শাটডাউনের মধ্যে রোববার থেকে খুলে দেয়া হয়েছে শিল্পকারখানা। কারখানা খোলার খবরে দুই দিন ধরে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কাজে যোগ দিতে তৈরি পোশাক কারখানার কেন্দ্রস্থল গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে ফিরছেন শ্রমিকরা।
শিল্পকারখানা খোলা নিয়ে সরকার থেকে ঘোষণা আসে শুক্রবার সন্ধ্যায়। পরের দিন থেকে যে যার মতো করে কর্মস্থলমুখী হন শ্রমিকরা। যাত্রাপথে দিনভর ভোগান্তি শেষে শনিবার রাতে সরকার থেকে জানানো হয়, শ্রমিকদের বহনে সাময়িকভাবে চালু হবে লঞ্চ ও বাস।
এসব গণপরিবহন শুরুতে বন্ধ থাকায় মাত্রাতিরিক্ত ভোগান্তি পোহাতে হয় শ্রমিকদের। যাত্রাপথের ক্লান্তি শেষ না হতেই রোববার সকালে তাদের যোগ দিতে হয় কাজে।
রোববার সকালে গাজীপুরের বিসিক এলাকার বিভিন্ন পোশাক কারখানা ঘুরে দেখা যায়, দীর্ঘ ভোগান্তি শেষে একরাশ ক্লান্তি নিয়ে কাজে যোগ দিয়েছেন শ্রমিকরা। যানজটের কারণে অনেকের বাসায়ও যাওয়া হয়নি, সরাসরি চলে যেতে হয়েছে কর্মস্থলে। ক্লান্তি থাকলেও লম্বা সময় পর চাকরিতে যোগ দিতে পারার তৃপ্তির কথাও জানালেন অনেকে।
টঙ্গীর বোর্ড বাজার এলাকায় পিনাকি গ্রুপের মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা মিজানুর রহমান। শনিবার রাত ৮টায় কুষ্টিয়া থেকে গাজীপুরের উদ্দেশে রওনা দেন। রোববার সকাল ১০টায় কারখানায় পৌঁছান।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ ভোগান্তি শেষে ক্লান্ত শরীর নিয়ে কারখানায় যোগ দিয়েছি। কাজ করার মতো শক্তি নেই। তাই ছুটি নিয়ে বাসায় চলে যাচ্ছি।’
পোশাকশ্রমিক সালাউদ্দিন বলেন, ‘সকাল ৮টা থেকে অফিস করার কথা। কিন্তু পাটুরিয়া ফেরিঘাটে আটকে থাকার কারণে কর্মস্থলে পৌঁছাতে তিন ঘণ্টা দেরি হয়েছে। সারা রাত নির্ঘুম কাটিয়ে কাজে যোগ দিতে হয়েছে।’
টঙ্গীর হা-মীম গ্রুপের পোশাকশ্রমিক আল-আমিন হোসেন কাজে যোগ দিতে শনিবার সন্ধ্যায় ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থেকে রওনা হয়েছিলেন। গাজীপুর পৌঁছান রাত ২টায়। পর্যাপ্ত ঘুম হওয়ার আগেই তাকে ছুটতে হয়েছে কর্মস্থলে।
আল-আমিন বলেন, ‘মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যানজট রয়েছে। বাস থাকলেও তাতে আসন নেই। তাই আঞ্চলিক সড়ক দিয়ে মোটরসাইকেল ও অটোরিকশায় অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে টঙ্গী পৌঁছাতে হয়েছে। ৬০০ টাকায় মোটরসাইকেলে করে রাজেন্দ্রপুর পর্যন্ত আসি। পরে ৪০০ টাকায় অটোরিকশায় করে টঙ্গী আসি।’
‘কী করব ভাই, চাকরি তো বাঁচাতে হবে’- যোগ করেন আল আমিন।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন দিলারা বেগম। কাজে যোগ দিতে শনিবার রাতে সিরাজগঞ্জ থেকে রওনা হন তিনি। সকাল ৮টায় ভোগরা বাইপাস এলাকায় যানজটে আটকে থাকার সময় কথা হয় তার সঙ্গে।
দিলারা বলেন, ‘রাতে বাসে আসন না পেয়ে ট্রাকে করে রওনা হয়েছি। বঙ্গবন্ধু সেতু ও চন্দ্রা ফ্লাইওভারে যানজটে আটকে ছিলাম। সময়মতো কাজে যোগ দিতে না পারায় চাকরিটা হয়তো হারাতে হবে।’
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে কারখানাগুলোতে বেশ সচেতনতা দেখা গেছে। কারখানায় প্রবেশের সময় হ্যান্ড স্যানিটাইজার মেখে ও শরীরের তাপমাত্রা মেপে প্রবেশ করানো হয় শ্রমিকদের।
তবে কারখানার শ্রমিকদের আনা-নেয়ার জন্য নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থার কথা থাকলেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে নেই সে ব্যবস্থা। তাই পোশাক কারখানা খুলে দেয়ার প্রথম দিনে অনেকেই কারখানায় যোগ দিতে পারেননি।