দেশে চলমান শাটডাউন আরও পাঁচদিন বাড়িয়ে সরকার থেকে জানানো হয়েছে ১১ আগস্ট থেকে খুলে দেয়া হবে বাসসহ গণপরিবহন। এদিন থেকে খোলা হবে শপিং মলসহ সব ধরনের দোকানপাট এবং অফিস আদালত।
করোনা পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত আন্তমন্ত্রণালয়ের বৈঠক শেষে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের এসব কথা জানান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
বৈঠকের সভাপতি আ ক ম মোজাম্মেল বলেন, ‘১০ তারিখ পর্যন্ত আমরা বিধিনিষেধ বৃদ্ধি করেছি। ১১ তারিখ থেকে ইনশাআল্লাহ খুলবে।’
এর মধ্যে কিছু শিল্প-কারখানা খুলে দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অন্যান্য কারখানাও আমরা খুলে দেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ১১ তারিখ থেকে সমস্ত দোকানপাট, যানবাহনও চলবে। তবে সব একত্রে না। আমরা লোকাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটরকে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে অনুরোধ করব, বাই রোটেশনে যাতে চলে।’
উদাহরণ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘মনে করেন, গাজীপুর থেকে ১০০ গাড়ি আসে প্রতিদিন ঢাকায়। ১০০ না, ৩০টি আসুক বা ৫০টি আসুক। আজকে এগুলো যাবে কালকে অন্যগুলো যাবে। এরকম তারা নির্ধারণ করে দেবে। শ্রমিক, পরিবহণ নেতা এবং যারা পরিবহণের মালিক তাদের সঙ্গে বসে এটা ঠিক করা হবে।’
আ ক ম মোজাম্মেল বলেন, ‘লঞ্চ, স্টিমার আছে, রেল আছে, সেগুলোও চলবে। তবে অতীতে যে পরিমাণ চলেছিল, সে পরিমাণ যাতে না চলে, সীমিত আকারে চলে...কর্তৃপক্ষ সেগুলো নির্ধারণ করে জনগণকে অবহিত করবে। যেমন রেল হয়তো ১০টা চলতো, এখন ৫টা চলবে। কোন-কোন সময়ে কোনটা ছাড়বে এবং কীভাবে যাবে, এগুলো স্ব স্ব মন্ত্রণালয় ও ডিপার্টমেন্ট জনগণকে অবহিত করবে, যাতে করে কোনো গ্যাপ না থাকে।’
কবে নাগাদ শাটডাউন তোলা হবে, এমন প্রশ্নে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘১১ আগস্ট থেকে ধাপে ধাপে বিধিনিষেধ তুলে নেয়া হবে। তবে সেটা কী উপায়ে তা পরবর্তীতে জানানো হবে।’
করোনারোধী টিকা কার্যক্রম নিয়েও কথা বলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী। জানান, দেশে টিকার কোনো অভাব নেই। এই জন্য টিকাগ্রহীতাদের বয়স সীমাও কমানো হয়েছে।
অনেকটা হুঁশিয়ারির সুরে মন্ত্রী বলেন, ‘১১ তারিখ থেকে ১৮ বছরের বেশি বয়সী কোনো লোক টিকা নেয়া ছাড়া রাস্তায় নামতে পারবে না। নামলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে। আইন না মানলে অধ্যাদেশ জারি করে পুলিশকে শাস্তি প্রয়োগের ক্ষমতাও দিতে পারে সরকার।
‘আগামী সপ্তাহের মধ্যে এক কোটির বেশি লোককে টিকার আওতায় আনা হবে। টিকা নেয়ার জন্য দৌড়াতে হবে না, ১৪ হাজার কেন্দ্রে একযোগে টিকা দেয়া হবে। বয়স্ক মানুষকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।’
বর্তমানে দেশে ঈদুল আজহা পরবর্তী ১৪ দিনের শাটডাউন চলছে, যা শেষ হবে ৫ আগস্ট। এর আগেই তা আরও পাঁচদিন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত এলো সরকার থেকে।
এই শাটডাউনে বন্ধ রয়েছে সরকারি-বেসরকারি অফিসসহ শপিং কমপ্লেক্স ও রোস্তোঁরাও। শাটডাউনে জনসাধারণের চলাচল নিয়ন্ত্রণে বন্ধ রাখা হয়েছে বাস, ট্রেন, লঞ্চ ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট।
তবে ব্যবসায়ীদের অনুরোধে গত ১ আগস্ট থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানি কারখানাগুলো খুলে দেয় সরকার।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে করোনা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। সবাইকে সচেতন করতে হবে। সেজন্য গ্রামে গ্রামে মহল্লায় কমিটি গঠন করা হবে। মাস্ক ছাড়া কাউকে ঘরের বাইরে আসতে দেয়া হবে না।’
করোনার বিস্তার রোধে সব স্তরে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিতে সরকার আরও কঠোর হচ্ছে বলে জানালেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বললেন, মাস্ক না পরে বাহিরে এলে শাস্তির বিচারিক ক্ষমতা দেয়া হচ্ছে পুলিশকে।
তিনি বলেন, ‘মাস্ক না পরলে শাস্তির আওতায় আনতে পুলিশকে ক্ষমতা দেয়া হবে। সেজন্য অধ্যাদেশ জারি করা হবে।’
চলমান টিকা কার্যক্রম নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানালেন, আগামী সাত দিনে কোটি মানুষকে করোনার টিকা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার। ৭ আগস্ট থেকে প্রতিটি ইউনিয়নে করোনার টিকা দেয়া হবে। টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে, ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
তিনি বলেন, গ্রামের বয়স্ক মানুষ বেশি মারা যাচ্ছে। তাই টিকা কার্যক্রম গ্রামে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
টিকার মজুদ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, সরকারের হাতে এখন সোয়া কোটি করোনার টিকা আছে। চলতি মাসে আসবে আরও অন্তত এক কোটি টিকা।