রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানা খোলার সিদ্ধান্তের পর দিনভর হেঁটে, বাসে, ট্রাকে ভেঙে ভেঙে কর্মস্থলে শ্রমিকরা ফিরলেও রাতে বাস চালুর সিদ্ধান্তের পর চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলায় স্ট্যান্ডগুলো ছিল যাত্রীশূন্য। যাত্রী না থাকায় বরিশাল থেকে ছাড়েনি কোনো লঞ্চ। বাস কাউন্টারগুলো ছিল ফাঁকা।
৫ আগস্ট পর্যন্ত কঠোর লকডাউনের ঘোষণা থাকলেও ৩০ জুলাই ঘোষণা আসে ১ আগস্ট থেকে খোলা হবে রপ্তানিমুখী সব শিল্প কারখানা। সেই ঘোষণার পর ঈদে বাড়ি ফেরা হাজারও শ্রমিক শনিবার সকাল থেকে কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেন।
তবে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ভোগান্তি চরমে পৌঁছে এসব মানুষের। পরিবার-পরিজন নিয়ে ভেঙে ভেঙে কখনও বাস, কখনও ট্রাক আবার কেউ কাভার্ডভ্যানে করে বাড়তি পয়সা দিয়ে কর্মস্থলে ফেরেন।
শনিবার রাত ৮টার দিকে ঘোষণা আসে ১ জুলাই দুপুর ১২টা পর্যন্ত লঞ্চ চলাচল করবে। কিন্তু চাকরি বাঁচানোর তাগিদে এর আগেই বিভিন্ন উপায়ে লোকজন কর্মস্থলের দিকে ছুটতে থাকেন। তাই বরিশাল থেকে রাতে ছেড়ে আসেনি কোনো লঞ্চ।
এর কিছু সময় পর আসে বাস চলাচলের সিদ্ধান্ত। ততক্ষণে ক্লান্ত শ্রান্ত শ্রমিকেরা কর্মস্থলে ফেরেন। যারা শিশুদের নিয়ে ফিরেছেন, তাদের সহ্য করতে হয়েছে অবর্ণনীয় কষ্ট।
কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। তাদের প্রশ্ন শ্রমিকদের আসার ব্যবস্থা না করে কারখানা খুলে দেয়ার কী মানে?
সিলেটের কাউন্টারগুলো বন্ধরপ্তানিমুখী শিল্প কারখানার শ্রমিকদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বাস চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে শনিবার রাতে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি।রাতে সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে দেখা যায়, টার্মিনাল একেবারে ফাঁকা। কোনো যাত্রী নেই। কাউন্টারগুলোও বন্ধ।বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সহসভাপতি ও জেলা বাস মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি সেলিম আহমদ ফলিক বলেন, ‘গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য বাস চলাচল চালু হলেও সিলেটে তেমন শ্রমিক নেই। ফলে আমরা কোনো যাত্রী পাচ্ছি না। এ কারণে আজ সিলেট থেকে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি।সিলেট পরিবহন শ্রমিক মালিক সমিতির সহসভাপতি আবুল কালাম বলেন, ‘শাটডাউনের কারণে সিলেট থেকে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। আজ বাস চলাচল চালু হলেও যাত্রী না পাওয়ায় সিলেটের কাউন্টারগুলো বন্ধ রয়েছে। বিচ্ছিন্নভাবে দুই-একটি বাস ছাড়তে পারে। তবে বেশিরভাগ কাউন্টারই বন্ধ রয়েছে।
রংপুরে দিনে যাত্রী, রাতে ফাঁকা
পোশাক কারখানা খোলার খবরে ঢাকা অভিমুখে রংপুরে দিনভর যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় থাকলেও, রাতে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। টার্মিনালগুলো অনেকটাই ফাঁকা, নেই বাস স্টাফদের হাঁকডাক।
তবে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁওসহ বিভাগের অন্য জেলা থেকে রংপুরের ওপর দিয়ে যেসব দূরপাল্লার বাস, ট্রাক ও পিকআপ ঢাকা অভিমুখে যাচ্ছে তাতে যাত্রী বোঝাই রয়েছে। কিছুটা যানজট দেখা গেছে রংপুরের মডার্ন মোড়ে।
রংপুর ঢাকা কোচ স্ট্যান্ডে দেখা গেছে, সেখানে যাত্রী নেই বললেই চলে।
হৃদয় ইমন নামের এক বাস কাউন্টার মাস্টার জানান, সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত যাত্রীদের চাপ ছিল। এই স্ট্যান্ড থেকে ২২টি গাড়ি ছেড়ে গেছে। এখন কোনো চাপ নেই। কাল হয়তো হতে পারে।
শ্যামলীর কাউন্টার মাস্টার বুলু মিয়া জানান, শুনলাম ২৪ ঘন্টার জন্য বাস চালু হয়েছে। যদি যাত্রী হয় তাহলে আমাদের বাস ঢাকায় যাবে।
মডার্ন মোড়ের পরিবহন শ্রমিক ফজলু জানান, দিনে যাত্রীর খুব চাপ ছিল। এখন কমে গেছে। তবে রংপুরের বাইরের গাড়িতে যাত্রী বোঝাই রয়েছে। গাড়িরও চাপ রয়েছে।
সাগর হোসেন নামের এক যাত্রী বলেন, ‘আমরা কুড়িগ্রামের চিলমারী থেকে আসছি। ভাড়া নিয়েছে ২ হাজার টাকা। চাকরি তো বাঁচান লাগবে। টাকা বেশি নিলে কী করবো?’
হারুন নামের আরেক যাত্রী জানান, বাসে যাচ্ছি। কিন্তু ভাড়া ১২০০ টাকা। তবুও যাচ্ছি। দেখা যাক কি হয়।
মধ্যরাত পর্যন্ত কোনো বাস ঢোকেনি চট্টগ্রামে
চলমান শাটডাউনে রপ্তানিমুখী কারখানার শ্রমিকদের কর্মস্থলে ফেরার সুবিধার্থে বাস চলাচলের অনুমতি দিলেও শনিবার মধ্যরাত পর্যন্ত কোনো বাস ঢোকেনি চট্টগ্রামে। তবে বাস চলাচলের অনুমতির খবরে রাতেই বিভিন্ন জেলা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে কিছু বাস যাত্রা করেছে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপ।
বাস মালিক গ্রুপের অভিযোগ, সিদ্ধান্তে গড়িমসির কারণে হযবরল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সন্ধ্যার পর বাস চলাচলের সরকারি নির্দেশনা থাকলেও, রাত ১০টা পর্যন্ত এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারেননি প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।
চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের যুগ্ন সম্পাদক মোহাম্মদ শাহজাহান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রোববার গার্মেন্টস খোলা, তাই সারাদিন চরম ভোগান্তি সহ্য করে যাত্রীরা বিভিন্ন এলাকা থেকে চট্টগ্রাম শহরে এসেছেন। কিন্তু বাস চলাচলের অনুমতি দিল সন্ধ্যায়। তাও আবার রাত ১০টা পর্যন্ত প্রশাসনের কেউ স্পষ্টভাবে কোনো তথ্য দিতে পারেনি। আমরা চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, কেউ আমাদের নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেন নি৷
‘আমরা যদি নিশ্চিত না হয়ে স্টাফদের বাস চলাচলের নির্দেশনা দেই, তখন পুলিশ যদি গাড়ি আটকে দেয়? তাই আমরা নিশ্চিত হওয়ার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। রাত ১০টার পর বাস চলাচলের অনুমতির কথা নিশ্চিত হওয়া গেছে। ততক্ষণে সব স্টাফ বাসায় চলে গেছে। সব মিলিয়ে হযবরল একটা অবস্থা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অনুমতি পাওয়ার পর বাস চলানোর নির্দেশনা দিয়েছি স্টাফদের। তবে চট্টগ্রাম থেকে বাইরে যাওয়ার যাত্রী এখন খুব কম। দুই-একটি বাস শহর ছেড়েছে। কিন্তু বিভিন্ন জেলা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে বাস যাত্রা করলেও এখনো কোনো বাস এসে পৌঁছায়নি। আর খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও কক্সবাজারের মতো কাছের জেলাগুলোতে ভোর থেকে বাস চলবে।’
মধ্যরাতে সিএনজি অটোরিকশায় চট্টগ্রাম শহরে আসা খালেদ নামের এক যাত্রী বলেন, ‘সন্ধ্যায় বাস চলাচলের খবর পেয়ে বাসা থেকে বের হয়েছিলাম। কিন্তু স্টেশনে এসে দেখি কোনো বাস নেই। ঘন্টা দুয়েক অপেক্ষা করার পর বাস না পেয়ে সিএনজি অটোরিকশায় তিনগুণ ভাড়া দিয়ে ভেঙে ভেঙে আসছি।’
রাতে ঘোষণার কারণে রাজশাহীতে যাত্রী নেই
চলমান কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে শ্রমিকদের ঢাকায় ফেরার সুবিধার্থে বাস ও লঞ্চ চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়েছে এমন খবর প্রচারের পর রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী বাস কাউন্টারগুলোতে আসতে শুরু করেন যাত্রীরা। বেশ কিছু যাত্রী নিয়ে রাতেই কয়েকটি বাস ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। তবে কাউন্টারগুলোতে বাড়তি ভিড় দেখা যায়নি।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাতে ঘোষণার কারণে যাত্রীরা আসতে পারছে না। তবে রোববার সকালে বাড়তি চাপ হবে বলে জানান তারা। এজন্য বাড়তি প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছে।