বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পণ্যের গাড়ি আনছে শ্রমিক

  •    
  • ৩১ জুলাই, ২০২১ ১৪:০১

নারায়ণগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের ওসি জানালেন, পণ্যবাহী যানে আসা শ্রমিকদের চেকপোস্টে থামানো হচ্ছে। তবে রিজার্ভ গাড়ি নিয়ে আসা শ্রমিকদের যেতে দেয়া হয়েছে। কারখানা খুলেছে, কাজে যোগ দেবেন বলে তাদের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বিসিক শিল্পনগরীর একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক মোমিনুল ইসলাম। ঈদের দুই দিন আগে গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে গিয়েছিলেন।

রোববার থেকে কারখানা খোলা বলে শনিবার ভোরে রওনা দিয়ে তিনি নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় পৌঁছেছেন। সেখানে তার সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার প্রতিবেদকের।

মোমিনুল বলেন, ‘পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে গিয়েছিলাম। কাল থেকে কারখানা খোলা, তাই অনেক কষ্ট হলেও ফিরে আসতে হয়েছে।

কীভাবে এসেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ময়মনসিংহ বাইপাস পর্যন্ত সিএনজি অটোরিকশায় করে, তারপর সেখান থেকে হায়েস মাইক্রোবাসে ৬০০ টাকায় ১২ জন উঠে গাজীপুরে। সেখান থেকে নারায়ণগঞ্জ-গাজীপুর এশিয়ান হাইওয়ে সড়ক দিয়া মদনপুর। এরপর ইজিবাইকে কাঁচপুর, সেখান থেকে সাইনবোর্ড।’

শাটডাউন নামে পরিচিত পাওয়া কঠোর বিধিনিষেধের মেয়াদ শেষ ৫ আগস্ট। এর ছয় দিন আগে শুক্রবার ঘোষণা এলো, ১ আগস্ট (রোবাবার) থেকে খোলা থাকবে রপ্তানিমুখী শিল্প ও কলকারখানা। ঘোষণার পর পরই শ্রমিক-কর্মচারীরা যে যেভাবে পারছেন ঢাকা ফিরছেন।

একদিকে গণপরিবহন বন্ধ, অন্যদিকে হুট করে আসা এই ঘোষণায় মোমিনুলের মতো দুর্ভোগ সয়ে ঢাকা ফিরছেন তারা।

নারায়ণগঞ্জের সড়ক ও মহাসড়কে শনিবার সকালে ঘুরে দেখা গেছে, সাইনবোর্ড, শিমরাইল ও মদনপুর পর্যন্ত বিভিন্ন যানবাহনে করে আসছে পোশাক ও বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা। সেখানে থেকে ইজিবাইক, অটোরিকশা ও রিকশা নিয়ে ছোট পথ ধরে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার দিতে ছুটছেন তারা।

নারায়ণগঞ্জ-গাজীপুর এশিয়ান হাইওয়ে সড়ক হয়ে মদনপুরের দিকে যেতে দেখা গেছে অনেককে। উত্তর অঞ্চলের বিভিন্ন জেলার মানুষ এ পথে বেছে নিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ নগরীর শিল্পাঞ্চলের দিকে যেতে।

ফতুল্লার বিসিক শিল্পনগরী যেতে অনেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কও ধরেছেন। এ রাস্তার পঞ্চবটিতে পুলিশের চেকপোস্ট থাকায় আগেই নেমে পড়ছেন অনেকে। হেঁটে চেকপোস্ট পার হয়ে আবার রিকশা ও ইজিবাইকে চড়ছেন।

তবে নারায়ণগঞ্জ নগরী হয়ে যারা শিল্পাঞ্চলের দিছে ছুটছেন, তাদের পড়তে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারিতে। পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব সদস্যরাও তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। যারা কারখানার শ্রমিক, তাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।

নগরীর টানবাজার এলাকার একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক রমজান মিয়া। তিনি এসেছেন কুমিল্লার গোয়ালমারি এলাকা থেকে। যাবেন বন্দরের কলাগাছিয়ায়, ভাড়া বাসায়।

রমজান বলেন, ‘কাল থেকে ডিউটি শুরু। তাই কারখানায় যেতে হবে। এ কারণে চলে আইছি। বাড়ি থেকে ইজিবাইকে, তারপর পিকআপ ভ্যান, এরপর রিকশা নিয়ে মদনপুর পর্যন্ত আইছি। সেখান থেকে ইজিবাইকে করে বন্দরের বাড়ি যামো।’

ব্যাগ ও বস্তা হাতে হাঁটতে থাকা ক্লান্ত শ্রমিক কুলসুম বেগম বলেন, ‘কারখানা খুলছে তাইলে গাড়ি দিল না কেন। অনেক টাকা খরচ হইছে নারায়ণগঞ্জে আসতে।’

দুইটি মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের অংশের দায়িত্বে থাকা কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সকাল থেকে ফিরছেন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। তারা ছোট যানে করে নারায়ণগঞ্জের সড়ক আসছেন। শিল্পনগরীতে যাচ্ছেন ইজিবাইকে করে।

‘যারা ট্রাক কিংবা অন্যান্য পণ্যবাহী যানবাহনে করে আসছেন, তাদের মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে থাকা চেকপোস্টে থামানো হচ্ছে। তবে যদি তাদের রিজার্ভ গাড়ি ও যানবাহনের সামনে ব্যানার থাকে, সে ক্ষেত্রে আমরা ছাড় দিচ্ছি। কারণ কাল থেকে পোশাক কারখানা খোলা। তাদেরও তো কারখানায় যেতে হবে।’

কারখানার শ্রমিকদের ঢল গাজীপুরের দুই মহাসড়কেও।

ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহসাড়কে শনিবার সকাল থেকে হেঁটে, রিকশা ভ্যানে, মোটরসাইকেলে, পিকআপ ও ট্রাকে করে ফিরতে দেখা গেছে তাদের।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি চোখে পড়েনি এই সড়কগুলোতে। চেকপোস্টগুলোও সকালে ছিল ফাঁকা।

মাওনা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন বলেন, ‘শনিবার সকাল থেকে মহাসড়কে প্রচুর ভিড়। বেশির ভাগ যাত্রী হেঁটে ও রিকশায় চলাচল করছেন। আমরা তাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সচেতনামূলক মাইকিং করছি।’

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রার ত্রিমোড়, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের জৈনাবাজার, মাওনা চৌরাস্তা, চান্দনা চৌরাস্তা, ভোগরা বাইপাস ও টঙ্গী এলাকা ঘুরে শ্রমিকদের দুর্ভোগের চিত্র দেখা গেছে।

টঙ্গীর নোমান গ্রুপের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মো. রুবেল। কারখানা খোলার খবরে রাতে গাইবান্ধা থেকে ট্রাকে চড়ে রওনা হয়েছেন গাজীপুরের উদ্দেশে।

সকালে ট্রাক থেকে নেমে বলেন, ‘এই চাকরিটা করেই সংসার চালাতে হয়। সড়কে কোনো গণপরিবহন নাই, তাই চাকরি বাঁচাতে বাধ্য হয়ে ট্রাকে চড়ে ঝুঁকি নিয়ে এসেছি। আসতে খুব কষ্ট হয়েছে।’

পাবনা থেকে মাইক্রোবাসে ৮০০ টাকা ভাড়ায় চান্দনা চৌরাস্তায় এসেছেন পোশাকশ্রমিক লিয়াকত হোসেন। তিনি বলেন, ‘মাস্কো গ্রুপে চাকরি করি। কারখানা খোলার ঘোষণা শোনার পর ভোররাতেই রওনা দিয়েছি।’

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘কারখানা খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তে সড়কে মানুষের চাপ বেড়েছে কয়েক গুণ। মেট্রোপলিটন এলাকার চেকপোস্টগুলোতে হেঁটে কাউকে চলাচলে বাধা দেয়া হচ্ছে না।

‘তবে ঝুঁকি নিয়ে ট্রাক-পিকআপে যাত্রী পরিবহন করতে দেয়া হচ্ছে না।’

এ বিভাগের আরো খবর