‘আইজ কামে না ফিরলে যেই ১১ দিন ছুটি ছিল তা অ্যাবসেন্ট দেখাইয়া বেতন কাইটা নিব, চাকরিও চলে যাইবার পারে। এর লেগে কষ্ট কইরাও ঢাকায় আসছি।
কাল রাইত আটটায় গাড়িত উঠছিলাম, ১৪-১৫ ঘণ্টায় গাবতলী আসছি। তিনগুণ ভাড়া গেছে, লগে কষ্ট তো আছেই।’
কথাগুলো বলছিলেন দিনাজপুরের পার্বতীপুরের পারভীন আক্তার। কাজ করেন নারায়ণগঞ্জের একটি গার্মেন্টসে।
৫ আগস্টের আগে কারখানা খুলবে না এমন ঘোষণায় ঈদের আগে বাড়ি চলে গিয়েছিলেন। হঠাৎ কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত আসায় শনিবার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে রওনা দেন। গাবতলী পৌঁছান রোববার সকালে।
পারভীন বলেন, ‘বড় গাড়ি না পাইয়া লোকাল বাসে উঠছিলাম। গাড়িতে দাঁড়ানোর জায়গা আছিল না। রাস্তায় জ্যামও ছিল অনেক। অন্য সময় ৫০০ টাকা ভাড়া আছিল। আইজকা দেড় হাজার টাকা নিছে কিন্তু বাইপইল নামায়া দিছে। ওইখান থেকে সিএনজি দিয়ে গাবতলী আইছি। এখন নারায়ণগঞ্জ যাইতে হাজার টাকা চায়।’
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দেরিতে এলেও চাকরি নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। তাহলে কেন এমনভাবে ফেরা?
পারভীনের উত্তর, ‘সরকার কি আর কারখানা চালায়? বেতন দেয়ার সময় কমায়ে দিব অ্যাবসেন্ট দেখাইয়া। তখন তো আর কেউ দেখব না। না হলে কী সাধ হইছে এত কষ্ট কইরা, সারা রাত না ঘুমাইয়া ঢাকায় আসতে?
‘রাইতে গাড়িতে যখন উঠি সুপারভাইজার কল দিছে। বলছে, আইজ কারখানায় হাজিরা দেওন লাগবই। চাকরি না থাকলে মা-বাপরে দেকমু কেমনে?’
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ২৩ জুলাই থেকে টানা ১৪ দিন সব ধরনের কলকারখানা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল।
কিন্তু শুক্রবার হঠাৎ জানানো হয়, রোববার থেকে রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা খুলে দেয়া হবে।
যদিও পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান জানান, শ্রমিকদের যারা ১ আগস্ট থেকে কাজে যোগ দিতে পারবে না, তাদের চাকরির কোনো সমস্যা হবে না। এমনকি বেতনও কাটা হবে না।
তবে শ্রমিকদের বক্তব্য, যতই বেতন না কাটার ঘোষণা আসুক, কারখানাগুলো ঠিকই তাদের বেতন কেটে রাখে। আগেও বহুবার এমন হয়েছে। তাই চাকরি বাঁচাতে হেঁটে, ভ্যানে, নৌকায়, ফেরিতে, ট্রাকে নানাভাবে তারা কর্মস্থলে ফিরছেন।
সারা দিন শ্রমিকদের এমন দুর্ভোগের পর শনিবার রাত আটটার দিকে ঘোষণা দেয়া হয়, শ্রমিকদের জন্য রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত বাস ও লঞ্চ চলবে। রাতে দেখা যায়, বাস ও লঞ্চগুলোতে ছিল যাত্রীসংকট।
শ্রমিকদের চাপ কম থাকায় বড় কোম্পানিগুলো তাদের বাস কম ছেড়েছে। লোকাল রুটের বাসগুলোতেই সড়কে বেশি দেখা যায়।
তবে যাত্রীদের অভিযোগ, ভাড়া নেয়া হয়েছে কয়েক গুণ, কিন্তু নামিয়ে দেয়া হয়েছে ঢাকায় প্রবেশের আগেই।
এমন ভোগান্তি নিয়ে ঢাকায় এসেছেন জয়পুরহাটের আব্দুল আজিজ। হঠাৎ অফিস খোলায় স্ত্রী-সন্তান নিয়েই ঢাকায় আসতে হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘অফিস হঠাৎ করে খুলি গেছে, বেকায়দায় আসতে হইল। জয়পুরহাট থেকে বাসে আসলাম। আমিনবাজার ব্রিজের আগে বাস নামায়ে দিছে। আহাদ কোম্পানির বাসে ভাড়া নিছে ১ হাজার ৬০০ টাকা কইরা। আগে ৫০০-৬০০ টাকা ছিল।
‘এখন সাইনবোর্ড যামু ৬০০ টাকা ভাড়ায়। ওইখান থেকে আবার নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া পর্যন্ত কত যে নেয়! আগে ৪০ টাকা ছিল একেক জন।’
তিনি আরও বলেন, ‘১৪ ঘণ্টা লাগলিউ আমি তাও বাসে আইছি। আমগো এলাকার অনেকেই কাইল ট্রাকে আসছে ২ হাজার কইরে। পথে বৃষ্টিতে ভিজছে। দুই দিন আগে বাস খুললে কী হইত?’
পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাস্তায় এখনও যে বাসগুলো আছে তাদের ঢাকায় ঢুকতে বাধা দেয়া হবে না। অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত লঞ্চ চলাচল করবে।