ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট সৈয়দ ইব্রাহিম রাইসির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। এ সময় তিনি নতুন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে মিলিত হন। শিগগিরই বাংলাদেশ সফরে আসার বিষয়ে রাইসি তার ইচ্ছার কথা জানান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বৈঠকে শাহরিয়ার আলম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লেখা একটি চিঠি নতুন প্রেসিডেন্ট রাইসিকে হস্তান্তর করেন। চিঠিতে নির্বাচনে জয় ও শপথের পর নতুন সরকারের দায়িত্ব নেয়ায় রাইসিকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে আগামীতে ইরানের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা বিষয়ে সম্পর্ক জোরদারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা।
ইরানের কোন রাষ্ট্রপতির শপথ অনুষ্ঠানে এই প্রথম কোন প্রতিনিধি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তারা নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শপথ অনুষ্ঠানের পরে প্রেসিডেন্ট রাইসির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন প্রতিমন্ত্রী। বৈঠকটি ২০ মিনিট স্থায়ী হয়েছিল।
বৈঠকে ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট ২০ বছর আগে বাংলাদেশ সফরের কথা স্মরণ করেন। তিনি বিশেষ করে তার যশোর সফরের কথা উল্লেখ করেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ায় অভিনন্দন জানানোর জন্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন রাইসি।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের শক্তিশালী অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসা করেন রাইসি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইরানকে সমর্থন করার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান তিনি। এ সময় তিনি উল্লেখ করেন, ফিলিস্তিন ইস্যু মুসলিম উম্মাহর প্রথম এবং প্রধান সমস্যা।
দশ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেন ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট। তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের নিজভূমি থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা হয়েছিলো।
শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে বৈঠকে রাইসি দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ সফরের ইচ্ছা প্রকাশ করেন এবং দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চান।
এরপর ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরিফের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন শাহরিয়ার আলম। এসময় দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও জোরদার করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন তারা।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জেরিফের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। ছবি: নিউজবাংলা
প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগে সংযোগ এবং বেসরকারি খাতের সহযোগিতা বাড়ানোর ওপরও জোর দেন।
৩ আগস্ট রাতে শাহরিয়ার আলম তেহরানের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন।
এদিকে, নিকট অতীতে এটাই বাংলাদেশের কোন মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর ইরান সফর। কয়েক বছর আগে তখনকার পর্যটন ও বিমান মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে দেশটি সফর করেছিলেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, মধ্যপ্রাচ্যের ভ্রাতৃপ্রতিম অন্য রাষ্ট্রগুলোর মতো ইরানের সঙ্গেও স্বাভাবিক সম্পর্ক চায় বাংলাদেশ। আর এ জন্যই দেশটির নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রাইসির শপথ অনুষ্ঠানে প্রথমবারের মতো তেহরানে প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে ঢাকা।
বৃহস্পতিবার তেহরানের পার্লামেন্টে বর্ণাঢ্য এক আয়োজনে শপথ নেন প্রেসিডেন্ট রাইসি। এতে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানসহ পঞ্চাশের বেশি দেশের গুরুত্বপূর্ণ অতিথিরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সশরীরে অংশ নিচ্ছেন।
মঙ্গলবার সর্বোচ্চ নেতার কাছ থেকে দায়িত্ব পেলেও রেওয়াজ অনুযায়ী পার্লামেন্টে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ নেন প্রেসিডেন্ট।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টায় সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রাইসি শপথ বাক্য পাঠ করেন। শপথের কারণে আগামী সপ্তাহে ইরানের জাতীয় সংসদের অধিবেশন স্থগিত থাকছে।
গত ১৮ জুন ইরানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়। এতে সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রাইসি ৬২ ভাগ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তিনি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির স্থলাভিষিক্ত হবেন এবং ইরানের অষ্টম প্রেসিডেন্ট হিসেবে আগামী চার বছরের জন্য দায়িত্ব পালন করবেন।