ধরা যাক দ্বিতল পদ্মা সেতুর রেলপথ পূর্ণ হয়ে আছে ভারী ট্রেনে। আর সড়ক অংশে পণ্যবোঝাই সব লরির সারি। এমন সময় হুট করে শুরু হল ভূমিকম্প। যেনতেন নয়, রিখটার স্কেলে আট মাত্রার। ভূমিকম্পে সেতুর পিলারের নিচ থেকে মাটি সরে গেল ৬২ মিটার। আর ঠিক ওই সময় চার হাজার টনের একটি জাহাজ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা দিলো পদ্মা সেতুর কোনো একটা স্তম্ভে। কী হবে?
প্রকৌশল বিদ্যা বলছে, তখনও ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকবে বাংলাদেশের গর্বের পদ্মা সেতু।
পদ্মা সেতু কতোটা শক্তপোক্ত করে বানানো হয়েছে, সেটা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রকৌশলগত নিরাপত্তার চারটি স্তর তুলে ধরে এই কথা বলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
সচিবালয়ে সোমবার দুপুরে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
পদ্মা সেতুর শক্তিমত্তার প্রসঙ্গটি এসেছে গত শুক্রবার একটি দুর্ঘটনার সূত্র ধরে। ওইদিন ‘শাহজালাল’ নামের একটি রো রো ফেরি সেতুর ১৭ নম্বর পিলারে ধাক্কা মারে। এতে ফেরিটির সামনের অংশ দুমড়ে যায়। আহত হন অন্তত ২০ জন যাত্রী।
ঘটনার পরপরই ফেরির ইনচার্জ ইনল্যান্ড মাস্টার অফিসার আব্দুর রহমানকে বরখাস্ত করে বিআইডব্লিউটিসি।
ঘটনা তদন্তে গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, পিলারের সঙ্গে সংঘর্ষের পেছনে রয়েছে রো রো ফেরিটির ইনচার্জ মাস্টার আব্দুর রহমান খান ও সুকানির সাইফুল ইসলামের দায়িত্বহীনতা।
পদ্মা সেতুর পিলারে ধাক্কা লেগে ভেঙে যায় রো রো ফেরির একাংশ। ছবি: নিউজবাংলা
শনিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেকের ভুল ধারণা পরিষ্কার হয়নি। জিনিসটা হলো যে পদ্মা সেতুর পিয়ারে (স্তম্ভ) ধাক্কা খাওয়ার আশঙ্কা খুবই কম। পিয়ার পর্যন্ত পৌঁছাতেই পারবে না। ইউ গট মাই পয়েন্ট?’
কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘পিয়ারের বাইরে ২৫ ফিট গার্ড (বেষ্টনি) আছে। তার মানে ৫০ ফিট ডায়ামিটারের একটি ক্যাপ আছে। ফলে শিপ সেখানে ধাক্কা খেতে পারবে না। আর ফেরি তো আরও ছোট। ফেরি পিয়ারের সঙ্গে, নয় ক্যাপের সঙ্গে ধাক্কা খেয়েছে।’
পদ্মা সেতুর পিয়ারে ফেরির ধাক্কা দেওয়ার ঘটনাটি ভুল দাবি করেন তিনি বলেন, ‘ওইদিনও (পিয়ারের সঙ্গে) ধাক্কা খায়নি। ধাক্কা খেয়েছে পিয়ার ক্যাপের সঙ্গে। পিয়ার ক্যাপের একটু ই উঠে গেছে।’
জাহাজ ধাক্কা দিলেও কোনো দুর্ঘটনার আশঙ্কা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তিন হাজার, চার হাজার টনের শিপ ওদিকে যেতেও পারে না। গেলেও সেগুলো লোড থাকে আড়াই থেকে তিন হাজার টন। সুতরাং চার হাজার টনের শিপও যদি ধাক্কা মারে, পিয়ারে পৌঁছাতে পারবে না, আগেই পিয়ার ক্যাপের মধ্যে স্টপ হয়ে যাবে।’
তবে দুর্ঘটনা কবলিত ফেরিটি ডুবে যায় কি-না সেটি নিয়ে আশঙ্কা ছিল মন্ত্রিপরিষদ সচিবের মনে। তিনি বলেন, ‘আমরা ভয় পাচ্ছিলাম যে, ফেরি ডুবে যায় কি-না। আমরা পরশুদিন (শনিবার) দেখে সব ঠিক করে দিয়ে আসছি। এখন চ্যানেল করে দিয়েছি। এক চ্যানেল দিয়ে যাবে, আরেক চ্যানেল দিয়ে আসবে, যাতে কোনো ঝামেলা না হয়।’
এ প্রসঙ্গে পদ্মা সেতু নির্মাণ কৌশল ও এটি কতোটা শক্তপোক্ত তা নিয়ে কথা বলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। জানান, চারটি প্রকৌশলগত নিরাপত্তা নিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে।
খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, ‘যদি কখনো রিখটার স্কেলের আট মাত্রার ভূমিকম্প হয়, তখন যদি পিয়ারের নিচ থেকে ৬২ মিটার মাটি সরে যায়, মাটি সরে গেলে কিন্তু স্ট্রেংথ কমে যাবে।
‘তখন যদি ব্রিজের দুইটি লেয়ারের নিচেরটি হেভি লোডেড ট্রেন দিয়ে বোঝাই থাকে, আর উপরেরটিতে যদি লরি দিয়ে বোঝাই থাকে লোডেড, তখনই যদি চার হাজার মেট্রিক টনের একটি শিপ গিয়ে পিয়ারের মধ্যে ধাক্কা মারে, তবুও ব্রিজের, পিয়ারের কিছু হবে না। ডু্ ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড? এগুলো হলো, ইঞ্জিনিয়ারিং সেফটি।’
তবে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, ‘প্রকৃতি যদি এর বাইরে কিছু করে, দ্যাটস অ্যা ডিফারেন্ট থিং।’