বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘রাস্তাতেই টাকা শেষ, ঢাকা গিয়ে খাব কী?’

  •    
  • ৩১ জুলাই, ২০২১ ১১:১০

হঠাৎ কারখানা খোলার খবরে অপ্রস্তুত শ্রমিকরা তড়িঘড়ি করে ফিরছেন ঢাকায়। অতিরিক্ত ভাড়া গুনে ভেঙে ভেঙে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা। শ্রমিক নেতারা বলছেন, হুট করে নেয়া সিদ্ধান্ত শ্রমিকদের ভোগান্তিতে ফেলেছে।

রাজধানীর গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন জান্নাতী খাতুন। ঈদ ও শাটডাউনের কারণে এতদিন ছিলেন সিরাজগঞ্জে নিজ বাড়িতে। শুক্রবার শুনলেন রোববার থেকে খোলা কারখানা। বাধ্য হয়ে ঢাকা ফিরতে শনিবার ভোরে ছেলেকে নিয়ে হয়েছেন রওনা।

সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল হাইওয়েতে শনিবার সকালে একটি ট্রাকে পাওয়া যায় তাকে। বৃষ্টিতে ভিজেই ফিরছেন তিনি।

নিউজবাংলাকে জান্নাতী জানান, হাটিকুমরুল থেকে এই ট্রাকে উঠেছেন। এটি নামিয়ে দেবে গাজীপুরের চন্দ্রায়। ভাড়া দিতে হচ্ছে ২ হাজার টাকা।

চন্দ্রায় নেমে আবার কত টাকা খরচ করে গন্তব্যে যাওয়া লাগে, তা নিয়ে চিন্তায় আছেন এ পোশাককর্মী।

জান্নাতী বলেন, ‘ঈদের আগে গাড়ি চলতে দিলো। ঈদের পরে বন্ধ করে দিয়ে সরকার এখন গার্মেন্টস খুলে দিলো। তাহলে আমরা কীভাবে যাবো বলেন?

‘ঈদে বাড়ি এসে সব টাকা শেষ হয়ে গেছে। এখন এইভাবে ট্রাকে যেতে অনেক টাকা লাগতেছে। যে কয়টা টাকা আছে তা এই রাস্তাতেই শেষ হয়ে যাবে। ঢাকা গিয়ে খাব কী আমরা?’

জান্নাতির মতো রাজধানীর বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকদের দেখা গেছে এভাবে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ট্রাকে, কাভার্ডভ্যানে করে ঢাকা ফিরতে। এ যাত্রীদের চাপ সকাল থেকেই সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল ও পাঁচলিয়া কড্ডার মোড় এলাকার সড়কে।

কড্ডার মোড় থেকে ঢাকাগামী পোশাকশ্রমিক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদে বাড়ি এসেছিলাম। রোববার থেকে গার্মেন্টস খুলবে। কোনো বাস নাই। তাই বাধ্য হয়ে ট্রাকেই ঢাকায় যাচ্ছি।

‘আমরা গরিব মানুষ। যদি কাল গার্মেন্টসে না যাই তাহলে হয়তো চাকরি চলে যাবে। তখন কী হবে?’

হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহজাহান আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পণ্যবাহী ট্রাকে যাত্রী বহন করায় বেশ কয়েকটি ট্রাক আটক করা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি কোনো পণ্যবাহী ট্রাকে যেন মানুষ না যায়।

‘গার্মেন্টসসহ শিল্পকারখানা আগামীকাল থেকে খোলা হবে শুনে কর্মজীবী মানুষগুলো ঢাকা ফিরছে। তাই ঢল নেমেছে মহাসড়কে। তাদের সামলানো যাচ্ছে না। তারা যেভাবে পারছে ট্রাকে উঠছে।’

শিল্পাঞ্চল সাভারে শনিবার সকাল থেকে দেখা গেছে উত্তরবঙ্গ থেকে শ্রমিকদের ঢল। বেশিরভাগই হাঁটছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, মাইক্রোবাস, ট্রাক কিংবায় অটোরিকশায় করে ভেঙে ভেঙে সাভার পৌঁছেছেন।

রাজশাহী থেকে স্ত্রী ও শিশু সন্তানকে নিয়ে রাতভর চরম দুর্ভোগ সয়ে ভোরে বাইপাইল পৌঁছেছেন হাবিবুল্লাহ মণ্ডল। তাদের চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট।

নিউজবাংলাকে হাবিবুল্লাহ জানান, আশুলিয়ার নরসিংহপুরে হামিম গ্রুপের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের ব্যবস্থাপক তিনি।

তিনি বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়ি রাজশাহী গিয়েছিলাম। কিন্তু গতকালকে (শুক্রবার) পোশাক কারখানা খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত শুনে রাতেই পরিবার নিয়ে রওনা হই।

‘প্রথমে ট্রাকে যাত্রা শুরু করলেও নাটোর এসে সেটি নষ্ট হয়ে যায়। পরে সিএনজিতে সিরাজগঞ্জ আসি। এরপর লেগুনাতে গাদাগাদি করে চন্দ্রা পৌঁছাই। চন্দ্রা থেকে অটোরিকশায় বাইপাইল আসি। সব মিলিয়ে মাথাপিছু আমাদের ১ হাজার টাকা ভাড়া পড়ছে। এখানে এসেও বাসায় যাওয়ার জন্য রিকশা-ভ্যান কিছুই পাচ্ছি না।’

রংপুর থেকে মাইক্রোবাসে ২ হাজার টাকা সিটপ্রতি ভাড়ায় গাদাগাদি করে এসেছেন পোশাকশ্রমিক রুহুল মিয়া ও তার কয়েকজন সহকর্মী।

রুহুল বলেন, ‘সরকার ঘোষণা দিছে ১ তারিখ গার্মেন্টস খুলব। আমারে কাইলকা অফিস থাকি ফোন দিছে আসাই লাগব।

‘তাই লকডাউনের মইদ্দেই আইছি। হায়েস মাইক্রোবাসে রংপুর থাইকা বাইপাইল ২ হাজার টাকা নিছে। ওরা ১৩-১৪ জন নিছিল মাইক্রোতে।’

পোশাকশ্রমিক খুশি আক্তার বলেন, ‘সিরাজগঞ্জ থাইকা পিকআপে আইছি। ৫০০ ট্যাকা ভাড়া নিছে। কী করার আছে আমাগো? গার্মেন্টস খুলব। তাই আইতেই হইব।’

গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাংগঠনিক সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু বলেন, ‘একটা প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম, ১ আগস্ট দেশের সব পোশাক কারখানা চালু হবে। এরই মধ্যে কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে খবর পাঠিয়েছে।

‘এই ধরনের সিদ্ধান্ত যে, গার্মেন্টস মালিকদের কাছে সরকারের একটা পরাজয়, সেটাই আমরা জানতে পারলাম। কয়েক দিন আগেও কিন্তু শ্রমিক-মালিকরা জানতে চাচ্ছিল যে কী হবে। তখন সরকারের মন্ত্রীরা বললেন ৫ আগস্টের আগে কোনোভাবেই শিল্প কারখানা চালু করার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু হঠাৎ গতকালকে এই প্রজ্ঞাপন দিয়ে শ্রমিকদের একটা ভোগান্তির মধ্যে ফেলা হয়েছে।’

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ঈদ পরবর্তী শাটডাউন শুরু হয় ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে। কঠোর এ বিধিনিষেধ চলবে ৫ আগস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত। কিন্তু বিধিনিষেধ শেষ হওয়ার আগেই ১ আগস্ট থেকে খুলে দেয়া হচ্ছে রপ্তানিমুখী সব শিল্প ও কল-কারখানা।

এ বিভাগের আরো খবর