পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার ঝাটিবুনিয়া গ্রামের নয় বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে খালাস দিয়ে হাইকোর্টের রায় স্থগিত করে দিয়েছে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।
রাষ্ট্র পক্ষের করা আপিলের শুনানি নিয়ে সোমবার এ আদেশ দেন চেম্বার জজ বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। রায় স্থগিত করে আগামী ১ আগস্ট আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
খালাস স্থগিত হওয়া আসামি দুজন হলেন নিহত শিশুটির মামাতো ভাই উপজেলার বুখাইতলা বান্ধবপাড়া গ্রামের মেহেদী হাসান ওরফে স্বপন ও একই গ্রামের সুমন জমাদ্দার।
আদালতে আসামিপক্ষে ছিলেন খন্দকার মাহবুব হোসেন ও সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মমতাজ উদ্দিন ফকির। অন্যদিকে রাষ্ট্র পক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. বশির উল্লাহ্।
আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শেষে গত ৩০ জুন হাইকোর্টের বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ও বিচারপতি এএসএম আব্দুল মবিনের ভার্চুয়াল বেঞ্চ ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুইজনকে খালাস দিয়ে রায় দেয়।
আদালতে ওইদিন আসামিপক্ষে শুনানি করেন শিশির মো. মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শাহীন আহমেদ খান।
২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি পিরোজপুরের জেলা ও দায়রা জজ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. গোলাম কিবরিয়া আসামি দুজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন। পাশাপাশি তাদের এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়।
মামলা সূত্রে জানা যায়, শিশুটি নানা বাড়িতে থেকে তৃতীয় শ্রেণিতে লেখাপড়া করতো। সে যে স্কুলে পড়তো ২০১৪ সালের ৫ অক্টোবর সকালে সেই স্কুলের মাঠে গরুকে ঘাস খাওয়ানোর জন্য যায়। দুপুরেও ঘরে না ফেরায় স্বজনরা তাকে খুঁজতে শুরু করেন। পরদিন দুপুরে বাড়ির পাশের একটি বাগানে তার ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ পাওয়া যায়।
খবর পেয়ে মঠবাড়িয়া থানা পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পিরোজপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। প্রতিবেদনে বলা যায়, শিশুটিকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।
এ ঘটনায় শিশুটির বাবা বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেন। তদন্ত শেষে মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা রথীন্দ্রনাথ বিশ্বাস এ ঘটনায় শিশুটির মামাতো ভাই মেহেদী হাসান স্বপনের সংশ্লিষ্টতা পান। পরে মেহেদী ও তার সহযোগী সুমন জমাদ্দারকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায় পুলিশ।
সুমন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, তিনি ও মেহেদী মেয়েটিকে বাগডাসা দেখানোর লোভ দেখিয়ে বাগানে নিয়ে প্রথমে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি যাতে জানাজানি না হয় সেজন্য পরে তারা গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে শিশুটিকে হত্যা করেন।
রথীন্দ্রনাথ বিশ্বাস অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, শিশুটির বড় বোনকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন মেহেদী। শিশুটির পরিবার এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে স্বজনরা মেহেদীকে অন্য একটি মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দেন। কিন্তু তাতেও শিশুটির বোনের প্রতি আকর্ষণ না কমায় স্ত্রীর ওপর প্রায়ই নির্যাতন করতেন মেহেদী। একই বাড়িতে থাকায় শিশুটি তাতে বাধা দিতো।
এনিয়ে শিশুটির ওপর রাগ ছিল মেহেদীর। একপর্যায়ে মেহেদী তার বন্ধু সুমনকে নিয়ে ফন্দি আঁটেন যে শিশুটিকে ধর্ষণ করে হত্যা করলে স্বজনরা এনিয়ে ব্যস্ত থাকবেন। সে সুযোগে শিশুটির বোনকে অপহরণ করে পালিয়ে যাবেন তিনি।
পরিকল্পনা অনুযায়ী শিশুটিকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয় বলে মামলার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এ মামলায় তদন্ত শেষ করে ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি এ দুই আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দেন তদন্ত কর্মকর্তা। ওই বছরের ৭ এপ্রিল তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। আসামি সুমন জমাদ্দার ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেও পরবর্তীতে তা প্রত্যাহার করেন।
মামলার শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ সর্বমোট ১৩ জন সাক্ষী উপস্থাপন করে। অপরপক্ষে আসামি দুজনের পক্ষে ১১ জন সাক্ষী হাজির করা হয়।
মামলায় ১৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আসামিদের উপস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ড দেয় বিচারিক আদালত।