বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া জাতীয় সংসদেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার নিন্দা জানিয়েছেন বলে দাবি করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার এক ভার্চুয়াল আলোচনায় ফখরুল এই মন্তব্য করেন। লালমনিরহাট বিএনপির উদ্যোগে জেলার কোভিড-১৯ হেল্প সেন্টারের উদ্বোধন এবং করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দিতে এই অনুষ্ঠান হয়।
এ সময় বিএনপি নেতা বঙ্গবন্ধু হত্যায় জিয়াউর রহমানকে দোষারোপ করে আওয়ামী লীগ নেতাদের রাখা নানা বক্তব্যের জবাব দেন।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সময় জিয়া ছিলেন উপসেনা প্রধান। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি সৈয়দ ফারুক রহমান ও খন্দকার আব্দুর রশিদ পরে বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে জানান, এই পরিকল্পনা জানতেন জিয়াউর রহমান। আর তিনি তাদেরকে এগিয়ে যেতে বলেন।
জিয়া ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের বাইরে রাখার সুবিধা জিয়ে খোন্দকার মুশতাক আহমেদের জারি করা অধ্যাদেশ সংবিধানের অংশ করেন। বঙ্গবন্ধুর খুনিদেরকে বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে চাকরি বা রাষ্ট্রদূত করে পুরষ্কৃতও করেন তিনি।
ফখরুলের অভিযোগ, জিয়াউর রহমানের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে সরকার ‘নতুন গীত’ গাইছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত
তিনি বলেন, ‘এদের (আওয়ামী লীগ সরকার) কাজ কী? এদের কাজ হচ্ছে সারাক্ষণ বিএনপিকে দোষারোপ করা, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাহেবকে কীভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা যায় তার চেষ্টা করা, কীভাবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে খাটো করা যায় তার চেষ্টা করা, কীভাবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার করা যায় সেই চেষ্টাই তারা করছে।'
ফখরুল বলেন, ‘অত্যন্ত সন্মান্বিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের ১৫ আগস্টের যে হত্যাকাণ্ড ১৯৭৫ সালে, আমরা কিন্তু প্রত্যেকবার আমাদের নেতা, আমাদের নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া পার্লামেন্টে সবসময়েই এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। আমরা কেউই কোনো হত্যাকাণ্ড সমর্থন করি না।’
আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার আগে ওই বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারির একতরফা নির্বাচনে কুমিল্লার একটি আসন থেকে বঙ্গবন্ধুর খুনি রশিদকে নির্বাচিত করে আনেন খালেদা জিয়া। পরে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলের আদেশ সংসদে তোলার পর বিএনপি ওয়াকআউট করে।
২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় ফেরার পর বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আপিল শুনানি আটকে যায়। অভিযোগ আছে, এই শুনানি যেন না হয়, সে জন্য আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ আটকে দেয়া হয়েছিল।
ফখরুল বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে। বিচার করেছেন আপনারা (আওয়ামী লীগ সরকার)…। সেই বিচার করার পরে সব কিছু শেষ হয়ে গেছে। অথচ আপনারা এখন শুরু করেছেন নতুন একটা গীতের গান, গীত গাওয়া, গান গাওয়া যে, জিয়াউর রহমান এটার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল।’
তিনি বলেন, ‘কোথাও প্রমাণ করতে পারেনি, কেউ না। আজ পর্যন্ত কেউ এই কথা বলে নাই যে, জিয়াউর রহমান সাহেব সম্পৃক্ত ছিলেন। জিয়াউর রহমান সাহেব তো তখন ডেপুটি চিফ মার্শাল এডমিনিস্টারও ছিলেন না। তিনি সেনাবাহিনীর উপপ্রধান ছিলেন মাত্র।
‘সেনা প্রধান ছিলেন সফিউল্লাহ সাহেব (কে এম সফিউল্লাহ)। সেই সফিউল্লাহ সাহেব তো গিয়ে খোন্দকার মোশতাকে যেয়ে স্যালুট করেছেন, এ কে খন্দকার সাহেব (সে সময় বিমানবাহিনীর প্রধান) স্যালুট করেছেন, নেভাল চিফ স্যালুট করেছে।
‘আপনাদের খোন্দকার মোশতাক সাহেবের সঙ্গে পুরো ৩১ জনের মন্ত্রিসভা গিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবের রক্তের ওপর দিয়ে হেটে গিয়ে তারা মন্ত্রিত্বের শপথ নিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ড তো আপনারা ঘটিয়েছেন, আওয়ামী লীগ ঘটিয়েছে। অন্য কেউ তার সঙ্গে জড়িত ছিল না। যারা করেছে তারা সামরিক বাহিনীর লোক ছিল। তাদের সঙ্গে আপনারা যুক্ত ছিলেন বলেই আপনারা করেছেন।
‘সুতরাং ওই মাছ দিয়ে শাখ ঢাকার চেষ্টা করবেন না। নিজেদের অপকর্ম ঢাকার জন্যে অন্যকে দোষারোপ করে লাভ নেই। নিজেরা পরিষ্কার হোন, নিজেরা পরিচ্ছন্ন হউন, পরিশুদ্ধ হউন। হত্যার রাজনীতি বাদ দেন এবং সন্ত্রাসের রাজনীতি বাদ দেন, জনগনকে প্রতারণা করবার রাজনীতি বাদ দেন। বাদ দিয়ে আপনারা সঠিকভাবে জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা, সেই আকাঙ্ক্ষাকে পূরণ করেন। ১৯৭২ সালে সেই সংবিধান সেই সংবিধান মতো কাজ করেন।’
ফখরুল বলেন, ‘আজকে কী করেছেন? সমস্ত অধিকার খর্ব করে দিয়েছেন বাংলাদেশের মানুষের। যারা লিখতে না পারে সংবাদ কর্মীরা সেইজন্য ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট করেছেন। এখন কথায় কথায় এই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদেরকে লেলিয়ে দেন। তারা ধরে নিয়ে এসে বিভিন্ন রকমের অত্যাচার-নিপীড়ন-নির্যাতন করে, তার বিরুদ্ধে মামলা দেয়।’
সংগ্রাম করতে হবে
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, এই যে একটা ভয়াবহ অবস্থা থেকে আমাদের উত্তরণ ঘটাতে হবে। একদিকে আমরা জনগণের পাশে গিয়ে দাঁড়াব, অন্যদিকে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই দানব সরকারকে সরানোর জন্য আমাদেরকে লড়াই করতে হবে, সংগ্রাম করতে হবে।
‘আমরা করোনার দানবকে পরাজিত করার চেষ্টা করব, একই সঙ্গে রাজনৈতিক যে দানব আমাদের সমস্ত আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ধবংস করে দিচ্ছে, তাদেরকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থেই জনগণের প্রতিনিধির সরকার প্রতিষ্ঠা করার প্রতিষ্ঠার আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করব। আমরা বিশ্বাস করি, যদি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা চেষ্টা করি, অবশ্যই আমরা জয়ী হবে, জয় আমাদের সুনিশ্চিত ইনশাল্লাহ।’
লালমনিরহাট বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলুর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান বাবলার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ও সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল খালেক বক্তব্য রাখেন।