চিত্র নায়িকা পরীমনির বিরুদ্ধে রাজধানীর বনানী থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা হয়েছে। পরীমনিসহ তিনজনকে এই মামলায় আসামি করেছে র্যাব।
অপর দুই আসামির মধ্যে আশরাফুল ইসলাম দিপু নামের একজনকে পরীমনির সঙ্গেই তার বাসা থেকে আটক করা হয়। পলাতক আসামির নাম কবির।
দিপু ও কবিরের সহায়তায় পরীমনি তার বাসায় আধুনিক পন্থায় মাদকদ্রব্য, বিদেশি মদসহ অন্য মাদক ও মাদক সেবনের উপকরণ কিনে মজুদ করেছেন। যা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে অপরাধ।
বৃহস্পতিবার রাতে বনানী থানায় র্যাব-১ সিপিও (সিম্যান) মজিবর রহমান মামলাটি করেন। এর আগে বুধবার বিকেলে বনানীতে পরীমনির বাসায় অভিযান চালায় র্যাবের গোয়েন্দা শাখা। অভিযানে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ, আইস, এলএসডির মত ভয়ঙ্কর মাদক জব্দ করা হয়।
১ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া অভিযানের ধারাবাহিকতায় বুধবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত বনানী এলাকার দুটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালায় র্যাব। প্রথম অভিযানটি হয় পরীমনির ফ্ল্যাটে। দ্বিতীয়টি রাজ মাল্টিমিডিয়ার স্বত্বাধিকারী নজরুল ইসলাম রাজের ফ্ল্যাটে।
পরীমনির ফ্ল্যাট থেকে মাদকদ্রব্যসহ পরীমনি ও তার সহযোগী আশরাফুল ইসলাম দিপুকে আটক করে র্যাব।
পরীমনির বাসায় অভিযান শেষ করেই বনানীর ৭ নম্বর সড়কের একটি ফ্ল্যাটে অভিযান শুরু হয়। রাজের এই অফিস থেকে ইয়াবা, বিদেশি মদ, বিকৃত যৌনাচারের সরঞ্জাম ও পর্নোগ্রাফি কনটেন্ট জব্দ করা হয়। রাজের ফ্ল্যাট থেকে রাজ ও তার সহযোগী সবুজ আলীকে আটক করে র্যাব।
দুই অভিযান শেষে আটক চার জনকে র্যাব সদর দপ্তরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় র্যাব সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে দুই অভিযানের বিষয়ে বলেন সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। অভিযানে কী কী জব্দ হয়েছে তা বিস্তারিত জানায় র্যাব।
পরীমনির বাসা থেকে জব্দ করা হয়েছে আট বোতল প্লাটিনাম লেভেল, তিনটি ব্ল্যাক লেভেল, দুইটি চিভাস রিগাল, দুইটি ফক্স গ্রোভ, একটি ব্লু লেভেল, দুইটি গ্ল্যানলিভেট, এক বোতল গ্ল্যানফিডিচ।
আরও জব্দ হয়েছে চার গ্রাম আইস ও একটি স্লট এলএসডি। এ ছাড়া জব্দ তালিকায় একটি বং পাইপের কথাও বলা হয়েছে।
চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিচালক রাজের অফিস থেকেও বিপুল পরিমাণে মদ জব্দ করার কথা জানিয়েছে র্যাব। তারা জানায়, রাজের বাসায় মিলেছে সাত বোতল গ্ল্যানলিভেট, দুইটি গ্ল্যানফিডিচ, চারটি ফক্স গ্রোভ, একটি প্লাটিনাম লেভেল।
এর বাইরে সিসায় ব্যবহৃত চারকোলের একটি প্যাকেট, দুই সেট সিসার সরঞ্জাম, দুই ধরনের সীমা তামাক, সিসা সেবনের জন্য ব্যবহৃত অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলের একটি রোল, ৯৭০ পিস ইয়াবা।
এ ছাড়া যৌনাচারে ব্যবহৃত ১৪টি বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম, একটি সাউন্ড বক্স ও দুইটি মোবাইল ফোন সেট এবং একটি মেমোরি কার্ড জব্দ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলন শেষে পরীমনি, রাজসহ চার আসামিকে আলামতসহ বনানী থানায় হস্তান্তর করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে দুইটি মাদক ও একটি পর্ণোগ্রাফি আইনে মামলা করে র্যাব-১।
পরীমনির বিরুদ্ধে করা মামলায় বলা হয়, গোপন তথ্যে ভিত্তিতে অভিযান পরিচালিত হয়েছে। পরীমনি ও তার সঙ্গে আটক দিপু বনানীতে পরীমনির বাসায় অবস্থান করছে। মাদকদ্রব্য জব্দ ও আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযানটি পরিচালিত হয়।
অভিযানে উদ্ধার মাদকদ্রব্যের বিষয়ে পরীমনি কোনো বৈধ কাগজ ও সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি বলে এজাহারে দাবি করা হয়।
এতে আরও বলা হয়, পরীমনি তার সহযোগীদের সাহায্যে বিভিন্ন ব্রান্ডের বিদেশি মদসহ জব্দ হওয়া মাদকদ্রব্য কিনে তার বাসায় রাখতেন।
পরীমনি রাজের কাছ থেকে প্রায়ই বিদেশি মদ সংগ্রহ করতেন, এমন তথ্য পেয়ে রাজের অফিসে পরবর্তী অভিযানটি পরিচালিত হয় বলে এজাহারে বলা হয়েছে।
বনানী থানা পুলিশ মাদক মামলায় পরীমনি ও তার সহযোগী দিপুর সাত দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত চারদিন করে রিমান্ড দেন।