বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘একটা গাড়ি আইন্না দেন’

  •    
  • ৩১ জুলাই, ২০২১ ২১:৩৮

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শাটডাউন নামে পরিচিতি পাওয়া কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে হঠাৎ করে রোববার পোশাক কারখানাসহ রপ্তানিমুখী সব শিল্প প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ায় সিদ্ধান্তে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন শ্রমিকরা।

সাভারের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক কুমিল্লার আলেয়া বেগম। রোববার থেকে তার কারখানা খোলা। তাই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে রাজধানীতে ফিরছিলেন। তার সঙ্গে ছিল আড়াই বছরের ছেলে ও কিশোরী এক মেয়ে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল এলাকা পর্যন্ত এসেছেন ট্রাক ও ইজিবাইকে।সেখান থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার হেঁটে এসেছেন সাইনবোর্ড পর্যন্ত। তখন শুরু হয় বৃষ্টি।

কোলে ছোট ছেলে, মেয়ের হাতে বড় দুটি ব্যাগ। আধঘণ্টার বৃষ্টিতে পুরোপুরি ভিজে গেছেন তারা। বৃষ্টি থামার পর সাইনবোর্ড এলাকায় সামনে যাকে দেখছেন তাকেই বলছেন ‘ভাই একটা গাড়ি আইন্না দেন।‘

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শাটডাউন নামে পরিচিতি পাওয়া কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে হঠাৎ করে রোববার পোশাক কারখানাসহ রপ্তানিমুখী সব শিল্প প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ায় সিদ্ধান্তে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন শ্রমিকরা।

শনিবার ভোর থেকে ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, সিএনজি, ইজিবাইক, রিকশা এমনি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নিয়ে ঢাকায় আসতে চাইছেন অনেকে। পথে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইলে নামিয়ে দেয়া হয় শ্রমিকদের। সেখান থেকে হেঁটে সাইনবোর্ড হয়ে ঢাকার পথে যান অনেকে। তাদের বড় একটি অংশের গন্তব্য শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জ।

সড়কের মধ্যেই দুই সন্তানকে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া আলেয়া বেগম বলেন, ‘না আইসা কি করমো, স্বামী নাই গ্রামে কে খাওন দিব। আমার মেয়ে, ছেলেটারে রাখে, আমি গার্মেন্সে কাম করি। যা পাই তাই দিয়া চলি। ঈদের আগে যা টাকা বেতন পাইছি তা গ্রামে শেষ। আজ সাভার যাওয়ার জন্য প্রতিবেশীর কাছ থেকে এক হাজার টাকা ধার নিয়া আইছি।’

তার মতো হাজারও মানুষ আজ বিপাকে পড়েছেন সড়কে। যানবাহন না থাকায় পথে পথে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। বেশিরভাগ পোশাক শ্রমিকদের অভিযোগ, সড়কে যে সব যান চলাচল করছে তারা চারগুণ ভাড়া নিচ্ছে।

ফরিদপুর থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার বিসিক শিল্প নগরীতে যাচ্ছেন সোহাম মিয়া। সেখানে একটি মেসে থেকে বিসিকের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। গতকাল কারখানা খোলার খবর পেয়ে ভোর রাতে রওনা হয়েছেন হারুকান্দি থেকে।

সোহাগ বলেন, ‘রাস্তায় যানবাহন নাই। ইজিবাইকে ৩০ টাকার ভাড়া ১০০ টাকা। পোশাক কারখানা খোলা হইল, কিন্তু কেমনে আসমো তার ব্যবস্থা করল না। আবার কারখানায় না গেলে চাকরি থাকব না।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর অনেকগুলো ইজিবাইকে উঠছি। তারপর মুন্সিগঞ্জের মাওয়া পর্যন্ত আসার পর সেখানে ফেরিতে উঠি। ফেরিতে অনেক ভিড়, বহু কষ্ট করে পার হয়েছি। সেখান থেকে আবার ইজিবাইকে করে সাইনবোর্ড। সেখান থেকে ফতুল্লার বিসিকে ফিরমো।’

সাইবোর্ড এলাকায় রহমান মিয়া নামের আরেক পোশাক কারখানার শ্রমিক অভিযোগ করেন, কুমিল্লা থেকে ভাড়া সাড়ে ৩০০ টাকা। সেই ভাড়া এখন দিতে হচ্ছে ১৫০০ টাকা। রাস্তায় পুলিশ চেকপোস্ট নজরদারি করছে, কিন্তু পোশাক কারখানার কথা কইলে আসতে দিতাছে।

তার মতো অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে গাজীপুর থেকে নারায়ণগঞ্জে এসেছেন নুসরাত জাহান। যানবাহন না পেয়ে অনেকক্ষণ তাকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘রাস্তায় এত ভোগান্তি আগে জানলে আসতাম না। চাকরি গেলে যাক। গাড়ি নাই, যা পাওয়া যায় তাতে ভাড়া বেশি, আবার পুলিশ ধরে।’

হাইওয়ে পুলিশের সহকারী সুপার অমৃত সূত্র ধর নিউজবাংলাকে জানান, আমরা সরকারি নির্দেশনা মেনে কাজ করছি। কলকারখানা ও রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানার শ্রমিকরা সকাল থেকে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের দিকে যাচ্ছেন। আমরা তাদের বাধা দিচ্ছি না বরং সহযোগিতা করছি।

এ বিভাগের আরো খবর