নারীর অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সব নারীর জন্য বঙ্গমাতা পদক উৎসর্গ করতে চান এই সম্মাননা বিজয়ীরা।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারী অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রাখা পাঁচ বিশিষ্ট নারী পাচ্ছেন এবারের ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক’। তাদের মধ্যে দুজন মরণোত্তর।
বাকি তিনজনের মধ্যে দুজন নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, নারীকল্যাণে এ পুরস্কার উৎসর্গ করতে চান তারা।
এবার ‘স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ’ ক্যাটাগরিতে পদক পাচ্ছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মমতাজ বেগম (মরণোত্তর), ‘শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়ায়’ টাঙ্গাইলের জয়া পতি (মরণোত্তর), ‘কৃষি ও পল্লি উন্নয়নে’ পাবনার কৃষি উদ্যোক্তা নুরুন্নাহার বেগম, ‘রাজনীতিতে’ কুমিল্লার বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ জোবেদা খাতুন পারুল এবং ‘গবেষণায়’ নেত্রকোণার লেখক ও গবেষক নাদিরা জাহান (সুরমা জাহিদ)।
এদের মধ্যে দুইজন—নরুন্নাহার বেগম ও অধ্যক্ষ জোবেদা খাতুন পারুল জানিয়েছেন নারীকল্যাণে তাদের এ পদক উৎসর্গ করার ইচ্ছার কথা।
পদকপ্রাপ্তদের প্রত্যেককে দেয়া হবে ১৮ ক্যারেট মানের ৪০ গ্রাম স্বর্ণ দিয়ে নির্মিত পদক, পদকের রেপ্লিকা, চার লাখ টাকার চেক ও সম্মাননাপত্র।
কৃষি ও পল্লি উন্নয়ন ক্যাটাগরিতে পদক পাচ্ছেন পাবনার কৃষি উদ্যোক্তা নুরুন্নাহার বেগম।
নিউজবাংলাকে তিনি জানান পদক নিয়ে তার অনুভূতির কথা।
নুরুন্নাহার বলেন, ‘আমি আসলে অনেক ধন্য; এই পদক আমাকে দেয়া হচ্ছে। আমি দুইবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় পুরস্কার পেয়েছি; গোল্ড মেডেল। আমি অনেক খুশি। আমি একজন লেখাপড়া না জানা মানুষ। তাও আমাকে এই পদক দেয়া হচ্ছে, তবে আমি অনেক পরিশ্রম করেছি।
‘কৃষিকাজ করতে গিয়ে আমাকে অনেক কষ্ট পেতে হয়েছে। এই কাজের জন্য আমাকে অনেক বকা, মাইর, গাইল অনেক কিছু খাইতে হইছে, সহ্য করতে হইছে। তাও আমি তখন এই কাজ ছাড়ি নাই। আর এখন আমি কৃষি খামারের মালিক।’
তিনি বলেন, ‘আমি লেখাপড়া করতে পারি নাই, সুযোগও ছিল না। কিন্তু আমি আমার ছেলেমেয়েদের এখন লেখাপড়া শিখাইছি। তারা বড় হয়ে আরও অনেক কিছু করবে, তবে আমি খুবই খুশি, আল্লাহ আমাক ভালোবাসেন খুব।
‘আমার কষ্টের দাম দিছেন। আমি এখন মানুষের সেবা করতে পারি। এলাকায় অনেক গরিব মানুষ আছে। তাদের সাহায্য করতে পারি।’
নুরুন্নাহার বলেন, ‘এটা আমার কাছে একটা স্বপ্নের মতো। এলাকায় এখন মানুষজন বলে নুরুন্নাহার কখন আসেব। নুরুন্নাহার সমাধান করবে। এটা অনেক বড় পাওয়া আমার কাছে।’
কৃষিতে নারীদের ভূমিকাকে তুলে ধরতে তিনি বলেন, ‘কৃষিকাজে নারীরা পিছিয়ে আছে বলা ভুল। তবে মূল্যায়ন নাই। আমি দেশের সব নারীদের উদ্দেশ্যে আমার এই পদক উৎসর্গ করতে চাই।
‘আমি চাই, নারী সম্মুখসারিতে থাকুক। নিজেদের আগে চিনুক, নিজেদের ক্ষমতা সম্পর্কে জানুক।’
বঙ্গমাতার অবদানকে স্মরণীয় করার লক্ষ্যে ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত সর্বোচ্চ জাতীয় পদক হিসেবে এটি প্রবর্তন করেছে সরকার।
ঢাকায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমির সম্মেলনকক্ষে শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ পদক ঘোষণা করেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘রোববার বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিবের ৯১তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন হবে। এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিজয়ীদের হাতে তুলে দেয়া হবে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিব পদক।’
এ দিন গণভবন থেকে প্রধান অতিথি হিসেবে অনলাইনে যুক্ত হয়ে বিজয়ীদের মাঝে পদক বিতরণ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এই পাঁচজনের মধ্যে রাজনীতি ক্যাটাগরিতে পদক পাচ্ছেন কুমিল্লার বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ জোবেদা খাতুন পারুল।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি পদক পাচ্ছি—এটাতে আমি যতটা না খুশি তার থেকে বেশি খুশি এই যে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিবের নামে আমরা একটা পদক পেতে যাচ্ছি। বঙ্গমাতার নামটা জাতীয় পর্যায়ে পরিচিত পেয়েছে। এই রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি বঙ্গমাতার জন্য প্রয়োজন ছিল।’
ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় জন্ম গ্রহণ করলেও পারুলের স্থায়ী নিবাস কুমিল্লাতে। তিনি কুমিল্লা জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।
রাজনীতিতে নারীদের ভূমিকা নিয়ে জোবেদা খাতুন বলেন, ‘নারীরা নিজেদের অধিকার নিয়ে সচেতন না। সেই অধিকার আদায় করার পদ্ধতিটা, ভাষাটা অনেকের মধ্যেই নাই। সেই জায়গাটায় আমি কাজ করতে চাই।
‘রাজনৈতিক অঙ্গনে হোক, সামাজিক অঙ্গনেই হোক কিংবা পরিবারে—সবখানেই এটা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। তাই তাদেরকে সম্মুখসারিতে নিয়ে এসে নিজের অধিকার আদায়ে লড়াই করতে আমার এই পদক সব নারীর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করতে চাই।’