ফুটপাত ধরে হাঁটছে সারি সারি মানুষ। কারও মাথায় প্লাস্টিকের বড় ব্যাগ, কারও কাঁধে ব্যাগ ঝোলানো, কেউ ট্রলি ব্যাগ টেনে নিয়ে যাচ্ছেন মাইলের পর মাইল। কারও কাঁধে ব্যাগের সঙ্গে কোলে শিশুসন্তানও রয়েছে। গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য নেই কোনো বাস বা গাড়ি। রিকশা বা ভ্যানের আশায় এদিক-সেদিক তাকাচ্ছেন, কিন্তু কিছুই মিলছে না। তাই শেষ উপায় হাঁটা।
এমন ছিল শুক্রবার সকালে উত্তরের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকার প্রবেশপথ গাবতলীর চিত্র। ঈদুল আজহার চলাচলের সুবিধার জন্য এক সপ্তাহের বিরতি দিয়ে শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে আবারও শুরু হয় দুই সপ্তাহব্যাপী বিধিনিষেধ। আগের চেয়েও কড়া বা ‘কঠোরতম’ এ বিধিনিষেধে চরম বিপাকে পড়েছেন ঈদের ছুটি কাটিয়ে ঢাকায় ফেরা মানুষ।
১৩ জুলাই মন্ত্রিপরিষদের প্রজ্ঞাপনেই জানিয়ে দেয়া হয়েছিল ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে শুরু হবে কঠোর লকডাউন। এতে ২২ জুলাই রাতে রওনা হয়ে সকালে রাজধানীতে পৌঁছানো লোকজনই পড়েছেন বিপাকে।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ঢাকার আশপাশে আসতে পারলেও বিধিনিষেধের কারণে ঢাকায় কোনো গাড়ি ঢুকতে দিচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
শুক্রবার রাজধানীর গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, ভোর ৬টা থেকেই ঢাকায় ফেরা মানুষের ভোগান্তি শুরু হয়। দূরপাল্লা বা স্বল্পপাল্লা সব ধরনের গাড়ি চলাচল একেবারেই বন্ধ রয়েছে। বিশেষ বিবেচনা ছাড়া কোনো ধরনের ইঞ্জিনচালিত বাহন চলতে দেয়া হচ্ছে না।
দেশের উত্তরের জেলাগুলো থেকে আসা বাসগুলো যাত্রীদের নামিয়ে দিচ্ছে গাবতলী-আমিনবাজার ব্রিজের ওপারেই। বাধ্য হয়ে হেঁটে ব্রিজ পার হয়ে ঢাকায় ঢুকছেন যাত্রীরা। কোনো ধরনের যানবাহন না পেয়ে হেঁটেই গন্তব্যে রওনা দিতে হয় তাদের।
পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঠাকুরগাঁও থেকে ঢাকায় ফিরেছেন নাসিমুল হাসান। তবে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়েও কোনো রিকশা বা ভ্যান কিছুই পাচ্ছিলেন না।
তিনি বলেন, ‘সন্ধ্যার আগে গ্রামের বাড়ি থেকে রওনা দিয়েছি। পথে অনেক জ্যাম ছিল তাই দেরি হয়েছে। এখন এসে দেখি যাওয়ার কোনো ব্যবস্থাই নেই। জ্যাম না থাকলে ভোরের অনেক আগেই ঢাকায় পৌঁছাতাম। এতক্ষণে খেয়েদেয়ে ঘুম দিতাম। কিন্তু জ্যামের কারণে এখনও পথে পথে ঘুরছি। প্রাইভেট কারের ভাড়াতেও রিকশা-ভ্যান পাচ্ছি না। ব্রিজের ওপার থেকে দুই কিলোমিটার হেঁটে আসছি।’
রাস্তায় রিকশা-ভ্যানও ছিল হাতে গোনা। যারা রাস্তায় ছিলেন তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া হাঁকিয়েছেন। অগত্যা যাত্রীরাও তিন থেকে চার গুণ বেশি দামে তাতে চড়তে বাধ্য হয়েছেন।
দামে বনিবনা না হওয়ায় হেঁটে বাসার পথে রওনা দিয়েছেন আরেক যাত্রী আয়নাল মিয়া।
তিনি বলেন, ‘যামু কলাবাগান। কিন্তু ভ্যান ভাড়া চায় ৮০০ ট্যাকা, এত ট্যাকা দিমু ক্যামনে। বাড়িত থুন আইতে তো এত ট্যাকা লাগে নাই। তাই হাঁইটাই পথ ধরছি। মাইয়াডার কষ্ট বেশি অইতাছে। মাঝে মইধ্যে একটু কোলে নিতাছি, আবার হাঁটতাছি।’
তার মতো অধিকাংশ মানুষকে হেঁটে বাসার দিতে রওনা হতে দেখা গেছে। এতে হেঁটে বাসায় ফেরা মানুষের সারি গাবতলী থেকে মাজার রোড, টেকনিক্যাল, কল্যাণপুর, শ্যামলী, আসাদগেট ছাড়িয়ে যেতে দেখা গেছে।
গাবতলী চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য ফরহাদ বলেন, ‘নির্দেশনা আছে রাস্তায় কোনো গাড়ি থাকবে না। তাই সকাল থেকেই কোনো গাড়ি ঢাকায় ঢুকতে দিচ্ছি না আমরা। ব্রিজের ওপারেই যাত্রী নামিয়ে বাস খালি করাচ্ছি। শুধু খালি গাড়ি টার্মিনালে যেতে পারবে। কথা না শুনলে অন্য ব্যবস্থা আছে, সোজা রেকার।’