ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা, মরিয়ম আক্তার মৌ, পরীমনির মতো আরও এক ডজনের বেশি মডেল ও অভিনেত্রীর তালিকা প্রস্তুত করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এদের বিরুদ্ধে ব্ল্যাকমেইলিং ও মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। তালিকায় থাকা এসব মডেল-অভিনেত্রীদের নজরদারিতে রেখেছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তাদেরকেও গ্রেপ্তার করা হবে।
নিউজবাংলাকে এসব তথ্য জানিয়েছেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও র্যাবের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
এদিকে রিমান্ডে থাকা পিয়াসা ও মৌয়ের কাছ থেকে অভিযোগ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
ডিবি বলছে, কীভাবে এই কথিত মডেলরা ধনাঢ্যদের টার্গেট করতেন এবং পরে তাদের নিজেদের বাসায় বা অন্য জায়গায় পার্টির নামে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের উদ্দেশ্যে ভিডিও ও ছবি ধারণ করতেন, এসব বিষয় তদন্ত সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছেন পিয়াসা ও মৌ।
সংস্থাটির একাধিক কর্মকর্তা জানান, ব্ল্যাকমেইল করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ওই কথিত মডেলরা।
লাখ টাকা ভাড়ার ফ্ল্যাট, কোটি টাকা মূল্যের গাড়ি, বিলাসি জীবন সবই ব্ল্যাকমেইলিং এবং অবৈধ উপায়ে উপার্জিত টাকায়। বড় ব্যবসায়ী, ধনাঢ্য পরিবারের সন্তানদের টার্গেট করে ব্ল্যাকমেইল করত ওই কথিত মডেলরা।
রোববার রাতে মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের একটি বাসা থেকে কথিত মডেল মৌকে আটক করে পুলিশডিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘পিয়াসা ও মৌয়ের মোবাইলে বেশ কিছু ভিডিও পাওয়া গেছে। এগুলো তারা গোপনে ধারণ করেছিলেন। তাদের মোবাইল থেকে এবং জিজ্ঞাসাবাদে এ ধরনের কাজে জড়িত আরও কিছু মডেলের নাম পাওয়া গেছে। সেগুলো যাচাই বাছাই চলছে।
বুধবার দুপুরে পিয়াসার দুই সহযোগী শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান ও মাসুদুল ইসলাম ওরফে জিসানকে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে রর্যাব।
র্যাব বলছে, রাজধানীর অভিজাত এলাকায় বিভিন্ন পার্টির আয়োজন করতেন মিশু। পরীমনিসহ বিভিন্ন মডেলদের এসব পার্টিতে হাজির করতেন তিনি।
র্যাব জানায়, তারা একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। এই চক্রের সদস্য প্রায় ১০ থেকে ১২ জন। তারা রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকা বিশেষ করে গুলশান, বারিধারা, বনানীসহ বিভিন্ন এলাকায় পার্টি বা ডিজে পার্টির নামে মাদক সেবনসহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ব্যবস্থা করে থাকে। এসব পার্টিতে তারা অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পেয়ে থাকে। অংশগ্রহণকারীরা সাধারণত উচ্চবিত্ত পরিবারের সদস্য।
বুধবার ঢাকাই চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী পরীমনিকে আটক করেছে র্যাবসংস্থাটি বলছে, প্রতি পার্টিতে ১৫-২০ জন অংশগ্রহণ করত। এছাড়া বিদেশেও প্লেজার ট্রিপের আয়োজন করা হত। একইভাবে উচ্চবিত্ত প্রবাসীদের জন্যেও দুবাই, ইউরোপ ও আমেরিকায় এ ধরনের পার্টি আয়োজন করতেন অভিযুক্তরা। ক্লায়েন্টদের একান্ত মুহূর্তের ছবি ধারণ করে অপব্যবহার করা হত বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন তারা।
র্যাব বলছে, পার্টি আয়োজনের ক্ষেত্রে ক্লায়েন্টের চাহিদা ও পছন্দের গুরুত্ব দিয়ে পার্টি আয়োজন করা হত। গ্রেপ্তাররা তাদের এই অবৈধ অর্থ নামেবেনামে বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছে।
এদিকে পিয়াসা ও মৌকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের মাদক ব্যবসা সম্পর্কে তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে ডিবি পুলিশ।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) হারুন অর রশীদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পিয়াসা মৌদের মতো মডেলের সংখ্যা অনেক। যারা দীর্ঘদিন ধরে ব্ল্যাকমেইলিং ও মাদক ব্যবসা করে আসছিল। আমরা আরও কিছু মডেলের নাম পেয়েছি। তাদের বিষয়েও তথ্য নেয়া হচ্ছে।’