দফায় দফায় লকডাউন, শাটডাউন ও কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেও করোনাভাইরাসের উচ্চ সংক্রমণ গতির লাগাম টানা যায়নি। এদিকে চলতি লকডাউনও চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সুপারিশ, আরও বাড়ানো হোক শাটডাউন।
অন্যদিকে জীবন-জীবিকার চাকা সচল করতে শাটডাউন তুলে দেয়ার পক্ষে সরকারের একাংশ। ফলে দোটানায় রয়েছে সরকার।
এমন বাস্তবতায় করণীয় নির্ধারণে মঙ্গলবার কোভিড-১৯ পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত আন্তমন্ত্রণালয় সভা ডেকেছে সরকার। সেখানেই চূড়ান্ত হবে শাটডাউন বা কঠোর বিধিনিষেধ নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত।
মঙ্গলবার বেলা ১১টায় অনলাইনে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
সভায় মোট ১২ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, ১৬ জন সচিব, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, পুলিশ মহাপরিদর্শক, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, আইইডিসিআর পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টরা অংশ নেবেন বলে জানা গেছে।
ঈদের সময় আট দিন বিরতি দিয়ে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে শুরু হয় শাটডাউন নামে পরিচিতি পাওয়া কঠোর বিধিনিষেধ। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী এটি শেষ হচ্ছে ৫ আগস্ট মধ্যরাতে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে এরই মধ্যে আভাস মিলেছে তুলে নেয়া হতে পারে শাটডাউন।
তারা বলছে, করোনা প্রতিরোধী টিকার সংস্থান হওয়ায় স্বস্তি ফিরে পেয়েছে সরকার। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরে চলার শর্তে ৫ আগস্টের পর শাটডাউন তুলে দেয়া উচিত।
তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়-সংশ্লিষ্টরা চলমান শাটডাউন দীর্ঘায়িত করার পক্ষে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রোববার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো অতিরিক্ত জনসংখ্যার দেশে শাটডাউন দিয়ে সেটি বাস্তবায়ন করা খুব মুশকিল। দেখলেন তো মাঠে আর্মি নামিয়েও কাজ হচ্ছে না। মানুষ বাইরে আসছেই। কিছুতেই আটকানো যাচ্ছে না।’
আরেক কর্মকর্তা বললেন, ‘আমাদের মতো অর্থনীতির দেশে দিনের পর দিন এভাবে সব বন্ধ রেখে চলা সম্ভব নয়। অর্থনীতিকে ঝুঁকিতে ফেলে দেয়ার মতো চ্যালেঞ্জ নেয়ার ক্ষমতা এখনও আমাদের নেই। এটা বাস্তবতা। মানুষকে কাজের সুযোগ দিতে হবে, আয়ের সুযোগ দিতে হবে। নতুবা পরিস্থিতি অন্য রকম হতে পারে।’
অর্থনীতি যে সরকারের মাথাব্যথার বড় কারণ, তার প্রমাণ মিলেছে চলমান শাটডাউনের মধ্যে রপ্তানিমুখী শিল্প খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তে। ফলে গণপরিবহন বন্ধ থাকা অবস্থায় ভোগান্তি নিয়েই ঢাকামুখী হন শ্রমিকরা। পরে অবশ্য শনিবার রাত থেকে রোববার রাত পর্যন্ত ঢাকামুখী শ্রমিকদের জন্য বাস-লঞ্চ খুলে দেয়া হয়।
স্বাস্থ্য-সংশ্লিষ্টদের দাবি, লাখ লাখ শ্রমিক এত অল্প সময়ে গাদাগাদি করে ঢাকা আসায় করোনা সংক্রমণ আরও তীব্র হয়ে উঠতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, কঠোরতম বিধিনিষেধ চলমান রাখা তো হচ্ছেই না। তবুও বৈঠক থেকে যদি বিধিনিষেধ আরোপের কোনো সিদ্ধান্ত আসে তাতে সরকারি-বেসরকারি অফিস সীমিত পরিসরে খুলে দেয়া হবে এটা অনেকটাই নিশ্চিত।
রপ্তানিমুখী শিল্প-কলকারখানা চালুর পর গণপরিবহনও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচলের সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলেও অনেকটা নিশ্চিত ওই কর্মকর্তা।
যদিও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে চলমান লকডাউন আরও ১০ দিন বাড়ানোর সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বিভিন্ন উৎস থেকে করোনা প্রতিরোধী টিকার জোগান নিশ্চিত হওয়ায় সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারের একটু সুবিধা হয়েছে বলে মনে করেন এক কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, ‘সিরাম চুক্তি অনুযায়ী টিকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় সরকার ঝামেলায় পড়েছিল। তবে এখন নানা উৎস থেকে টিকার সংস্থান করতে সরকার সফল হয়েছে। আর টিকা প্রয়োগ হলে করোনার ভয়াবহতা অনেকাংশে কমে আসবে।’
সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, করোনা প্রতিরোধী ২১ কোটি টিকার সংস্থান হয়েছে। দেশের ১৪ কোটি মানুষকে এই টিকা দেয়া যাবে।