আলোচিত ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীরকে গুলশান থানায় হস্তান্তর করেছে র্যাব। তবে তার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ আনা হয়েছে, সেটি এখনও স্পষ্ট নয়।
আওয়ামী লীগের নামের সঙ্গে মিল রেখে নামসর্বস্ব সংগঠন ‘চাকরিজীবী লীগ’ নিয়ে আলোচিত এই ব্যবসায়ীকে গত রাতে আটক করার পরদিন শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে তাকে থানায় নিয়ে আসা হয়।
তার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা করার প্রক্রিয়া শুরু হলেও তাকে আদালতে তোলা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হাসান।
তিনি বলেন, ‘মামলার এজাহার পেলে আমরা কোর্টে নেব। কিন্তু এখনও তৈরি হয় নাই। আজ কোর্টে নিতে পারব কি না, সেটা এখনো বলতে পারছি না।’
গৃহবধূ থেকে ব্যবসায়ী হয়ে সিআইপির (কমার্শিয়ালি ইমপরটেন্ট পারসন) স্বীকৃতি পাওয়া এই ব্যবসায়ী সম্প্রতি আলোচিত হয়ে ওঠেন ‘আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামে একটি সংগঠনের প্রচার চালাতে গিয়ে।
আওয়ামী লীগের এই নামে কোনো সংগঠন নেই আর তিনি এই সংগঠনকে সামনে নিয়ে আসার পর ক্ষমতাসীন দলের কর্মী-সমর্থকদের কাছ থেকে তুমুল আক্রমণের মুখে পড়েন।
একপর্যায়ে হেলেনা পিছুটান দেন। বলেন, তিনি এই সংগঠনের কেউ না। তাকে সম্প্রতি সভাপতি হওয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল।
তবে এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের পদ হারান হেলেনা। ক্ষমতাসীন দলের মহিলাবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্যপদ ছাড়াও কুমিল্লা উত্তর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টার পদ থেকেও অব্যাহতি দেয়া হয় তাকে।
এর মধ্যে হঠাৎ করেই তার বাসায় র্যাবের অভিযানের খবর দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক মাধ্যমে তোলপাড় হয়।
পরে র্যাব জানায়, গুলশানে তার বাসভবন থেকে মদ উদ্ধার করা হয়েছে। পাওয়া গেছে হরিণ ও ক্যাঙ্গারুর চামড়া, ক্যাসিনোর চিপস। বিদেশি মুদ্রাও উদ্ধার হয়েছে।
তবে হেলেনার মেয়ে জেসি আনান জানিয়েছেন, তার ভাইয়ের মদের লাইসেন্স আছে। আর সেটি র্যাবকে দেখানোও হয়েছে।
বিদেশি মুদ্রার বিষয়ে তিনি জানান, তারা নিয়মিত বিদেশ সফর করেন আর সফর শেষে থেকে যাওয়া অর্থ বাসায় থাকতেই পারে।
ক্যাসিনোর চিপসের বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলো রাখা হলেও ক্যাসিনো খেলার জন্য আর যা যা প্রয়োজন, তার কিছুই নেই। ফলে এই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে না কোনোভাবেই।
আর হরিণের চামড়াটি তার ভাইয়ের বিয়েতে উপহার পাওয়ার কথা জানান জেসি। বলেন, আওয়ামী লীগ নেতারাই এটি উপহার দিয়েছেন।
তাকে নিয়ে ব্রিফিংয়ে এসে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘হেলেনা জাহাঙ্গীরের একটি উচ্চাভিলাষী উদ্দেশ্য রয়েছে। যা বাস্তবায়ন করতে তিনি নানাবিধ অবৈধ পন্থা, অপকৌশল ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন।
‘তিনি তার এজেন্ডা বাস্তবায়নে একটি সংঘবদ্ধ চক্রের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন, যারা অর্থের বিনিময়ে বা অবৈধ সুবিধা গ্রহণের মাধ্যমে এহেন অনৈতিক কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে।
‘এই সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত রয়েছে। যারা বিভিন্ন সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মাঠপর্যায়ে সক্রিয় রয়েছে।’