বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বস্তিবাসী গ্রামে ফিরলে পাবেন জমিসহ ঘর

  •    
  • ৩ আগস্ট, ২০২১ ১২:০৭

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বস্তিতে বাস করা কেউ ঘরে ফিরতে চাইলে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে জমিসহ ঘর দেব। ছয় মাস যেন তারা চলতে পারে সে ব্যবস্থাও করব। ঘরে ফেরা কর্মসূচি আবার শুরু করব।’

বস্তিতে বসবাস করা নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য আবারও ঘরে ফেরা কর্মসূচি শুরু হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ৩০০ বস্তিবাসী পরিবারের কাছে ভাড়ার ফ্ল্যাট হস্তান্তর অনুষ্ঠানে মঙ্গলবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা ঢাকায় থাকবে ভাড়া দিয়ে থাকবে। আর যারা নিজের গ্রামে ফিরতে চান, যদি কারও জমি না থাকে জমিসহ আমরা ঘর দেব, আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর মাধ্যমে আমরা সেটা দিচ্ছি। সেই সাথে সাথে ঋণ ও কাজ করার সুযোগ পাবেন। তাদের ছয় মাসের খাবার আমরা বিনামূল্যে দেব।

‘আর ভিটামাটি যাদের আছে, তাদেরও ঘর করে দেয়া হবে, বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে। ঘরে ফেরা কর্মসূচিটাকে আবার আমি ভালোভাবে চালু করব। বস্তির অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে না থেকে গ্রামে ফিরে গেলে এ সুবিধাগুলো পাবেন।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে যারা আছেন আস্তে আস্তে তাদের জন্য ভাড়া ভিত্তিক অর্থাৎ বস্তিতেও তাদের ভাড়া দিয়েই তো থাকতে হয়। শুধু ভাড়া দেয়া না সেই সাথে রান্না করার জায়গা সেটা তাদের থাকে না, সেটাও টাকা দিয়ে নিতে হয়। বাথরুমে যেতে গেলে লাইন ধরে যেতে হয়, নানা অসুবিধা। দালাল শ্রেণি, তাদের টাকা দিতে হয়।

‘এই জায়গাগুলোতো সরকারি, অন্য কেউ ঘর বানায় সেটা আবার ভাড়া দেয়, আরেক হাতে যায়, নানা ভাবে একটি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থাকে। সেই জায়গা থেকে তাদের মুক্ত করা; কিন্তু মাসে ভাড়া দিতে পারবে, সপ্তাহে দিতে পারবে বা দিনের ভাড়া হিসেবে কেউ নিতে চাইলে তাও নিতে পারবে। যারা এরকম বস্তিতে থাকছেন তাদের জন্য একটি সুষ্ঠু আবাসন ব্যবস্থা আমরা করে দেব, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’

১৯৯৬ সালে প্রথম দফায় সরকার গঠনের পর বস্তিবাসীর জন্য ভাড়ায় ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরে অনেক বস্তি। আমি ৯৬ সালে যখন প্রথম সরকারে আসি এই বস্তির বাচ্চাদের গণভবনে নিয়ে এসে তাদের সাথে আলোচনা করি। কেন তারা বস্তিতে থাকে। নিজের ভিটেমাটি ছেড়ে কেন আসলো? অনেক ধরনের তথ্য আমি পাই।

‘আমরা কতগুলো প্রোগ্রাম নিয়েছিলাম, বস্তিবাসী তাদের নিজেদের গ্রামে ফিরে যেতে চায় তাদের জন্য একটি কর্মসূচি নিয়েছিলাম, ঘরে ফেরা কর্মসূচি। কোনো বস্তিবাসী যদি নিজ গ্রামে ফিরে যায় তার যদি ভিটেমাটি থাকে তাহলে তাকে বিনা পয়সায় ঘরবাড়ি তৈরি করে দেয়া, তাকে স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করে দেয়া। পাশাপাশি ছয় মাসের খাবার বিনা পয়সায় দেয়া এবং সে যেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে সে ব্যবস্থা করা। এভাবে প্রায় ১৮ হাজার পরিবার নিজ গ্রামে ফিরে গিয়েছিল, সেভাবেই আমরা তাদের উদ্বুদ্ধ করেছিলাম।’

তিনি বলেন, ‘এ ছাড়া ঢাকায় যারা থাকে, কারণ এ ধরনের নিম্ন আয়ের মানুষেরও আমাদের প্রয়োজন আছে। দৈনন্দিন কাজের জন্য, বিভিন্ন নির্মাণ কাজে প্রয়োজন আছে; কিন্তু বস্তিতে এতো মানবেতর জীবনযাপন করে মানুষ। একটা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ।

‘আমাদের দেশে যারা হরিজন তাদের জন্য আমরা ফ্ল্যাট নির্মাণ করে দিয়েছি, ৯৬ সালে যখন সরকারে ছিলাম। মাঝে বিএনপি যখন সরকারে আসে তারা লুটপাট করে শেষ করে দেয়। সেই বিল্ডিংগুলো ভেঙে নতুন করে ফ্ল্যাট আমরা নির্মাণ করে দিচ্ছি। এরই মধ্যে কয়েকটি করা হয়েছে, আমরা আরও করব।’

একইভাবে ভাষানটেকে বস্তিবাসীর জন্য আবাসন প্রকল্প শুরু করা হলেও তার শেষ করতে না পারার আক্ষেপ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘২০০১ সালে যখন ক্ষমতায় আসতে পারলাম না, পরবর্তীতে বিএনপির ক্যাডাররা কি করেছে সবাই একটু খোঁজ নিলে জানতে পারবেন। সেটা আর বস্তিবাসীর ভাগ্যে জোটেনি এটুকু বলতে পারি।

‘আজকে অন্তত আমরা ৩০০টি ফ্ল্যাট ৩০০টি পরিবারকে হস্তান্তর করছি। পর্যায়ক্রমে আমরা এ ব্যবস্থাটা নেব। তবে তাদের ভাড়া দিয়ে থাকে হবে।’

রাজধানীর মিরপুরের ১১ নম্বর সেকশনে ১৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে এ প্রকল্প। এখানে ১৪ তলার পাঁচটি ভবনে ৫৩৩টি আধুনিক ফ্ল্যাট তৈরি করা হচ্ছে। লিফট, জেনারেটর, সৌরবিদ্যুৎ, প্রশস্ত ওয়াকওয়ে, বিদ্যুতের সাবস্টেশন ও সৌন্দর্যবর্ধনের লাইটিংসহ আধুনিকতায় সমৃদ্ধ করা হচ্ছে জায়গাটি।

দেশে বস্তিবাসীদের নিয়ে এমন উন্নত বাসস্থানের চিন্তা এটিই প্রথম। গত রোববার দুপুরে লটারির মাধ্যমে প্রতিটি পরিবারের জন্য ফ্ল্যাট নির্ধারণ করে দেয়া হয়।

প্রতিটি ফ্ল্যাটের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে ৭ হাজার টাকা। এ ছাড়া এর সঙ্গে যুক্ত হবে গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ ও অন্য সার্ভিস চার্জ। সেটি কত তা এখনও নির্ধারণ হয়নি।

প্রতিটি ফ্ল্যাটের আয়তন ৬৭৩ বর্গফুট। এক একটি ফ্ল্যাটে রয়েছে দুটি করে বেডরুম, একটি বারান্দা, একটি ড্রয়িংরুম, বেসিন, রান্নাঘর ও দুটি বাথরুম। দুপাশে ফাঁকা জায়গা। পেছনের দিকে বেড়িবাঁধ অংশের খাল। সামনে প্রশস্ত সড়ক।

জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, পুরো প্রকল্পে জমির পরিমাণ ছয় বিঘা। এই জমিতে আগে বস্তি ছিল। ২০১৭ সালে তা ভেঙে ফেলা হয়। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ভবন তৈরির কাজ শুরু হয়।

উচ্চ থেকে নিম্ন সরকারি কর্মচারীরা পাবেন ফ্ল্যাট

অনুষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ঢাকায় নির্মিত ২ হাজার ৪৭৪টি ফ্ল্যাটের পাঁচটি আবাসন প্রকল্প এবং মাদারীপুরে নির্মিত সমন্বিত অফিস ভবনও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পর্যায়ক্রমে সব পর্যায়ের সরকারি কর্মচারীদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা করবে সরকার।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে কোনো রাষ্ট্র পরিচালনা করতে গেলে আমাদের সরকারি কর্মচারীদের প্রয়োজন। আমাদের সংবিধানে কিন্তু সরকারি অফিসারদের কর্মচারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে কে উচ্চ কে নিচু সেটা দেখা হয়নি। যারা কাজ করবেন, তাদের দিয়ে যেহতু আমরা কাজ করাব তাদের ভালোমন্দটাও আমাদের দেখতে হবে।

‘তারা যেন একটা ভালো পরিবেশ থাকতে পারেন; তাদের মেধা, তাদের মনন, তাদের শক্তি সবকিছু যেন কাজে লাগাতে পারেন এটাই আমাদের লক্ষ্য।’

তিনি বলেন, ‘আমি সরকার গঠন করার পরে দেখেছি, আমাদের সরকারি অফিসাররা একবার একটা বাসা পেলে তার যতোই প্রমোশন হোক সেখানেই সে থাকে, কারণ পরে বাসা সে ভালো পাবে কিনা তার কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। আমি সরকার গঠনের পর উদ্যোগ নেই, সকলের জন্য আবাসন ব্যবস্থা করে দেব এবং ফ্ল্যাট নির্মাণ করে দেব।

‘ফ্ল্যাট নির্মাণের সিদ্ধান্তটা এ জন্য যে আমাদের ভূমির পরিমাণ কম, জনসংখ্যা বেশি। সাড়ে সাত কোটি থেকে এখন সাড়ে ১৬ কোটির উপরে মানুষ। কাজেই আমাদের সরকারের পরিধি বেড়েছে, কাজের পরিধি বেড়েছে, আমাদের সরকারি কর্মচারীর সংখ্যাও বেড়েছে। সেটা বিবেচনা করেই আমরা ঠিক করলাম আমরা ফ্ল্যাট নির্মাণ করে দেব। বিভিন্ন পর্যায়ে যারা আছেন উচ্চ পদস্থ থেকে একদম নিম্ন পর্যায় পর্যন্ত, ফ্ল্যাটবাড়ি করে দেব যাতে তারা সুন্দর পরিবেশে থাকতে পারেন এবং ভালোভাবে কাজ করতে পারেন।’

উপজেলা পর্যায়েও সমন্বিত অফিস কমপ্লেক্স

দেশের মানুষ যেন সহজেই সরকারি সেবা পায় এ জন্য সব সরকারি অফিসগুলোকে এক ছাদের নিচে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘এখন জেলা ভিত্তিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পেয়েছে সেখানে যারা যান এবং সরকারি কর্মচারীদের কাজ করার সুবিধা, জনগণ যেন এক জায়গায় সব সরকারি সুবিধা পেতে পারে সে সুযোগটা করে দেয়া।

‘এ কারণে আমি যখন প্রথমবার সরকারে আসি তখন ইউনিয়ন কমপ্লেক্স ভবন করে দিলাম। আগে যেমন ইউনিয়নে যে সেবাগুলো মানুষ পায় তার জন্য আলাদা আলাদা অফিস, আলাদা আলাদা জায়গা। এতে যেমন আমাদের জায়গাও বেশি লাগে সেই সাথে আবার মানুষকে একেক কাজে একেক অফিসে দৌড়াতে হয়। এতে তার যাতায়াত খরচটাও বাড়ে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবচেয়ে বড় বিষয় আমার জমি বাঁচানো, কৃষি জমি রক্ষা করা। তাই আমরা এ ধারণাটা আমি দেই এবং সেভাবে তৈরি করতে থাকি। একইভাবে উপজেলা কমপ্লেক্স ভবন, যেখানে উপজেলার সব সুবিধা এক সাথে পাওয়া যায়।

‘আর আজকে আমরা মাদারিপুরে সমন্বিত সরকারি অফিস, অর্থাৎ সমগ্র কাজগুলো চলবে একই বিল্ডিংয়ে। যে সরকারি সুবিধা পেতে যাবে এক জায়গায় সব পাবেন। এতে যেমন রাস্তায় ট্রাফিক কমবে, যোগাযোগের উপরে চাপ পড়বে না, যারা যাবেন তাদের যাতায়াতের খরচটাও বেঁচে যাবে। এক জায়গায় বসে তার সব কাজ করে আসতে পারবেন একটা সমন্বয় থাকবে। এতে আমার জমিরও সাশ্রয় হবে।’

মাদারিপুরের পর পর্যায়ক্রমে সব জেলাতেও এ ধরনের ভবন তৈরি করা হবে বলে জানান সরকার প্রধান। তিনি বলেন, ‘এটা মাদারিপুরে আমরা প্রথম করলাম, পর্যায়ক্রমে প্রত্যেক জেলায় আমরা এটা করব এবং প্রতি উপজেলাতেও করে দেব।

‘উপজেলায় শুধু সরকারি অফিস না, আমি চাই প্রতি উপজেলায় ফ্ল্যাট তৈরি করে দেয়া। কারণ অনেকেই চাকরিজীবী, তারা সেখানে যান থাকার অসুবিধা, ভালো বাড়ি ভাড়া পান না, নানা অসুবিধা হয়। এ বিবেচনায় আমরা সেটাও করে দেয়ার চিন্তা করছি।’

এ বিভাগের আরো খবর