উগ্রবাদী বক্তা মাহমুদ হাসান গুনবীকে নোয়াখালী থেকে গত ৫ জুলাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে আনা হয়েছে বলে তার পরিবার অভিযোগ করলেও র্যাব তা অস্বীকার করেছে। বৃহস্পতিবার রাতে মিরপুরের বেড়িবাঁধ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বাহিনীটি।
শুক্রবার বিকেলে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে গুনবীকে হাজির করা হয়। তবে তার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ ছিল না।
সংবাদ সম্মেলনে তালেবানপন্থি এই ধর্মীয় বক্তাকেও হাজির করা হয়। আর এ সময় গুনবীর স্বজনদের অভিযোগের বিষয়টি তুলে ধরলে জবাব দেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন।
র্যাব কর্মকর্তা জানান, গুনবীকে গ্রেপ্তারে দুই মাসের বেশি সময় ধরে র্যাব ও অন্য বাহিনী চেষ্টা করছে। আর বিষয়টি টের পেয়ে গুনবী আত্মগোপনে যান। তিনি দেশ ছাড়ার চেষ্টাও করছিলেন। তবে এই দেশত্যাগের উদ্দেশ্য কী, সে বিষয়ে এখনই বিস্তারিত জানা যায়নি।
গত ৫ জুলাই নোয়াখালী থেকে তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেয়ার অভিযোগ করেছেন স্বজনরা।
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করা হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তাকে আদালতে উপস্থাপন করতে হয় আর তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানাতে হয়।
কিন্তু গুনবীকে তুলে আনার অভিযোগ স্বীকার করেনি পুলিশ বা র্যাব। আর তার অন্তর্ধানের বিষয়টি নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যেই শুক্রবার র্যাবের পক্ষ থেকে বক্তব্য আসে তাকে গ্রেপ্তারের।
গুনবীকে গ্রেপ্তার ও তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানাচ্ছেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন
জানানো হয়, গত রাতে ঢাকার মিরপুর বেড়িবাঁধ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে গুনবীকে। আর শুক্রবার বিকেলে তার বিষয়ে জানাতে সংবাদ সম্মেলনে আসেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গুনবী দেশে জঙ্গি হতে তরুণদের উদ্বুদ্ধ করছেন। তার কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতীয় সংসদে আত্মঘাতী হামলার চেষ্টা করেছিলেন দুই তরুণ।
র্যাক কর্মকর্তা জানান, গত ৫ মে সন্ধ্যায় শেরেবাংলা নগর থেকে আনসার আল ইসলামের সদস্য আবু সাকিব ও আলী হাসান ওসামা নামে দুজনকে গ্রেপ্তারের পর এই বিষয়টি জানা যায়। তার তখন থেকেই গুনবীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
গুনবীও গ্রেপ্তার এড়িয়ে আত্মগোপনের জন্য ক্রমাগত জায়গা পরিবর্তন করছিলেন। যে কারণে সম্ভাব্য জায়গাগুলোতে একাধিক বাহিনী অভিযান চালিয়েও তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তবে বৃহস্পতিবার রাতে তিনি ধরা পড়েন।
মঈন উদ্দিন বলেন, সাকিবকে গ্রেপ্তারের পর গুনবী প্রথমে কুমিল্লা থেকে খাগড়াছড়ি চলে যান, পরে বান্দরবান ছিলেন। তিনি বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান পরিবর্তন করেন।
গুনবীর বিরুদ্ধে তরুণদের উগ্রপন্থায় উদ্বুদ্ধ করা ছাড়াও আত্মঘাতী বানানোর চেষ্টার অভিযোগ এনেছে র্যাব
‘র্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গত মাসের ৬ তারিখের পর থেকে নিয়মিতই অভিযান পরিচালনা করেছে। আমার মনে হয়, এমন একটা প্রেক্ষাপট আসতে পারে যে তার যেসব স্পটে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল, সবগুলো স্পটেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী র্যাব বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়েছে। সে ক্ষেত্রে কোথাও হয়তো র্যাবের ছবি আসতে পারে, এমন একটা প্রসঙ্গ আসতে পারে। বাট আমরা গতকাল গুনবীকে গ্রেপ্তার করেছি’- বলেন র্যাব পরিচালক।
তিনি বলেন, ‘উত্তরবঙ্গ হয়ে দেশত্যাগের পরিকল্পনা ছিল গুনবীর। তবে সেটা নিজেকে রক্ষা করার জন্য, নাকি অন্য কোনো ইস্যু নিয়ে আমাদের বলেননি।’
স্বজনরা যা বলেছিলেন
গত ৯ জুলাই গুনবীর সন্ধান চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তার পরিবার। নোয়াখালী টিভি সাংবাদিক ফোরাম কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন হয়।
গুনবীর বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুনবতী গ্রামে।
সংবাদ সম্মেলনে তার স্বজনরা জানান, ৫ জুলাই সকালে তিনি নোয়াখালী সদরের করমুল্যা ইউনিয়নের পশ্চিম শুল্লাকিয়া গ্রামে একজনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে সাদাপোশাকে কয়েকজন তাকে তুলে নিয়ে যায়। এর পর থেকে থানাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন দপ্তরে গিয়েও কোনো সন্ধান পাননি তার।