মাঝে আর একটা দিন। এরপরই ঈদুল আজহা। এখনও হাট ভর্তি গরু-ছাগল। বড়-মাঝারি সাইজের গরু সাজিয়ে বসেছেন ব্যাপারীরা। কিছুটা হতাশা তাদের চোঁখে-মুখে। কারণ এই সময়ে এসেও হচ্ছে না তেমন বেচা-বিক্রি।
আফতাবনগর গরুর হাট ঘুরে দেখা গেল, ক্রেতাদের মধ্যে মাঝারি গরুর চাহিদাটা সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। তাই ক্রেতা সমাগমও ছিল অন্যদিনের তুলনায় কিছুটা কম।
ক্রেতাদের অভিযোগ ব্যাপারীরা দাম হাঁকাচ্ছেন বেশি। শুধু হাঁকাচ্ছেন তা-ই না, যা দাম বলছেন, সেখান থেকে নামতেই চাচ্ছেন না তারা।
হাটে দেখা হয় রামপুরা ওয়াপদা রোডের বাসিন্দা মোস্তফা জামানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ব্যাপারীরা এবার দাম বেশি চাইছেন। যা দাম বলছেন তাতেই তারা গরু বিক্রি করতে চান।
তিনি আরও বলেন, বাজারে গরু আছে অনেক। কিন্তু সমস্যা হলো দাম অন্যান্য বারের তুলনায় বেশি।
গুলশানের বাসিন্দা রিফাত শাহরিয়ার বলেন, এবার দামটা একটু বেশি মনে হচ্ছে। আর ব্যাপারীরা তো এক দাম বলেই বসে থাকে।
আর বরাবরের মতো ক্রেতাদের অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়েছেন গরু ব্যাপারীরা। তারা বলছেন, উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তারপর বৈরি পরিবেশে গরু ঢাকায় আনা, পরিবহন খরচ—সবমিলিয়ে ন্যূনতম লাভের দেখা মিললেই গরু বিক্রি করতে চান তারা।
দিনাজপুর থেকে ৩১টি গরু নিয়ে এসেছেন সালাম মিয়া। তিনি বলেন, অনেক দিন থেকে পেলে-পুষে গরুগুলোকে বড় করেছি। এখন কাস্টমাররা যে দাম বলেন সে দামে গরু বেচলে অনেক লস হয়ে যাবে।
সালাম মিয়ার কণ্ঠেই সুর মেলালেন নওঁগা থেকে ৮টি গরু নিয়ে আসা তোবারক আলী। তিনি বলেন, ‘মনে হয় না এবার গরু বেচে লাভ করতে পারুম। খরচ উঠলেই গরুগুলো বেচে চলে যামু।’
চাহিদা বেশি মাঝারি সাইজের গরু
আফতাবনগর হাট ঘুরে দেখা গেছে অধিকাংশ ক্রেতাই খুঁজছেন মাঝারি সাইজের গরু। আর বিক্রেতারাও এ বিষয়টি বুঝে মাঝারি সাইজের গরুর দাম হাঁকাচ্ছেন বেশি।
ডেমরা স্টাফ কোয়াটারের বাসিন্দা মেহেদী ইসলাম লিটু দুপুর ২টা এসেছেন আফতাবনগর হাটে। উদ্দেশ্য ৬০/৭০ হাজার টাকার মধ্যে মাঝারি সাইজের গরু কেনা। কিন্তু ব্যাপারিরা যে দাম চাইছেন তা তার কাছে একটু বেশিই মনে হচ্ছে।
তিনি বলেন, অধিকাংশ ক্রেতাই মাঝারি সাইজের গরু খুঁজছেন। আর এ সুযোগটিই নিচ্ছেন ব্যাপারীরা। হাট ঘুরে আমার মনে হচ্ছে বড় সাইজের গরুর চেয়ে মাঝারি সাইজের গরুর দাম বেশি।
একই কথা বললেন মালিবাগের বাসিন্দা আরশাদ হোসেন। তিনি বলেন, হাটে এবার মাঝারি সাইজের গরুর চাহিদা বেশি। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, করোনা মহামারিতে আয় অনেক কমে গেছে। তাই এবার দুই বন্ধু মিলে ৬০ হাজার টাকার মধ্যে একটি গরু কোরবানি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু এই বাজেটে গরুই পছন্দ হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, প্রয়োজন হলে আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা করবো। না হলে কাল সকালে আবার আসবো।
স্বাস্থ্য বিধির বালাই নেই
কোরবানির পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশু বিক্রির কথা থাকলেও আফতাবনগর হাটে নেই স্বাস্থ্য বিধির কোনো বালাই। অধিকাংশ ক্রেতা-বিক্রেতার মুখে মাস্ক ছিল না। আর হাটে হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব রক্ষারও তোয়াক্কা করছেন না ক্রেতা- বিক্রেতা কেউই।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আফতাবনগর হাটের সেচ্ছাসেবক রিপন বলেন, ‘ভাই মানুষ যদি নিজের ভালো নিজে না বুঝে আমরা কী করবো বলেন। সারাদিন মাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য বলা হচ্ছে কিন্তু কারও কানে মনে হয় কথাগুলো যায় না।’