করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ‘সবচেয়ে কঠোর’ শাটডাউনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের অংশে কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বড় যানবাহনে করে গন্তব্যে পৌঁছানো কঠিন। এমন বাস্তবতায় ছোট ছোট যানে করে দূরের গন্তব্যে রওনা হয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
মহাসড়ক ঘুরে দেখা যায়, রাস্তায় দূরপাল্লার যান চলাচলা না করায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ইজিবাইক, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল ও ব্যক্তিগত গাড়িতে করে অনেকে বিভিন্ন গন্তব্যে যাচ্ছে। তা ছাড়া পিকআপ ভ্যানেও যাত্রী উঠতে দেখা গেছে।
শনিবার সকাল থেকে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি ও সেনা সদস্যরা মহাসড়কে টহল দিচ্ছেন।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকায় হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনের গতিরোধ করছেন। বিনা কারণে যারা যানবাহন নিয়ে বের হয়েছেন তাদের মামলা দেয়া হচ্ছে।
এদিকে সাইনবোর্ডের ঢাকার অংশে চেকপোস্ট বসিয়ে ঢাকাগামী যানবাহন ও মানুষকে আটকে দিচ্ছেন ডিএমপি পুলিশের সদস্যরা।
একই অবস্থা শিমরাইল, মদনপুর ও মোগড়াপাড়া এলাকায়। সেখানে হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি থানা-পুলিশের সদস্যরাও অবস্থান নিয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সালেহ উদ্দিন নিউজবাংলাকে জানান, সড়ক ও মহাসড়ক মিলিয়ে ২২টি স্থানে পুলিশের চেকপোস্ট রয়েছে। তা ছাড়া ২৯টি মোবাইল টিম পাড়া-মহল্লায় তৎপরতা চালাচ্ছে।
তিনি বলেন, যারা সরকারি নির্দেশ অমান্য করে রাস্তায় বের হচ্ছে, তাদের আটকের পর মামলা দেয়া হচ্ছে। জরুরি সেবা প্রদানকারী যানবাহন ছাড়া সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের শিমরাইল এলাকা থেকে কুমিল্লার দাউদকান্দি যেতে ইজিবাইকে ওঠেন কাশেম চৌধুরী। জরুরি প্রয়োজনে তিনি তার মেয়ের বাড়ি যাচ্ছেন। যানবাহন না পেয়ে ২০০ টাকা দিয়ে ইজিবাইকে উঠেছেন। তার মতো আরও কয়েকজন উঠেছেন ওই ছোট যানে।
কাশেম চৌধুরী বলেন, ‘ছোট মেয়ে অসুস্থ। তাই তার শ্বশুরবাড়ি যেতে রাস্তায় বের হয়েছি। শিমরাইল পর্যন্ত আসতে তিন জায়গায় পুলিশ থামিয়েছে। এখানে থেকে ইজিবাইক পেয়ে তাতেই রওনা হয়েছি।’
রমজান মিয়া নামের আরেকজন যাবেন কুমিল্লার গৌরীপুর। সেখানে যেতে ৮০০ টাকায় ভাড়া করেছেন মোটরসাইকেল।
রমজান মিয়া বলেন, ‘বাড়িতে যাওয়া অনেক প্রয়োজন। তাই বাধ্য হয়ে রাস্তায় আইছি। কঠোর লকডাউন। তাই সব জায়গায় পুলিশ। মোটরসাইকেল ভাড়া নিয়া যাইতাছি। এ ছাড়া উপায় নাই।’
মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া পর্যন্ত সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইকে করে মহাসড়ক দিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। তবে মাঝপথে পুলিশ আটক করলে সেখানে নেমে যেতে হবে বলেই গাড়িতে তুলছেন চালকরা। তা ছাড়া পিকআপ ভ্যানে করেও রওনা হয়েছেন অনেকে।
এ পথের যাত্রী মোতালেব মিয়া বলেন, ‘সিএনজিতে করে রওনা হইছি। মহাসড়কের পুলিশ ধরলে আশপাশের অলিগলি দিয়া বের হইয়া যামু। ছোট হইলেও এটাই এখন ভরসা।’
তৎপর ভ্রাম্যমাণ আদালত
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কোনো যানবাহন বের হলে পুলিশের পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে মামলা দিচ্ছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। তারা সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান করছেন।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাটডাউনের প্রথম ও দ্বিতীয় দিনে ৯৫টি মামলায় ৪৭ হাজার ১৫০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ নিউজবাংলাকে জানান, দুটি মহাসড়ক ও নগরী মিলিয়ে ২৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র্যাব সদস্যরা সড়কে অবস্থান করছেন। বিনা কারণে যারা রাস্তায় বের হচ্ছেন তাদের জরিমানা করা হচ্ছে। জরুরি সেবা ছাড়া অযথা যেসব যানবাহন যাত্রী পারাপার করতে রাস্তায় নামছে, সেগুলোকে মামলা দেয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই মানুষ ঘরে থাকুক, সুস্থ থাকুক। তাই জনসাধারণকে ঘরে থাকতে মাইকিং করা হচ্ছে।’
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সব শেষ তথ্য অনুযায়ী, নারায়ণগঞ্জে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৮ হাজার ৫৯ জন। এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ২৪৯ জন।