বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আল-মারকাজুলে লাশের সারি, রায়েরবাজার ‘খালি’

  •    
  • ৩১ জুলাই, ২০২১ ০৮:২৭

করোনা আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় প্রতিদিন যত লোক মারা যাচ্ছেন, তার বড় একটি অংশকেই দাফন করা হচ্ছে ঢাকার বাইরে নিজ নিজ এলাকায়। এ কারণে ঢাকায় করোনায় মৃত্যুর চেয়ে দাফনের সংখ্যা অনেক কম।

করোনায় মৃতের সংখ্যা এত বেশি যে, তা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে গোসল ও মৃত্যুপরবর্তী আনুষ্ঠানিকতা তত্ত্বাবধানকারী প্রতিষ্ঠান আল-মারকাজুল ইসলামী।

গত বুধবার ৪৪ জন করোনা রোগীর দাফন-পূর্ববর্তী তত্ত্বাবধায়ন করেছে সংস্থাটি। প্রতিষ্ঠানটির মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের প্রধান কার্য়ালয়ে এখন প্রায়ই দেখা যায় লাশবাহী গাড়ির সারি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারীর সংখ্যার চেয়ে ঢাকায় লাশ দাফন কম হচ্ছে। এর কারণ করোনা আক্রান্ত মৃতদেহ ঢাকার বাইরে নেয়া হচ্ছে।

আল-মারকাজুল ইসলামীর সাধারণ সম্পাদক এনামুল হাসান খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা এত বেশি যে, তা সামলাতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। তবু আমরা কাজ করে যাচ্ছি। জুলাইয়ের প্রথম ১০ দিনের চেয়ে এখন মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেড়েছে।’

১০ জুলাই রাত ১২টা থেকে ১১ জুলাই বিকেল পর্যন্ত ২৫টি কোভিড-১৯ আক্রান্ত মৃতদেহের গোসল ও মৃত্যুপরবর্তী আনুষ্ঠানিকতা তত্ত্বাবধান করেছে দাতব্য প্রতিষ্ঠান আল-মারকাজুল ইসলামী।

আর বুধবার বা ২৮ জুলাই ৪৪টি করোনা মরদেহ সেখানে নেয়া হয়েছিল।

করোনা আক্রান্ত রোগীর লাশ দাফন বেশির ভাগ ঢাকার বাইরে হওয়ায় ঢাকার কবরস্থানগুলোতে মৃত্যুর ঘটনার চেয়ে লাশ দাফন কম হচ্ছে বলে মনে করেন এনামুল হাসান খান।

রায়েরবাজার কবরস্থানের গোরখোদক লিয়াকত আলী সরকার বলেন, ‘যার যার এলাকায় লাশ নেয়ার কারণে ঢাকায় লাশ কম থাকছে, এ কারণে এই কবরস্থানে দাফনও হচ্ছে কম।’

করোনায় মারা যাওয়া স্বজনের মরদেহ এলাকায় নিতে লাশবাহী গাড়ির খোঁজে এক ব্যক্তি। ছবি: সাইফুল ইসলাম

তিনি জানান, ২৮ জুলাই ৪ জন ও ২৯ জুলাই ৩ জন করোনা আক্রান্ত রোগীকে ওই কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

তিনি জানান, গত এপ্রিলে এখানে লাশ দাফন হতো বেশি। তবে এখন করোনা মিলিয়ে ১০-১২টি লাশ দাফন হয়। এখন দৈনিক গড়ে ৩-৪টি করোনা আক্রান্ত রোগী থাকছে বলে জানান তিনি।

জুলাইয়ের প্রথম ১০ দিনের চেয়ে এখন করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন আল-মারকাজুল ইসলামীর সাধারণ সম্পাদক।

তিনি বলেন, ‘এখন তো কোভিড আক্রান্ত রোগীর সিরিয়াল লেগে যায়। সেটা গত কয়েক দিনে আরও বেড়েছে। ঈদের পরে সর্বোচ্চ ৫৪ জন করোনা আক্রান্ত মৃতদেহের দাফনপূর্ববর্তী কার্যক্রম আমরা করেছি।’

তিনি জানান, করোনা আক্রান্ত হয়ে যাদের খারাপ অবস্থা, তাদের অনেকে ঢাকায় চিকিৎসার জন্য আসছেন। মৃত্যু হলে তাদের গোসলের পর মৃতদেহ ঢাকার বাইরে নিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে নিজ এলাকায় দাফনের জন্য।

আল-মারকাজুল ইসলামীর তথ্যমতে, শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী তারা চলতি মাসের প্রথম ১০ দিন ২০৫টি করোনা শনাক্ত লাশের গোসল করিয়েছে। এই সময়ে এর বাইরেও লাশ রয়েছে।

২০২০ সালের শুরু থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত তারা ৫ হাজার ৫১টি করোনা শনাক্ত লাশের গোসল করিয়েছে।

আল-মারকাজুল ইসলামীর সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন ৪০-৪৫টি করোনা রোগীর গোসল করাচ্ছি। ২৪ ঘণ্টায় আমরা আমাদের টিমকে ভাগ করে রেখেছি। মৃতদেহ আমাদের এখানে আনা হচ্ছে। আবার আমরা গিয়েও করছি। আমাদের গাড়ি ও লোকজন সব সময় ব্যস্ত থাকছে কোভিড রোগীদের লাশ গোসল করানোতেই। এখনও এটা কমেনি।’

তিনি জানান, তাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এসএমএসের মাধ্যমে প্রতিদিন কোভিড-১৯ রোগীর পরিচয়, নাম-ঠিকানা দেয়া হয়। তাদের টিম ওই ঠিকানায় গিয়ে লাশের গোসল সম্পন্ন করে।

করোনায় ভুগে কেউ মারা গেলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটি বার্তা যায়। মন্ত্রণালয় এর পরে মারকাজুলে বার্তা পাঠায়।

করোনায় মৃতদের সংরক্ষণ, গোসল, মৃত্যুপরবর্তী তত্ত্বাবধান করতে গিয়ে এখন জায়গার সংকুলান হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন আল-মারকাজুল ইসলামীর সংশ্লিষ্টরা। এ জন্যে তারা জমি বরাদ্দ চেয়েছেন।

প্রতিষ্ঠানটির সাধারণ সম্পাদক এনামুল হাসান খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে, এটা সরকার থেকে করা হলে আমাদের জন্য ভালো হতো।’

১৯৮৮ সালে আল-মারকাজুল ইসলামী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তখন থেকেই এ সংস্থাটি ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের সেবামূলক কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।

গত বছরে করোনা মহামারি শুরু হলে প্রথম থেকেই সামনের সারিতে থেকে কাজ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

দাহ বেড়েছে পোস্তগোলা শ্মশানে

রাজধানীর পোস্তগোলা শ্মশানঘাটের মরদেহ সৎকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত মিলন লাল ডোম। করোনা মহামারির কারণে ওই শ্মশানঘাটে মৃতদেহ দাহ করার সংখ্যা বেড়েছে বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন তিনি।

চলতি মাসের প্রথম ১০ দিনে সেখানে ৪১টি মৃতদেহ দাহ করা হয়েছে। ২৮ জুলাই পর্যন্ত দাহ হয়েছে ৮৬টি মৃতদেহ। এদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে জানান মিলন লাল ডোম।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আগে প্রতি মাসে এই শ্মশানঘাটে লাশ আসত ৫০টি। এখন আসে একশর বেশি। বেশিরভাগই করোনা।’

মিলন বলেন, ‘করোনা মরদেহের সৎকার আলাদা হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পিপিই পরে নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করে আমরা সৎকারের কাজ করি।’

পোস্তগোলা শ্মশানঘাটে ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত এক বছরে ১ হাজার ৮৬টি লাশ সৎকার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

ঢাকার কবরস্থানে দাফন বেড়েছে

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ছয়টি কবরস্থান রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে উত্তরা ৪ নং সেক্টর কবরস্থান, উত্তরা ১২ নং সেক্টর কবরস্থান, উত্তরা ১৪ নং সেক্টর কবরস্থান, বনানী কবরস্থান, মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান ও রায়েরবাজার কবরস্থান।

করপোরেশনের তথ্য অনুসারে, জুলাইয়ের ১১ তারিখ পর্যন্ত উত্তরা ১৪ নং সেক্টর, বনানী, মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী ও রায়েরবাজার কবরস্থানে ৩৬টি করোনা আক্রান্ত মরদেহ দাফন করা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফন হয়েছে ৩১টি মরদেহ।

এ বিভাগের আরো খবর