দিনাজপুরে যাওয়ার জন্য রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে অপেক্ষা করছিলেন মো. শাহেদিন।
কাউন্টারে গেলে তার কাছে টিকেটের দাম চাওয়া হয় ১৬০০ টাকা। অথচ করোনা মহামারির সময়ে সরকার নির্ধারিত ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়তি দিয়েও দিনাজপুরের ভাড়ার হওয়ার কথা ১০০০ টাকা।
শাহেদিন বলেন, ‘দিনাজপুরের ভাড়া আরও ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়ে ৪০০ টাকা করে বেশি রাখা হচ্ছে। অথচ করোনার আগে এই ভাড়া ছিল ৬০০ টাকা।’
একইরকম অভিযোগ করলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী শম্পা।
তিনি বলেন, ‘আমি অনলাইনে টিকিট করেছি। আমার কাছে নিয়েছে ১২০০ টাকা। কিন্তু এখানে এসে শুনছি ১০৫০ টাকা দিয়ে সবাই টিকিট করছেন।’
বিভিন্ন কাউন্টার ঘুরে জানা গেছে, স্বাভাবিক সময়ে যশোরের ভাড়া ৪৮০ টাকা। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে লকডাউনে ৬০ শতাংশ হারে ভাড়া বাড়ায় সেটি হয়েছে ৭০০ টাকা।
পরিবহনকর্মীরা দাবি করছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরকার নির্ধারিত অর্ধেক যাত্রী নিয়ে ৬০ শতাংশ হারেই ভাড়া নেয়া হচ্ছে। গাবতলীর কাউন্টার থেকে বলা হচ্ছে রোববার ও সোমবারের টিকিটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানী ছাড়তে গাবতলী বাস টার্মিনালে মানুষের ভিড় দেখা গেছে। শুক্রবার সকাল থেকে সেখানে অনেকে অপেক্ষা করছেন।
করোনাভাইরাস মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ায় ১ জুলাই থেকে শাটডাউন ঘোষনা করে সরকার। যার ফলে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কোরবানির ঈদের আগে ১৫ জুলাই থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত লকডাউন শিথিল করলে বৃহস্পতিবার থেকে বাস চলাচল পুনরায় শুরু হয়।
গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে বগুড়া যাবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী সৌরভ।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুপুর ১২টা থেকে বসে আছি। কাউন্টার থেকে বলা হচ্ছে কোনো টিকিট নাই। তবে একই কাউন্টারের টিকিট তারা বাইরে দালাল দিয়ে বিক্রি করছে। ৬০ শতাংশ হারে টিকিট দিতে হবে বলেই তারা এমনটি করছে।’
যাত্রীদের বেশি ভাড়া নেয়ার অভিযোগ নিয়ে হানিফ এন্টারপ্রাইজের কাউন্টার মাস্টার ফরিদ হোসেন রানা বলেন, ‘অবশ্যই বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে না। আমরা তো ভাড়ার তালিকা দিয়ে দিয়েছি। আর দালাল দিয়ে টিকিট বিক্রির বিষয়টাও মিথ্যা কথা।’
টিকিট নেই অনেক কাউন্টারে
শুক্রবার গাবতলীর বেশ কয়েকটা বাস কাউন্টারে কথা বলে জানা গেছে বাসের কোনো টিকিট নেই।
হানিফ কাউন্টারের কাউন্টারের কর্মচারী জানালেন, ‘টিকিট নেই। কারণ আমাদের দিনের টিকিট দিনেই দিয়ে দিচ্ছি। অগ্রিম কোনো টিকেট দিচ্ছি না।’
বিষয়টির সত্যতা মিলল দিনাজপুরের এক যাত্রীর কথায়। গাবতলী থেকে দিনাজপুর যাবেন আহাদ। জানালেন, দিনাজপুরের কোনো টিকিট নেই। তাই এখন বগুড়ার গাড়িতে যাচ্ছি। গাবতলী বাস টার্মিনালে সকাল ১০টা থেকে বসে আছি।’
গাড়ি আসতে দেরি
বাস টার্মিনালে সকাল ৭টা থেকে অপেক্ষা করছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী শম্পা। তিনি সুন্দরবন পরিবহনে যশোর যাবেন।
তিনি বলেন, ‘সকাল ৭টা থেকে এখানে বসে আছি। কিন্তু বাস কাউন্টার থেকে বলা হচ্ছে এই গাড়ি আসছে, এই আসছে। এখন দুপুর ২টা বাজে। এখনও গাড়ি আসে না।’
গাবতলীর সুন্দরবন পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার মো. কাইয়ুম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের সব গাড়ি রাস্তায়। গাড়ি এখনও আসে নি। কী করব?’
গাবতলীর সাকুরা পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার আল আমিনের কাছে কোন দিনের টিকিটের চাহিদা সব চেয়ে বেশি জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘১৮ ও ১৯ তারিখের টিকিটের চাহিদা সব চেয়ে বেশি।’
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমরা বুকিং সিস্টেমে যাচ্ছি না। সরাসরি টিকিট বিক্রি করছি। যারা টিকিট পাচ্ছে তারা যাচ্ছে।’
মেহেরপুরের মুজিবনগর যাবেন রিফাত। তিনি বলেন, ‘ভাড়া চাচ্ছে ৮০০ টাকা। কিন্তু এখনও টিকিট পাই নি।’
জীবাণুনাশক দিয়ে বাস পরিচ্ছন্ন করা ও হাত স্যানিটাইজ করার স্বাস্থ্যবিধিগুলো বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেয়ার কথা পরিবহন কর্তৃপক্ষ বললেও সেটি মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ অনেক যাত্রীর। তবে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা সেটি মানতে নারাজ।
রাজশাহীর জি এম পরিবহনে হেলপার রাজু বলেন, ‘আমরা তো এস্প্রে করতেছি। সরকার করতে কইছে, করুম না ক্যা?
তবে রাজশাহীর আঁচল পরিবহনের যাত্রী শাকিল বলেন, ‘গাড়িতে চড়ার আগে এস্প্রে করছে দেখছি। কিন্তু হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেয় না।’