করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধ ও বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাটে শত শত যাত্রী ও ব্যক্তিগত গাড়ির সারি দেখা গেছে।
ঘাট এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে জরুরি সেবার যানবাহন পারাপারের জন্য চলা সীমিতসংখ্যক ফেরিতে নদী পার হচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরাও। তাদের গাদাগাদিতে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি উধাও ফেরিগুলোতে।
বাংলাবাজার ও শিমুলিয়া নৌপথে চলাচল করা ফেরিগুলোতে শনিবার সকাল থেকেই দেখা যায় এমন চিত্র।
সড়কে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা আঞ্চলিক সড়ক দিয়ে বিভিন্ন যানবাহনে (ব্যক্তিগত গাড়ি, অটোরিকশা, থ্রি হুইলার, মোটরসাইকেল) অতিরিক্ত ভাড়ায় ভেঙে ভেঙে বাংলাবাজার ঘাটে আসছেন।
ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে ঢাকাগামী যাত্রী রনি বলেন, ‘ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় মেসে থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। অনেক দিন বাড়ি ছিলাম।
‘বাড়িতে তেমন পড়াশোনা হয় না। তাই অধিক ভাড়া দিয়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও খারাপ আবহাওয়ার মধ্যেও ঘাটে এসেছি।’
বরিশালের প্রাণিসম্পদ অফিসে কর্মরত শাহ পরান ফেরির যাত্রী মতিউর রহমান বলেন, ‘জরুরি প্রয়োজনে অফিসের কাজে ঢাকা যাচ্ছি। আগে ১৮০ টাকা দিয়ে বাংলাবাজার ঘাটে আসতাম। আর এখন ভেঙে ভেঙে এই পর্যন্ত আসতেই ৪৬০ টাকা খরচ হয়েছে। বাকি পথ তো আছেই।’
তবে যাত্রীদের চাপে জরুরি পণ্যবাহী ট্রাক ও অ্যাম্বুলেন্স পারাপারে হিমশিম খাচ্ছে ঘাট কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বর্তমানে পণ্যবাহী চার শতাধিক ট্রাক পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে।
বিআইডব্লিউটিসির ব্যবস্থাপক মো. সালাউদ্দিন বলেন, ‘সকাল থেকে সীমিত আকারে ১০টি ফেরি দিয়ে এই রুটে জরুরি সেবার যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। সেই সুযোগে যাত্রী, ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেল উঠছে।
‘তবে যাত্রীদের চাপ রয়েছে। ফেরিতে যাত্রী নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেখছে।'
বিধিনিষেধের ১৬তম দিনে যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটেও। শুধু জরুরি ও বিধিনিষেধের আওতার বাইরে থাকা যানবাহন পারাপারের নির্দেশনা থাকলেও তা উপেক্ষা করে শনিবার সকাল থেকেই এই নৌপথে বেড়েছে ব্যক্তিগত গাড়ি ও দক্ষিণবঙ্গগামী যাত্রীর সংখ্যা।
যাত্রীরা জানান, ৫ আগস্ট বিধিনিষেধ শেষ হলে রাজধানীতে কর্মস্থলে ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অনেকে। তবে বিধিনিষেধের সময়সীমা বাড়লেও পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে তারা ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন। অনেকে আবার চিকিৎসা, টিকাদানসহ নানা প্রয়োজনে ঢাকায় আসছেন।
গণপরিবহন বন্ধ থাকায় শিমুলিয়া ঘাট থেকে পিকআপ ভ্যানে করে গন্তব্যে যাচ্ছেন যাত্রীরা। ছবি: নিউজবাংলা
গণপরিবহন বন্ধ থাকায় শিমুলিয়া ঘাটে এসে বিপাকে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। পিকআপ ভ্যান, কাভার্ড ভ্যান, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, সিএনজি, মোটরসাইকেলসহ ছোট যানবাহনে করে ভেঙে ভেঙে আসছেন ঢাকায়। এতে ভোগান্তির পাশাপাশি গুনতে হচ্ছে দুই থেকে তিন গুণ বেশি ভাড়া।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসি শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক মো. ফয়সাল জানান, নৌপথে বর্তমানে রো রো, মিডিয়াম ও ছোট মিলিয়ে ১০টি ফেরি সচল রয়েছে। সকাল থেকে বাংলাবাজার ঘাট থেকে ঢাকামুখী যাত্রীরা আসছেন। আবার দক্ষিণবঙ্গগামী কিছু যাত্রীও পারাপার করছেন। তা ছাড়া ঘাট এলাকায় পারাপারের অপেক্ষায় আছে অর্ধশতাধিক ব্যক্তিগত গাড়ি।
বিআইডব্লিউটিসির ব্যবস্থাপক (মেরিন) আহমেদ আলী জানান, রো রোসহ মাঝারি সাইজের ১০টি ফেরি চলাচল করলেও ৬টি টানা ফেরি বন্ধ রয়েছে।