বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত আশ্রয়দাতা হিসেবে ঢাকাকে সহায়তা দেয়া হচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
মঙ্গলবার বিশ্বব্যাংকের ঢাকা চ্যাপ্টারের ওয়েবসাইটে দেয়া এক বিবৃতিতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রতি অনেকটা নমনীয় অবস্থান দেখানো হয়।
একদিন আগে, বিশ্বব্যাংক আবদার জানিয়েছিল বাংলাদেশি নাগরিকরা রাষ্ট্রের কাছ থেকে যেসব সুযোগ-সুবিধা পায়, মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদেরকেও তার সব সুবিধা দিতে হবে ঢাকাকে।
একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাটির প্রস্তাব বলা হয়েছিল, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে জমি কেনার সুযোগ দেয়া হোক, তাদের স্বাধীনভাবে যাতায়াত করতে দেয়া হোক, তাদের নিজেদের মধ্যে নির্বাচন করে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ দেয়া হোক।
বাংলাদেশ এই প্রস্তাব মানলে বাংলাদেশকে দুই বিলিয়ন ডলার দেয়ার কথা জানিয়েছে তারা। তবে বাংলাদেশ এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।
তবে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের মূল সমাজে অন্তর্ভুক্ত করা বা স্থায়ীভাবে রেখে দিতে বিশ্বব্যাংকের প্রস্তাবকে অবাস্তব বা কল্পনাপ্রসূত অভিহিত করে তা নাকচ করে দিয়েছে সরকার।
সোমবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এক জরুরি প্রেসব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সমাজে অন্তর্ভুক্ত বা রেখে দেয়ার জন্য বিশ্বব্যাংকের প্রস্তাবে ঢাকা রাজি নয়। আমাদের অগ্রাধিকার ইস্যু হচ্ছে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন, রোহিঙ্গারা তাদের বাসভূমে ফিরে যাবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক একটা রিপোর্ট তৈরি করেছে, এটা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, ১৬টা দেশের জন্য। যেসব দেশে রিফিউজি আছে, সেখানে তাদের হোস্ট কান্ট্রিতে ইন্টিগ্রেট করার বিষয়ে। যেহেতু রোহিঙ্গারা রিফিউজি না, আমরা এটি পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছি।
বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে বিশ্বব্যাংকের অবস্থান কী, এমন প্রশ্নে সংস্থাটি বিবৃতির মাধ্যমে জানায়, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর চাহিদা মেটাতে ও তাদের নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত আশ্রয়দাতা হিসেবে ঢাকাকে সহায়তা দেয়া অব্যাহত রাখবে বিশ্বব্যাংক। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ওপর রোহিঙ্গাদের নেতিবাচক প্রভাব কমাতে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে সহায়তা করছে বলে দাবি করে সংস্থাটি।
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কারণে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে কতটুকু সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে বিবৃতিতে জানানো হয়, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা ও কক্সবাজারের স্থানীয় মানুষের স্বাস্থ্য, অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা, সহ মৌলিক অবকাঠামো উন্নয়নে ৫৯০ মিলিয়ন ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কক্সবাজারের চ্যালেঞ্জ এবং উন্নয়ন ধরে রাখতে গবেষণা ও বিশ্লেষণ করছে বলে দাবি করে বিশ্বব্যাংক।
৫৯০ মিলিয়ন ডলার সহযোগিতা, অনুদান না ঋণ? এমন প্রশ্নে বিবৃতিতে স্পষ্ট করা হয় সম্পূর্ণ ৫৯০ মিলিয়ন ডলার হলো অনুদান। এটি কোনো ঋণ নয়।
শরণার্থী নীতি পর্যালোচনা করে রোহিঙ্গা জনসংখ্যার বিষয়ে বাংলাদেশকে কোনো সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করা হয়েছে? এমন প্রশ্নে বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে কোনো দেশের জন্য নির্দিষ্ট সুপারিশ চাপিয়ে দেয়া হয়নি।