১১ আগস্টের মধ্যে ১৮ ঊর্ধ্ব সকল নাগরিককে করোনা প্রতিরোধী টিকার আওতায় আনা সম্ভব নয় বলে সরকার তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করায়, নিজের বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের আরোপ করা শাটডাউন নামে পরিচিতি পাওয়া কঠোর বিধিনিষেধ শেষে টিকা ছাড়া ১৮ বছরের বেশি বয়সীরা বাইরে আসতে পারবেন না বলে দেয়া বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেয়ার কারণ ব্যাখ্যায় এ কথা বলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
রাজধানীর আব্দুল গণি রোডে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বুধবার দুপুরে সাংবাদিকদের কাছে সরকারের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন এবং নিজের বক্তব্য প্রত্যাহারের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানান মন্ত্রী।
আ ক ম মোজাম্মেল বলেন, ‘আমরা কালকে একটা কথা বলেছিলাম যে আগামী ১১ তারিখ থেকে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে কোনো ব্যক্তি যদি টিকা ছাড়া রাস্তায় চলাফেরা করেন তারা আইনের আওতায় আসবেন। আমরা সেটা পর্যালোচনা করে দেখেছি যে সেটা বাস্তবসম্মত নয়। সেজন্য আমরা আমাদের, আমি যে কথা বলেছিলাম সেটা প্রত্যাহার করে নিয়েছি।’
এ বিষয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘যেহেতু ১১ তারিখে সমস্ত লোককে টিকা দেয়া সম্ভব নয়। কাজেই টিকা না দিয়ে আসতে পারবে না, সেই ইয়েটাও ইমপোজ করা যায় না। সে কারণেই আমরা আমাদের সিদ্ধান্তের ওই অংশটুকু, ১১ তারিখের পর থেকে কেউ আসলে আইনের আওতায় আসবে, ওই অংশটুকু প্রত্যাহার করে নিচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সরকার এ দেশের সকল নাগরিকদের পর্যায়ক্রমে টিকা দেয়ার জন্য আমরা বলেছি যে ১৪ হাজার টিকা কেন্দ্র স্থাপন করে আগামী ৭ তারিখ থেকে কার্যক্রম চলবে। ১৮ বছরের সকল নাগরিকদেরকে টিকা দেয়ার জন্য আমাদের সরকার বদ্ধ পরিকর।’
নিজের বক্তব্য শেষ করেই তড়িঘড়ি করে কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে সম্মেলন কক্ষ ছেড়ে যান মন্ত্রী।
যদিও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন মঙ্গলবারে অনুষ্ঠিত কোভিড-১৯ পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত আন্তঃ মন্ত্রণালয় সভায় এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।
ওই বৈঠকে তিনি অনলাইনে সংযুক্ত ছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এমন বক্তব্য কারও ব্যক্তিগত অভিমত হতে পারে, কিন্তু সরকারের সিদ্ধান্ত নয়।’
বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘সেখানে আসলে এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্ত হয়নি যে (টিকা ছাড়া) ১৮ বছরের বেশি বয়সের কেউ বের হলে অপরাধ হবে। সে ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’
এমন বক্তব্য সরকারের সমন্বয়হীনতা কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নাহ, এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত সেখানে হয়নি। আমাদের সচিবও সেই বৈঠকে যুক্ত ছিলেন। এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এটি কারও ব্যক্তিগত অভিমত হতে পারে, কিন্তু এই ধরনের সরকারি সিদ্ধান্ত হয়নি।’
মাস্ক পরার ওপর জোর দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একইসঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি যাতে সবাই মানে সেটির ওপর জোর দেয়া হয়েছে।’
পুলিশের হাতে শাস্তি দেয়ার ক্ষমতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মাস্ক না পরলে পরে যাতে ইন্সট্যান্টলি শাস্তি দেয়া যায়, সেজন্য পুলিশের কাছে এ ধরনের... অবশ্যই বিচারিক ক্ষমতা নয়, পুলিশ যেমন অবৈধ যানবাহনের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করে, ট্রাফিক পুলিশ ভায়োলেট করলে সেখান থেকে জরিমানা আদায় করে, সুতরাং সেই ধরনের ইনস্টিটিউট দ্বারা ভ্যালিডেটেড অবশ্যই হতে হবে সেটি আইন আনুযায়ী।’
বিষয়টি নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী। বলেন, ‘পুলিশ যাতে জরিমানা করতে পারে, সেটি আইনের মধ্যে থেকে কীভাবে করা যায়, সেটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। সেটা করা প্রয়োজন বলেও সবাই অভিমত ব্যক্ত করেছে।’
৭ আগস্ট থেকে সরকার ব্যাপক টিকা কার্যক্রমে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘১ সপ্তাহে ১৪ হাজার কেন্দ্র থেকে ১ কোটি দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।’
‘তখন কেউ কেউ, আমার ঠিক মনে নেই, এ ধরনের আলোচনা করেছে। টিকা ছাড়া বের হলে... এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’