ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত অভিনেত্রী পরীমনির সঙ্গে সম্পর্কের বিষয় সামনে আসার পর দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) গোলাম সাকলায়েনকে।
শনিবার ডিবি থেকে সরিয়ে সাকলায়েনকে মিরপুরের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে (পিওএম) সংযুক্ত করা হয়েছে।
এ ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য করা হয়েছে তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটি সত্যতা প্রমাণ করতে পারলে তার সর্বোচ্চ সাজা চাকরিচ্যুতি হতে পারে বলে জানিয়েছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ।
বুধবার বনানীর বাসা থেকে পরীমনিকে আটক করেছে র্যাব। পরে তার নামে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা হয়েছে। র্যাব বলছে, পরীমনির বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার পরীমনিকে হেফাজতে রেখে চার দিন জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পেয়েছে পুলিশ।
গোলাম সাকলায়েনের বিরুদ্ধে পরীমনির সঙ্গে সম্পর্কের অভিযোগ প্রমাণিত হলে পুলিশের আইনে কী সাজা হতে পারে, জানতে চাইলে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তার (গোলাম সাকলায়েন) বিরুদ্ধে সত্যতা প্রমাণ হলে সর্বোচ্চ সাজা চাকরি চলে যেতে পারে। চাকরি থেকে তাকে বের করে দিতে পারে।’
একই বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা একটা বড় মিস কন্ডাক্ট। এতে রীতিমতো ওনার চাকরি চলে যেতে পারে। এ ছাড়া দুই-তিন বছর তার ইনক্রিমেন্ট বন্ধ হতে পারে। এ ছাড়া প্রোমোশন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
‘পুলিশের চাকরি এমন একটা চাকরি, যে চাকরিতে অনেক অঙ্গীকার থাকে। যদি তদন্তে প্রমাণিত হয়, তবে এই অঙ্গীকার খর্ব করেছেন আপনি। আপনি অঙ্গীকারের বাইরে যাচ্ছেন। এ বিষয়ের একটা সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত।’
মামলা চলার সময় বাদী বা বিবাদীকে বাসায় আনা যাবে কি না, জানতে চাইলে ফাওজিয়া করিম ফিরোজ বলেন, ‘না, বাসায় আনা যাবে না। এটা বিরাট একটা অফেন্স। আপনি একজন অফিসারকে দায়িত্ব দিলেন। তিনি দায়িত্বে অবহেলা করে যদি টাকাপয়সা, ফিজিক্যাল বা ভালোবাসার কাছে বিক্রি হয়ে যান, এটা তো ঠিক না।’
গোলাম সাকলায়েনের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে শনিবার দুপুরে ডিবি-প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তার (সাকলায়েন) অনেক কাহিনি দেখেছি তো আমরা, যে কারণে বলেছি একটু সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে এ ঘটনায় কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
পরীমনিকে মাদক মামলায় চার দিনের রিমান্ডের শুরুর দিনই গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে ডিবি কর্মকর্তা গোলাম সাকলায়েন শিথিলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠার তথ্য দেন পরীমনি।
আলোচিত এই অভিনেত্রী জানান, বোট ক্লাবসংক্রান্ত মামলার তদন্ত করতে গিয়ে পরীমনির সঙ্গে পরিচয় হয় সাকলায়েনের। এরপর গড়ে ওঠে ‘প্রেমের সম্পর্ক’। সাকলায়েন বিবাহিত হলেও পরিচয় দিয়েছিলেন অবিবাহিত হিসেবে।
জিজ্ঞাসাবাদে পরীমনি জানান, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার সাকলায়েনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠার পর তারা একে অপরের বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করতেন। এ তথ্যের সূত্র ধরেই সাকলায়েনের সরকারি বাসভবন রাজারবাগের মধুমতির ফ্ল্যাটের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে গোয়েন্দা বিভাগ।
সবশেষ ১ আগস্ট সাকলায়েনের সরকারি বাসভবন রাজারবাগের মধুমতির ফ্ল্যাটে যান পরীমনি। সেদিনের সিসিটিভি ফুটেজে স্পষ্ট হয়েছে সাকলায়েনের বাসায় ১৮ ঘণ্টা সময় কাটান এই অভিনেত্রী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাকলায়েন শনিবার নিউজবাংলার কাছে দাবি করেন, পরীমনির সঙ্গে তার কোনো প্রেমের সম্পর্ক নেই, কাজের সুবাদে পরিচয় ও কথা হয়েছে। এর বাইরে যা কিছু সংবাদমাধ্যমে এসেছে, তার সবই মিথ্যা। সিসিটিভি ফুটেজের কথা বলা হলে কোনো মন্তব্য না করে ফোন কেটে দেন সাকলায়েন।