বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রশিক্ষণ দিন: হাইকোর্ট

  •    
  • ৫ আগস্ট, ২০২১ ১৫:০৮

বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, ‘মোবাইল কোর্টটা হচ্ছে অনলি স্পট। যেখানে ঘটনা ঘটবে সেখানেই করতে হবে। এটা চেম্বারেও বসে করার সুযোগ নাই। থানায় বসে করারও সুযোগ নাই।’

ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম হবে শুধু ঘটনাস্থলকেন্দ্রীক। যেখানে ঘটনা ঘটবে সেখানেই শুধু আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে। চেম্বারে বা থানায় বসে আদালত পরিচালনার কোনো সুযোগ নেই। এসব বিষয় উল্লেখ করে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিতে বলেছে হাইকোর্ট।

ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে কথা বলতে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশনা দিয়েছে আদালত।

একইসঙ্গে আদালত নেত্রকোণার আটপাড়া উপজেলায় দুই শিশুকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেয়ার ঘটনায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুলতানা রাজিয়ার ব্যাখ্যা দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে। ২৬ আগস্টের মধ্যে এ ব্যাখ্যা দিতে হবে।

বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেয়।

এ সময় নেত্রকোণায় দুই শিশুকে সাজা দেয়ার ঘটনায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুলতানা রাজিয়ার কাছে জেলা প্রশাসক যে ব্যাখ্যা চেয়েছেন, তার কপি আদালতে দাখিলের নির্দেশনা চান বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনা আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। তার সঙ্গে সহমত প্রকাশ করেন ব্লাস্টের আইনজীবী রেজাউল করিম।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, ডেপুটি অ্যাটর্নি সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস ও বিপুল বাগমার।

শুনানির এক পর্যায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সম্প্রতি বেশ কিছু ঘটনায় সাজা দেয়ার প্রসঙ্গ টেনে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, ‘মিস্টার অ্যাটর্নি জেনারেল, আপনি আছেন ভালোই হয়েছে। আমি যতটুকু নিউজে পড়ে জেনেছি ম্যাজিস্ট্রেট রাজিয়া সুলতানা তার চেম্বারে বসে অর্ডারটা পাস করেছেন। এটা কি তিনি করতে পারেন?’

তখন অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘মাই লর্ড এটা হয়তো অন্য বিষয়। এতে তিনি প্রসিডিউর লংঘন করেছেন।’

বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, ‘শুধু প্রসিডিউর না, সবটাই আপনাকে দেখতে হবে। আপনি দেশের অ্যাটর্নি জেনারেল, ল কোথায়, কীভাবে লংঘন হয় সেটা আপনাকে দেখতে হবে।

‘মোবাইল কোর্টটা হচ্ছে অনলি স্পট। যেখানে ঘটনা ঘটবে সেখানেই করতে হবে। এটা চেম্বারেও বসে করার সুযোগ নাই। থানায় বসে করারও সুযোগ নাই।’

বিচারক বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে- আমরা পত্রপত্রিকায় দেখি হয়তো ঘটনা ঘটেছে। হয়তো শাস্তিযোগ্য অপরাধ, কিন্তু দেখা যায়, ম্যাজিস্ট্রেটরা দুই দিন, তিন দিন পরে গিয়ে মোবাইল কোর্টে সাজা দিয়ে দেয়। সুতরাং এগুলো আপনারা সরকারি পর্যায়ে বলেন। ম্যাজিস্ট্রেটদের ফাউন্ডেশন ট্রেনিং হয়, সেখানে মোবাইল কোর্ট কীভাবে পরিচালনা হবে সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হোক।’

আরেকটি ঘটনার উল্লেখ করে বিচারক বলেন, ‘এই কিছু দিন আগে বরগুনা বা পিরোজপুরে দিকে হবে সম্ভবত। এক লোকের ক্ষেতে পাখি গিয়ে ফসল নষ্ট করেছে বলে শতাধিক পাখি সে মেরে ফেলেছে। নিঃসন্দেহে এ ঘটনা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবে আমি যতটুকু দেখছিম দুই-তিন দিন পরে গিয়ে মোবাইল কোর্ট ওই ব্যক্তিকে সাজা দিয়েছে। মোবাইল কোর্টের স্পিরিট কিন্তু এটা না। এ ধরনের অনেকগুলো বিষয় পত্রিকায় দেখেছি।

‘আপনারা একটু মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে বলেন, ওনাদেরও প্রশিক্ষণের ব্যাপার আছে।’

এ সময় সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলও আদালতের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, ‘মোবাইল শব্দটাই তো চলমান।’

পরে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমি এটা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে কথা বলবো।’

নেত্রকোণার আটপাড়া উপজেলায় দুই শিশুকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেয়ার ঘটনায় বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমকে বুধবার চিঠি লেখেন সুপ্রিকোর্টের আইনজীবী শিশির মনির। পরে আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে বুধবারই শিশু দুটিকে মুক্তির নির্দেশ দেয়।

অবশ্য হাইকোর্টের আদেশের আগেই নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক দুই শিশুকে মুক্তির আদেশ দিয়েছেন বলে জানানো হয়েছে। এ ঘটনায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ব্যাখ্যাও চেয়েছেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট।

ওই ব্যাখ্যা চাওয়ার একটি কপি আদালতে দাখিলের নির্দেশনা চেয়ে আবেদন জানান আইনজীবী। পরে আদালত বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেয়।

নেত্রকোণায় যা ঘটেছে

ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বাল্যবিয়ে নিরোধ আইনে দুই শিশুকে এক মাসের দণ্ড দেন নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) সুলতানা রাজিয়া।

জেলার আটপাড়ায় সুলতানা রাজিয়া তার নিজ কার্যালয়ে গত রোববার রাতে আদালত বসিয়ে ওই দণ্ডাদেশ দেন। একই সঙ্গে শিশু দুটিকে গাজীপুরের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়।

শিশু দুটির বাড়ি আটপাড়া উপজেলার দুওজ ইউনিয়নে। তাদের মধ্যে নবম শ্রেনিতে পড়ুয়া মেয়েটির বয়স ১৫ বছর (জেএসসির নিবন্ধন কার্ড অনুযায়ী), ছেলেটিও সমবয়সী।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে প্রায় দুই বছর ধরে তারা দুজন লেখাপড়ার পাশাপাশি ঢাকায় তৈরি পোশাক কারখানায় চাকরি করছিল। এ সময়ে দুজনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

সম্প্রতি মেয়েটি ছেলেটিকে বিয়ে জন্য চাপ দেয়, তবে ছেলেটি তাতে রাজি হয়নি। গত ঈদুল আজহার সময়ে তারা গ্রামের বাড়িতে আসে। এরপর বিয়ের দাবিতে গত সপ্তাহের বুধবার রাত থেকে ছেলের বাড়িতে অবস্থান নেয় মেয়েটি। এ অবস্থায় গত রোববার সন্ধ্যায় উভয় পরিবার তাদের বিয়ের আয়োজন করে।

তবে বাল্যবিয়ের খবর পেয়ে সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুলতানা রাজিয়া ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠান। এরপর দুই জনকে তার কার্যালয়ে এনে এক মাসের কারাদণ্ড দিয়ে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়।

শিশু আদালতে বিচার না করে দুজনকে বাল্যবিয়ে নিরোধ আইনে আটকাদেশ দেয়াকে আইন বহির্ভূত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ বিভাগের আরো খবর