পাপুলকাণ্ডে কুয়েতে বিপাকে পড়েছেন অভিবাসী বাংলাদেশিরা। অন্যদিকে এই ঘটনা কুয়েতে বাংলাদেশিদের সম্পর্কে বিরূপ ধারনা তৈরি করেছে। যা কুয়েত সরকারের জন্যও বিব্রতকর বলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেনকে জানিয়েছেন সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আহমেদ নাসের আল মোহাম্মেদ আল সাবাহা।
সম্প্রতি উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখন্দে দুই মন্ত্রীর বৈঠক হয়। আনুষ্ঠানিকতার বাইরে হয় অনেক অনানুষ্ঠানিক আলাপও। নিউজবাংলার কাছে তার কিছু তুলে ধরেন আবদুল মোমেন।
‘পাপুলকাণ্ড আমাদের ইমেজকে ডুবিয়েছে। কুয়েতের মতো বড় শ্রমবাজার এখন হুমকিতে পড়ে গেছে। পরিস্থিতি এতোটাই ভয়াবহ যে কুয়েত সরকারও আমাদের পক্ষ নিয়ে কিছু করতে ভয় পাচ্ছে। তারা তাদের মিডিয়ার ভয়ে কিছু করতে পারছেনা।’
তিনি বলেন, ‘তাসখন্দে কুয়েতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আহমেদ নাসের আল মোহাম্মেদ আল সাবাহার সঙ্গে আমার বৈঠক হয়েছে। আমি তাকে আমাদের দেশের মানুষের সমস্যার কথা বললাম। তিনি এজন্য মন্ত্রী পর্যায়ে একটি জয়েন্ট কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। যেমন ভারত ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে আমাদের আছে। একই সঙ্গে কুয়েত একটি রোডম্যাপ তৈরির কথাও বলেছে। যা দুই দেশের কাজের ক্ষেত্রগুলো চিহ্ণিত করবে।
গত ২৮ জানুয়ারি কুয়েতে মানব ও অর্থপাচারের দায়ে বাংলাদেশের সাবেক সাংসদ কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয় কুয়েতের একটি আদালত। ফাইল ছবি
‘আমি বললাম আমাদের দেশের অনেক মানুষ তোমাদের দেশে কাজ করতো। তারা এখন সমস্যায় আছে। তাদের দোকান, ব্যবসা আছে। তোমরা এখন তোমাদের দেশে আমাদের দেশের লোকদের যাইতে দিচ্ছোনা।’
জবাবে কুয়েতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাকে জানান, পাপুলের কারণে তোমাদের অনেক বদনাম হয়ে গেছে। বিরাট বদনাম হয়ে গেছে। তারপরও আমরা ভিসার সহজ পথ তৈরি করছি। পাপুলের কেসের কারণে আমরাও বিব্রত। এজন্য এ নিয়ে আমার একার পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন। এ ঘটনায় পুরো কুয়েতি সমাজ বিব্রত ও হতাশ হয়ে পড়েছে।
মোমেন বলেন, যদিও আমি তাকে বলেছি- আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। তার সংসদ সদস্যপদ প্রচলিত আইনেই কেড়ে নেয়া হয়েছে।
‘জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ তা তোমরা করেছো। কিন্তু এই বদলোকটা তার অপকর্ম দিয়ে বিরাট একটা খারাপ উদাহরণ তৈরি করেছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আহমেদ নাসের আল মোহাম্মেদ আল সাবাহাকে বলেছি, বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের মধ্যে সে একটি খারাপ উদাহরণ। কিন্তু বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষই ভালো।
‘তিনিও তা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, কুয়েতের মিডিয়া বিষয়টি নিয়ে এখনও সন্দেহের খোঁজে আছে। পেছনের কাউকে খুঁজছে। তাই আমি এখনই এটা নিয়ে কিছু করতে গেলে মিডিয়া তা ভালো ভাবে নেবে না।’
তিনি (কুয়েতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী) বলেছেন, যারা কুয়েতে আছেন। তারা থাকবেন। তারা আসা-যাওয়াও করবেন। কিন্তু নতুন করে স্কিল্ড (দক্ষ) লোক নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। আমি তাকে বলেছি, আমাদের স্কিল্ড লোক আছে। পেশাদার লোক আছে। আমাদের বেশিরভাগ লোকই ভালো।
১৮ জুলাই অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন ইস্যুতেই আলোচনা হয় বলে জানান আবদুল মোমেন।
বৈঠকে কুয়েতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্বাস্থ্য, খাদ্যনিরাপত্তা, তথ্য প্রযুক্তি ও সাইবার সিকিউরিটি খাতে বাংলাদেশের সহায়তা চান। এছাড়া দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একটি যৌথ সভার জন্য প্রস্তাব দেন।
‘রোহিঙ্গাদের নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে প্রস্তাবে সমর্থন দেয়ায় কুয়েতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আমি বিশেষ ভাবে ধন্যবাদ জানাই।’
গত ২৮ জানুয়ারি কুয়েতে মানব ও অর্থপাচারের দায়ে বাংলাদেশের সাবেক সাংসদ কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয় কুয়েতের একটি আদালত। এর পাশাপাশি লক্ষ্মীপুর–২ আসনের সেসময়ের স্বতন্ত্র এই সাংসদকে ১৯ লাখ কুয়েতি দিনার বা ৫৩ কোটি ১৯ লাখ ৬২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
কুয়েতের ফৌজদারি আদালতের বিচারক আবদুল্লাহ আল ওথমান বাংলাদেশের সাংসদের পাশাপাশি সে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তা মেজর জেনারেল মাজেন আল জারাহকেও শহিদ ইসলামের মতো চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১৯ লাখ কুয়েতি দিনার জরিমানা করেন। প্রভাবশালী ওই জেনারেল বাংলাদেশের সাংসদকে অনৈতিকভাবে ব্যবসা পরিচালনায় মদদ দিয়েছিলেন।
মানব ও অর্থপাচারের অভিযোগে শহিদকে গত বছরের ৬ জুন রাতে তার কুয়েত সিটির বাসা থেকে সে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা গ্রেপ্তার করেন।