উজবেকিস্তানের রাজধানীতে দেখা হলো দুই বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের।
আর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে এই সাক্ষাতে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
বৃহস্পতিবার সন্ধায় তিনি সাক্ষাতের দুটি ছবিও টুইটারে পোস্ট করেন।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তাসখন্দ সংযোগ সম্মেলনের সময় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পেরে আমি যারপর নাই খুশি। আমাদের যোগাযোগের সব দিকসহ অন্য দিকগুলো ও সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা করার জন্য এটা একটি ভালো সুযোগ।’
উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্ট শাভকাত মিরজিইয়োইয়েভের উদ্যোগে আয়োজিত কানেক্টিভিটি সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, মূলত অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সংযুক্তির মাধ্যমে ঐতিহাসিক সম্পর্ক জোরদারের জন্য উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্ট এই সম্মেলনের আয়োজন করেছেন।
মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সংযুক্তির সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জবিষয়ক সম্মেলনে যোগ দিতে বুধবার সকালে মধ্য এশিয়ার দেশ উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখন্দ গেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।
তাসখন্দে দুই দেশের প্রতিনিধিদলের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ছবি:সংগৃহীত
সম্মেলনে যোগ দেয়ার পাশাপাশি চীন, রাশিয়া ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে করোনাভাইরাস, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, করোনার টিকা ও তালেবান ইস্যু নিয়ে আলাদা বৈঠক হবে তার।
১৫ ও ১৬ জুলাই অনুষ্ঠেয় দুই দিনের এই সম্মেলনে অংশ নেবেন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, পাকিস্তান ও ইইউসহ বিশ্বের অন্তত ৪০টি দেশ ও জোটের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, মূলত অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সংযুক্তির মাধ্যমে ঐতিহাসিক সম্পর্ক জোরদারের জন্য উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্ট এই সম্মেলনের আয়োজন করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণার পর থেকেই ক্রমেই সংঘাতপূর্ণ হয়ে উঠেছে আফগানিস্তান। দুই দিনের সম্মেলন সংযুক্তির হলেও সমকালীন প্রসঙ্গ হিসেবে আফগানিস্তান নিয়ে আলোচনা হবে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, সম্মেলনের পার্শ্ব বৈঠকগুলোতেও আফগানিস্তান পরিস্থিতিসহ সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে।
তাসখন্দ যাত্রার আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার কানেকটিভিটি বাড়ানোই এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য। ওই সম্মেলনের ফাঁকে উজবেকিস্তানসহ আরও কয়েকটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাস কাজ করছে।’
উজবেকিস্তানের সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও যাননি মোদি। সম্মেলনে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
সম্মেলনটি দুই দিনের হলেও করোনায় বিপর্যস্ত ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক দিনের জন্য উজবেকিস্তানে গেছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, উজবেকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ঢাকা-তাসখন্দ সরাসরি বিমান চলাচলের পাশাপাশি ঢাকায় কনস্যুলেট চালুর প্রস্তাব দিয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে এ বিষয়গুলো নিয়ে আবার আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত রূপ দেয়ার বিষয়টি এগিয়ে নেয়া হতে পারে।
সম্মেলনের ফাঁকে বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন ড. মোমেন। তিনি উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
তাসখন্দের সম্মেলনে ৪০টি দেশ থেকে ২৫০ প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন।
সম্মেলন শেষে ১৯ জুলাই ঢাকা ফিরবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে মোমেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উজবেকিস্তান সফরকালে রাশিয়া, ভারত ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমার বৈঠক হবে। এসব বৈঠকে রোহিঙ্গা, টিকা সহযোগিতা আলোচনা প্রাধান্য পাবে।’
তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের সেনাপ্রধান কিছুদিন আগে রাশিয়া গিয়েছিলেন। আমিও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি তুলে ধরতে চাই।’
‘চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর সঙ্গে সেখানে বৈঠক হবে। চীন জানিয়েছে, আমাদের আরও ১০ লাখ টিকা উপহার দেবে। বৈঠকে টিকাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে।’
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে বৃহস্পতিবার বৈঠক করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তাসখন্দ সফরের সময় আরও কয়েকটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মোমেনের আলোচনার সম্ভাবনা আছে।
মোমেন-জয়শঙ্কর বৈঠক সম্পর্কে তিনি সেদিন বলেছিলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির গত মার্চে ঢাকা সফরের সময়ে বেশ কয়েকটি বিষয়ে একমত হয়েছিল দুই দেশের সরকার। কিন্তু সেগুলো নিয়ে দৃশ্যত কোনো ধরনের অগ্রগতি হয়নি গত কয়েক মাসে।
এ নিয়ে মোমেন বলেন, ‘আমরা চাই, যে বিষয়গুলো নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মতৈক্য হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য দ্রুত কাজ শুরু করা। গত তিন মাসে এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি এবং এ জন্য এটি আমাদের অগ্রাধিকার।’
‘ভারত থেকে পণ্য আমদানি ৪০ শতাংশের ওপর বৃদ্ধি পেলেও রপ্তানি আশানুরূপ বাড়েনি। এমনকি পাট পণ্যের ওপরে শুল্ক এখনও বলবৎ আছে। আরও কয়েকটি পণ্যের ক্ষেত্রে অশুল্ক ও শুল্ক বাধা আরোপ করার চিন্তা করছে ভারত সরকার।’
মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রের ভাষ্য, ভারত থেকে বাংলাদেশের আমদানি অনেক বেশি। তারপরেও বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতে বিভিন্ন বাধা দিচ্ছে ভারত।
তবে আজকের বৈঠকে কোন বিষয়ে কতটা আলোচনা ও অগ্রগতি হয়েছে তা এখনও কোনো সূত্রে জানা যায়নি।