রপ্তানিমুখী কারখানা রোববার খুলে দেয়ার ঘোষণার পর চাকরি বাঁচাতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকামুখী হাজারো শ্রমিক। শনিবার দিনভর এমন ভোগান্তি শেষে রাতে সরকারের পক্ষ থেকে এক দিনের জন্য বাস চালুর ঘোষণা এসেছে।
রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করে তথ্য অধিদপ্তর। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রপ্তানিমুখী শিল্পের শ্রমিক ও সংশ্লিষ্টদের কাজে যোগদানের সুবিধার্থে এখন থেকে আগামীকাল (রোববার) দুপুর ১২টা পর্যন্ত গণপরিবহন চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বাস চালুর বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সম্পাদক খন্দকার এনায়েতুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘কালকের জন্য বাস চলবে।’
কতক্ষণ বাস চলবে- এমন প্রশ্নে এনায়েতুল্লাহ বলেন, ‘সম্ভবত সারা দিন।’
বাস চালু হবে কি না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেগে যান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি সংসদ সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গা।
বাস চলাচলের বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা বা ইঙ্গিত আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, আমরা কোনো ইঙ্গিত পাইনি।’
এমন কোনো পরিকল্পনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির এই নেতা বলেন, ‘আমরা লিখে জানিয়েছিলাম গভর্নমেন্টকে।’
অভিযোগের সুরে রাঙ্গা বলেন, ‘করোনা গাড়িতেই হয় বেশি। আপনারা লেখেন বেশি। এ কারণেই তো হচ্ছে। আজব দেশের আজব কাণ্ড সব। লঞ্চ চলবে, গার্মেন্টস খোলা থাকবে আর মানুষ তো হাওয়া দিয়ে প্লেনে করে উড়ে উড়ে আসবে।
‘আমাদের কী এমন ঠেকা যে হাত-পা ধরে সরকারকে বলতে হবে। মানুষের করোনা হলে দোষ আমাদের হবে। আজব দেশ! লঞ্চ চলতেছে, সবই চলতেছে কিন্তু তারা কীভাবে যাবে, সেটার কোনো ঠিক নাই। গ্রামে যারা গেছে কীভাবে আসবে।’
রাঙ্গা বলেন, ‘বাসমালিকেরা রাস্তায় বসে যাবে। এটা সরকারের কিছুসংখ্যক লোকের চিন্তাভাবনা।’
পোশাক রপ্তানিকারক ও মালিক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যে বাসগুলো পোশাকশ্রমিকদের নিয়ে ঢাকায় আসবে, সেগুলো যেন পথে না আটকানো হয়। এ জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মৌখিকভাবে বিষয়টি জানানো হয়েছে।’
বাস চালুর ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) থেকে জানানো হয়, শনিবার রাত থেকে রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিভিন্ন রুটে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল করতে পারবে।
তবে রেল চালু হবে কি না, এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশে এখন ঈদুল আজহা-পরবর্তী ১৪ দিনের কঠোর লকডাউন চলছে, যা পরিচিতি পেয়েছে শাটডাউন নামে।
শাটডাউনের প্রজ্ঞাপনে সড়ক, রেল ও নৌপথে গণপরিবহন (অভ্যন্তরীণ বিমানসহ) ও সব যানবাহন চলাচল বন্ধ করা হয়।
এর মধ্যে ব্যবসায়ীদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার থেকে গার্মেন্টসসহ সব ধরনের শিল্পকারখানা খুলে দেয়ার ঘোষণা দেয় সরকার।
এ ঘোষণার পর শনিবার ভোর থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দল বেঁধে শ্রমিকরা ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন। মহামারি নিয়ন্ত্রণের লকডাউনের মধ্যে কারখানা খুলে দেয়ায় কর্মস্থলে ফিরতে বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হচ্ছে শ্রমিকদের।
পথের দুর্ভোগ নিয়ে শনিবার ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরমুখী পোশাকশ্রমিকরা বলেছেন, একে চাকরি হারানোর ভয়, অন্যদিকে পথে কিছু নেই। তাদের বিপদ দুই দিকেই।
বাংলাদেশে রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এই শিল্প মূলত ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরকেন্দ্রিক হলেও প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক ছড়িয়ে আছে সারা দেশে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হওয়ায় ঈদের পর যে লকডাউন শুরু হয়েছে, তাতে সব শিল্পকারখানাও ৫ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বলে সরকারই জানিয়েছিল।
ফলে যেসব শ্রমিক ঈদের ছুটি নিয়ে বাড়ি গিয়েছিলেন, তারা ধরেই নিয়েছিলেন, লকডাউনে আর ফিরতে হচ্ছে না তাদের।
তবে ব্যবসায়ীদের বারবার অনুরোধে শুক্রবার সরকার জানায়, রপ্তানিমুখী কারখানা রোববার থেকে লকডাউনের আওতামুক্ত। অর্থাৎ রোববার থেকে পোশাক কারখানা খোলা।