তাসখন্দে কানেক্টিভিটি সম্মেলনে যোগদান ছাড়াও ব্যস্ত একটি দিন কাটালেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন। বৃহস্পতিবার তিনি তাজিকিস্তান, চীন ও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন।
এদিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
‘মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া: আঞ্চলিক সংযোগ’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে তিনি এখন উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখন্দে রয়েছেন।
মোমেন- জয়শঙ্কর বৈঠক
পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে এ কে আবদুল মোমেন এবং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক যোগাযোগ, উভয় দেশের করোনা মহামারি এবং টিকাদান পরিস্থিতি, অস্থায়ীভাবে বাংলাদেশে অবস্থানরত মিয়ানমারের নাগরিকদের স্বদেশ প্রত্যাবাসন সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে উভয় দেশের মধ্যে পারস্পারিক সহযোগিতার বিষয়ে একমত হন দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
জয়শঙ্কর আবারও বাংলাদেশে টিকা সরবরাহের বিষয়ে অঙ্গীকার জানান ও বাংলাদেশের কোভিড টিকা কর্মসূচি আবারও সঠিক পথে আসায় আনন্দ প্রকাশ করেন। উভয় পক্ষ অংশীদারিত্বকে আরও জোরদার করতে এবং বহুমুখী সহযোগিতা সম্প্রসারণে তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তারা উভয় দেশের কোভিড পরিস্থিতির উন্নতির পরেই বিভিন্ন যৌথ কার্যক্রম শুরু করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
মোমেন-ওয়াং ইয়ি বৈঠক
জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক শেষেই চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন আবদুল মোমেন।
দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীই জাতির পিতার ১০০তম বার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর যৌথ কর্মসূচি ও কমিউনিস্ট পার্টির শততম বার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং এবং প্রধানমন্ত্রী হাসিনার ভিডিও বার্তাগুলি বিনিময় করার জন্য একে অপরের প্রশংসা করেন ও ধন্যবাদ জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছয় জাতির কোভিড ভ্যাকসিন সংরক্ষণ জোট বা সিওআইডি উদ্যোগ গ্রহণের জন্য চীনকে ধন্যবাদ জানান। তিনি টিকা সংকটের কঠিন সময়ে চীন সরকারের দেয়া উপহার ও বাণিজ্যিক সরবরাহের লাইন চালু করায় কৃতজ্ঞতা জানান। এ সময় তিনি দ্রুত বাংলাদেশে করোনা টিকার যৌথ উৎপাদন শুরুর অনুরোধ করেন।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন।চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ি এ বিষয়ে তাকে চীন সরকারের সহায়তার আশ্বাস দেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আরও কাজ চালিয়ে যেতে সম্মত হন। তারা ত্রিপক্ষীয় কথোপকথন পুনরায় শুরু করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়েও একমত হন।
তাজিক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক
তাজিকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিরোজিদ্দিন মুহরিদ্দিনের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
দ্বিপাক্ষিক এ বৈঠকে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য একটি যৌথ কার্যনির্বাহী কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেন তিনি।
এ সময় তাজিকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুহরিদ্দিন নিপীড়িত রোহিঙ্গা জনগণকে আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি তার দেশের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এছাড়া বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বহুমাত্রিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে সমর্থন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দেন।
উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্ট শাভকাত মিরজিইয়োইয়েভের উদ্যোগে আয়োজিত কানেক্টিভিটি সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, মূলত অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সংযুক্তির মাধ্যমে ঐতিহাসিক সম্পর্ক জোরদারের জন্য উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্ট এই সম্মেলনের আয়োজন করেছেন।
মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সংযুক্তির সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ বিষয়ক সম্মেলনে যোগ দিতে বুধবার সকালে মধ্য এশিয়ার দেশ উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখন্দ গেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।
১৫ ও ১৬ জুলাই অনুষ্ঠেয় দুই দিনের এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, পাকিস্তান ও ইইউসহ বিশ্বের অন্তত ৪০টি দেশ ও জোটের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা।
তাজিকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকেপররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন।তাসখন্দ যাত্রার আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার কানেকটিভিটি বাড়ানোই এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য। ওই সম্মেলনের ফাঁকে উজবেকিস্তানসহ আরও কয়েকটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাস কাজ করছে।’
উজবেকিস্তানের সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও যাননি মোদি। সম্মেলনে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
সম্মেলনটি দুই দিনের হলেও করোনায় বিপর্যস্ত ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক দিনের জন্য উজবেকিস্তানে গেছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, উজবেকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ঢাকা-তাসখন্দ সরাসরি বিমান চলাচলের পাশাপাশি ঢাকায় কনস্যুলেট চালুর প্রস্তাব দিয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে এ বিষয়গুলো নিয়ে আবার আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত রূপ দেয়ার বিষয়টি এগিয়ে নেয়া হতে পারে।
সম্মেলনের ফাঁকে রাশিয়া, উজবেকিস্থানসহ আরো বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন ড. মোমেন। তিনি উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
তাসখন্দের সম্মেলনে ৪০টি দেশ থেকে ২৫০ প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন।
সম্মেলন শেষে ১৯ জুলাই ঢাকা ফিরবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে মোমেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উজবেকিস্তান সফরকালে রাশিয়া, ভারত ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমার বৈঠক হবে। এসব বৈঠকে রোহিঙ্গা, টিকা সহযোগিতা আলোচনা প্রাধান্য পাবে।’
তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের সেনাপ্রধান কিছুদিন আগে রাশিয়া গিয়েছিলেন। আমিও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি তুলে ধরতে চাই।’