বিদেশি ক্রেতাদের কার্যাদেশ শেষ করতে কলকারখানার আশপাশের শ্রমিকদের নিয়ে কাজ শুরুর শর্তে রোববার থেকে রপ্তানিমুখী শিল্প খুলে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়া শ্রমিকদের চাকরি হারানো বা ছাঁটাই হওয়ার কোনো ভয় নেই বলেও জানিয়েছেন তিনি। শ্রমিকদের আতঙ্কিত হয়ে ঢাকামুখী না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি বলেছেন, ৫ আগস্টের পর পর্যায়ক্রমে তাদের কাজে যোগ দেয়ার সুযোগ দেয়া হবে।
গণমাধ্যমের কাছে শনিবার ফোনালাপে এসব কথা জানিয়েছেন তিনি।
ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের রপ্তানিমুখী যে শিল্প কলকারখানাগুলো আছে, সেগুলো আগামীকাল থেকে খুলে দেয়া এবং যেসব শ্রমিক শুধুমাত্র ঢাকাতে আছে, ঢাকায় আছে বলতে কারখানার আশেপাশে যারা আছে, ঈদের পরদিন যারা ফিরে এসেছে, বা ঈদে যায়নি বাড়ি তাদেরকে নিয়েই তারা কাজগুলো করবে ৫ তারিখ পর্যন্ত।’
যদিও ৫ আগস্টের পর শাটডাউন নামে পরিচিত পাওয়া কঠোর বিধিনিষেধ নিয়ে সরকারের চিন্তা-ভাবনা কী তা স্পষ্ট করেননি জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে আমরা সিদ্ধান্ত নেব পরিস্থিতি বিবেচনা করে ৫ তারিখের পর কী হবে। ৩-৪ তারিখে আমরা জানিয়ে দেব, আমরা কী করতে যাচ্ছি। কী পরিসরে খুলবে অথবা কী হবে- সে বিষয়ে আমরা এখনও কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত জানাবেন। সে পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
কল-কারখানা খোলার ঘোষণার পর থেকে ফেরিঘাটগুলোতে ঢাকামুখী মানুষের চাপ বেড়েছে। ভিড় করা মানুষের মধ্যে পোশাক শ্রমিকদের সংখ্যাই বেশি। আবার শুক্রবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দেয়া প্রজ্ঞাপনেও ঢাকার মধ্যে থাকা বা কল-কারখানার আশেপাশের শ্রমিকদের নিয়ে কাজ শুরু করার বিষয়ে কোনো কিছু উল্লেখ ছিল না।
বিষয়টি প্রতিমন্ত্রীর নজরে আনা হলে তিনি বলেন, ‘তাদের (বিজিএমইএ) সঙ্গে যখন আমাদের মিটিং হয়েছে, তখনও তারা কথা দিয়েছে যে, যারা ঢাকায় আছে শুধু তাদেরকে দিয়ে তারা কর্মকাণ্ড শুরু করবে। কেউ চাকরি হারাবে না।
‘৫ তারিখের পর পর্যায়ক্রমে তারা তাদেরকে নিয়ে আসবে। সেটাও একবারে না, পর্যায়ক্রমে। কারও কোনো ছাঁটাই বা এ ধরনের কোনো আশংকা নেই।’
তবে ফেরিঘাটে শ্রমিকদের ভিড়ের জন্য মালিকপক্ষকে দোষারোপ করছেন না জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এরা (শ্রমিকরা) নিজেরা সবসময় এরকম করে, চাকরি হারানো, ছাঁটাই হওয়ার ভয়ে। আমার মনে হয়, এখান থেকে তারা চাপ দিচ্ছে এরকম নয়। বিজিএমিএ নেতৃবৃন্দ ক্লিয়ার করে দিয়েছেন, কারও আতঙ্কিত হবার কারণ নেই। কাউকে ছাঁটাই করা হবে না।’
আশেপাশে অবস্থানরত শ্রমিকদের নিয়ে কারখানা খুলতেও ব্যবসায়ীরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘তাদের সঙ্গে যখন কথা হয়, তারা এ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যারা শুধুমাত্র ঢাকাতে আছেন, তাদের নিয়ে কলকারখানাগুলো কাজ শুরু করবেন। বিদেশি যে অর্ডারগুলো আছে, বায়ারদের যে অর্ডারগুলো আছে, সেগুলা যথাসময়ে তাদেরকে দিতে হবে।’
শ্রমিকদের চাকরি হারানোর কোনো ভয় নেই বলেও নিশ্চিত করে তিনি বলেছেন, ‘তাদের আতঙ্কিত হয়ে ছুটে আসার কোনো প্রয়োজন নেই।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘তারা (ব্যবসায়ীরা) স্পষ্ট করে দিয়েছেন, কারও আতঙ্কিত হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কেউ ছাঁটাই হবে না। ৫ তারিখের পর কীভাবে আসবে, সেট আমরা জানাব। তারাও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তারা ধীরে ধীরে নিয়ে আসবে।’
৫ আগস্টের পর শ্রমিকদের ধাপে ধাপে আনার মানে গণ পরিবহন খুলে দেয়া। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘সেটি কীভাবে হবে, সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কোনো নির্দেশনা নেই। তাদেরকে বলা হয়েছে, ৫ তারিখ পর্যন্ত যাতে দূর থেকে কেউ না আসে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে।’
করোনার সংক্রমণ রোধে গত ২৩ জুলাই থেকে ১৪ দিনের শাটডাউন ঘোষণা করে সরকার; যা চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। এর মধ্যেই রপ্তানিমুখী কারখানা খুলে দেয়ার ঘোষণা দেয় সরকার।