দিনভর শ্রমিকদের ঢাকামুখী স্রোত ও ভোগান্তির পর বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ঘোষণা দিয়েছে, শনিবার রাত থেকে রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিভিন্ন রুটে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল করতে পারবে।
শনিবার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিআইডব্লিউটিএর জনসংযোগ কর্মকর্তা মোবারক হোসেন মজুমদার।
এর আগে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সর্বশেষ প্রজ্ঞাপনে সড়ক, রেল ও নৌপথে গণপরিবহন (অভ্যন্তরীণ বিমানসহ) ও সব যানবাহন চলাচল বন্ধ করা হয়।
রোববার থেকে পোশাক কারখানা খোলার ঘোষণায় শনিবার ভোর থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দল বেঁধে শ্রমিকরা ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন। মহামারি নিয়ন্ত্রণের লকডাউনের মধ্যে কারখানা খুলে দেয়ায় কর্মস্থলে ফিরতে বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হচ্ছে পোশাককর্মীদের।
পথের দুর্ভোগ নিয়ে শনিবার ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরমুখী এসব পোশাককর্মী বলছেন, একে চাকরি হারানোর ভয়, অন্যদিকে পথে কিছু নেই। তাদের বিপদ দুই দিকেই।
বাংলাদেশে রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এই শিল্প মূলত ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরকেন্দ্রিক হলেও প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক ছড়িয়ে আছে সারা দেশে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হওয়ায় ঈদের পর যে লকডাউন শুরু হয়েছে, তাতে সব শিল্প কারখানাও ৫ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বলে সরকারই জানিয়েছিল।
ফলে যেসব শ্রমিক ঈদের ছুটি নিয়ে বাড়ি গিয়েছিলেন, তারা ধরেই নিয়েছিলেন, লকডাউনে আর ফিরতে হচ্ছে না তাদের।
কিন্তু ব্যবসায়ীদের বারবার অনুরোধে শুক্রবার সরকার জানায়, রপ্তানিমুখী কারখানা রোববার থেকে লকডাউনের আওতামুক্ত। অর্থাৎ রোববার থেকে পোশাক কারখানা খোলা।
এই সিদ্ধান্ত জানার পর শনিবার সকাল থেকে বিভিন্ন জেলা থেকে পোশাককর্মীরা ঢাকায় রওনা হন, যদিও গণপরিবহন বন্ধ থাকায় কোনো বাস নেই সড়কে।
গার্মেন্টস খোলার খবরে রাজধানীমুখী শত শত শ্রমিক বরিশাল বাস টার্মিনাল এলাকায় শনিবার সকাল থেকে জড়ো হয়েছেন। ছবি: তন্ময় তপু/নিউজবাংলা
পদ্মাপাড়ে মাদারীপুরের বাংলাবাজার ফেরিঘাটে সকাল থেকেই ভিড় ছিল।
গণপরিবহন বন্ধ থাকায় তিন চাকার বিভিন্ন গাড়ি ও মোটরসাইকেলে করে অনেককে রাজধানীর সদরঘাটে আসতে দেখা যায়। সেখান থেকে ফেরিতে উঠছিলেন তারা।সরকারের দেয়া লকডাউনের মধ্যেই ঢাকায় ফেরা শ্রমিকদের দুর্ভোগের চিত্র ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
এমন পরিস্থিতিতে শনিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানায়, শুধু ঢাকার আশপাশের শ্রমিক দিয়েই কারখানা চালাতে পারবেন মালিকরা। সমালোচনার মুখে এদিন সন্ধ্যায় পোশাকশিল্পের মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ জানায়, লকডাউন পুরোপুরি শেষ হওয়া পর্যন্ত গ্রামে থাকা শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে না।