দেশের সব জলাভূমি রক্ষা, উন্নয়ন এবং ব্যবস্থাপনার জন্য ‘জলাভূমি মন্ত্রণালয়’ গঠনের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে দ্রুত জলাভূমি সুরক্ষা, উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন প্রণয়ন করতে বলা হয়েছে সরকারকে।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের কৃষিজমি, নিম্ন ভূমি, জলাভূমি ও মেঘনা নদীর অংশের জমি ভরাটকে অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ে এসব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় লিখেছে।
রোববার সন্ধ্যায় ১৩২ পৃষ্ঠার রায় সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের ওয়েব সাইটে প্রকাশ হয়। এতে দেশের সব জলাভূমি রক্ষায় ১১টি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি নির্দেশনায় জলাভূমিকে পাবলিক ট্রাস্ট প্রপার্টি ঘোষণা করতে বলা হয়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জলাভূমি রক্ষার বিষয়ে ক্লাস নেয়ারও আদেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
এ ছাড়া, রায়ে পরিবেশবান্ধব উন্নত দেশ গড়তে ১৪টি বিষয়ের উপর মতামত দিয়েছে হাইকোর্ট। নবায়নযোগ্য জ্বালানি আইন প্রণয়ন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি একটি কমিশনও গঠন করতে বলা হয়েছে।
ঢাকাসহ দেশের সব সড়কে সাইকেল লেন করার মতামত দিয়ে আদালত বলেছে, এটি দেশকে উন্নত করবে। সেই সঙ্গে প্লাস্টিকের ব্যাগ বন্ধেও মত এসেছে। বিশ্ব ঐতিহ্যের সুন্দরবন, বাগেরহাটের ঐতিহাসিক মসজিদ রক্ষা, পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার রক্ষায় উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করতেও মত দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশকে পরিবেশবান্ধব করতে এ রায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সব সরকারি অফিসে দ্রুত পাঠানোরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
জলাভূমি রক্ষায় হাইকোর্টের নির্দেশনাগুলো হলো:
০১. যেহেতু বাংলাদেশ রামশার কনভেনশন বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করে আন্তর্জাতিক চুক্তি সম্পাদন করেছে সেহেতু উক্ত অঙ্গীকার এবং চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দ্রুত জাতীয় নীতিমালা গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আইনগত দায়িত্ব ও কর্তব্য।
০২. ‘তুরাগ নদী’ রায় মোতাবেক সকল জলাভুমি পাবলিক ট্রাস্ট প্রপার্টি তথা জনগণের ‘ন্যাস সম্পত্তি’ তথা জাতীয় সম্পত্তি।
০৩. সকল জলাভূমির সুরক্ষা, উন্নয়ন এবং ব্যবস্থাপনার নিমিত্তে অনতিবিলম্বে পৃথক জলাভূমি মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করা।
০৪. জলাভূমি রক্ষা, উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনায় দ্রুত আইন প্রণয়ন।
০৫. নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার পিরোজপুর, জৈনপুর, চরহিস্যা, চরভবনাথপুর, ভাটিয়াবান্দা এবং রতনপুর মৌজার কৃষি জমি, নিচু জমি এবং জলাভূমি কী পরিমাণ দখল এবং বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে তার পরিমাণ এবং ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর এবং স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ প্রদান করা হলো।
০৬. এই রায়ের কপি প্রাপ্তির ৬ মাসের মধ্যে উল্লেখিত ছয়টি মৌজার জায়গা পূর্বাস্থায় ফিরিয়ে আনতে পরিবেশ অধিদপ্তর এবং স্থানীয় প্রশাসনকে বলা হয়েছে।
০৭. এ ছয়টি মৌজায় মাটি ভরাটের বিষয়টি তদন্ত করে ৬ মাসের মধ্যে ক্ষতিপূরণ আদায় করে দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
০৮. অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন ২০১০ এর অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার আবেদন করতে হলে আবেদন পত্রের সঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র সংযুক্তকরণে বাধ্যতামূলক করতে হবে।
০৯. ডিজিটাল ডাটাবেজ প্রণয়নের ক্ষেত্রে এসপিএ, আরআরএসও সেটেলাইটের সাহায্যে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশের সব জলাভূমির ভৌগলিক অবস্থান নির্ণয় এবং জীববৈচিত্র্য বিষয়ক তথ্যাদি সংগ্রহপূর্বক সকল ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলার ম্যাপ প্রস্তুত করতে হবে।
১০. দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতি মাসে অন্তত একদিন এক ঘণ্টার জন্য জলাভূমির প্রয়োজনীয়তা, উপকারিতা, রক্ষাসহ সব বিষয়ে আলোচনার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করবে।
১১. দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে জেলা পর্যায়ে তিন মাস অন্তর অন্তর জলাভূমির ওপরে আলোচনা, সেমিনার করার ব্যবস্থা করবে।