মধ্যে করোনা সংক্রমণ আবার বাড়তে থাকে। চলতি বছরের মার্চে করোনার দ্বিতীয় পর্যায়ের সংক্রমণ শুরু হলে এপ্রিল থেকে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে রয়েছে পর্যটন খাত।
টোয়াব বলছে, গত বছরের করোনার কারণে পর্যটন খাতের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু টোয়াব সদস্যদের ক্ষতির পরিমাণই ৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।