শাটডাউন নামে পরিচিতি পাওয়া বিধিনিষেধের মধ্যে মৌখিক পরীক্ষার তারিখ দিয়ে পরীক্ষার্থীদের উৎকণ্ঠায় রেখে অবশেষে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলে আইনজীবী নিবন্ধন দেয়া বার কাউন্সিল।
২৫ জুলাই থেকে পরীক্ষা স্থগিত করে বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সংস্থাটি। তবে পরীক্ষা কবে হবে, সেটি বলা হয়নি এতে।
বার কাউন্সিলের সচিব রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে’ বলা হয়, ‘৩০ জুন জারিকৃত বিজ্ঞপ্তির ধারাবাহিকতায় সকলের অবগতির জন্য জানানো যাইতেছে যে, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউন ও এই সংক্রান্ত বিধি-নিষেধ চলমান থাকার প্রেক্ষিতে আসন্ন ২৫ জুলাই অ্যাডভোকেটশিপ তালিকাভুক্তির মৌখিক পরীক্ষা স্থগিত করা হইল।’
করোনাভাইরাসের কারণে বিধিনিষেধের মধ্যে এখন আর নতন তারিখ না নিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘‘তবে এ পরীক্ষা কবে হবে সেটি পরবর্তীতে জানিয়ে দেয়া হবে।’
বার কাউন্সিলে আইনজীবীদের সনদ পেতে নৈর্ব্যক্তিক, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। আবার ওই তিন ধাপের যে কোনো একটি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা একবার উত্তীর্ণ হলে পরবর্তী পরীক্ষায় তারা দ্বিতীয়বার অংশ নেয়ার সুযোগ পান।
সে অনুসারে ২০১৭ সালের ৩৪ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে থেকে লিখিত পরীক্ষায় বাদ পড়া ৩ হাজার ৫৯০ জন শিক্ষার্থী এবার লিখিত পরীক্ষা দিতে পেরেছেন।
২০২০ সালে ৭০ হাজারের বেশি শিক্ষানবিশ আইনজীবী নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে পাস করেন ৮ হাজার ৭৬৪ জন। তাদের সঙ্গে গতবার বাদ পড়াসহ মোট ১২ হাজার ৮৫৮ জন লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন।
করোনা ভাইরাসের বিস্তারের মধ্যেই গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর ও চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি দুই দফায় লিখিত পরীক্ষা হয়। ১৯ ডিসেম্বরের পরীক্ষায় পাঁচটি কেন্দ্রে গোলযোগের কারণে সেগুলোতে পরীক্ষা স্থগিত হয়। পরে এই পরীক্ষার্থীরা দ্বিতীয় দফায় লিখিত পরীক্ষা দেন।
মৌখিক পরীক্ষা স্থগিত করে বার কাউন্সিলের বিজ্ঞপ্তি
লিখিততে উত্তীর্ণরা এখন মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেবেন। এখানে পাস করলেই আদালতে আইনজীবী হিসেবে পেশাগত কাজ শুরু করবেন শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা।
শাটডাউনের বিধিনিষেধের মধ্যে গত ১২ জুলাই আগের বছর পাস করতে না পারা শতাধিক পরীক্ষার্থীকে বার কাউন্সিলে ডাকা হয় ফরম পূরণের জন্য।
তবে শাটডাউনের মধ্যে রোববার যে ব্যাংক বন্ধ, সেটি হিসাব করেনি কাউন্সিল। আর এ কারণে ফরম পূরণ করতে পারেনি ভোগান্তি সয়ে কাউন্সিলে যাওয়া পরীক্ষার্থীরা। আবার যারা ঢাকার বাইরে অবস্থান করছেন, তাদের একাধিক জনের সঙ্গে কথা হয়েছে নিউজবাংলার, যারা আসতেও পারেননি।
সেদিনই বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন জানান, তারা ফরম পূরণ পিছিয়ে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত করেছেন।
মৌখিক পরীক্ষা কবে নেয়া হবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ওইটা আমরা এখনও ঠিক করি নাই। পরিস্থিতি দেখে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
তবে এ বিষয়ে অফিস আদেশ কখনও জারি হয়নি। তাই বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে নানা দ্বন্দ্ব, মতভেদ রয়েই যায়।
পরে কাউন্সিলের পক্ষ থেকে সেদিন একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। তাতে উল্লেখ থাকে, ‘এতদ্বারা সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য জানানো যাইতেছে যে, হাইকোর্ট পারমিশন বিভাগের ফরম ফিলাম এবং অ্যাডভোকেটশিপ তালিকাভুক্তির কার্যক্রমের জন্য সীমিত আকারে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল অফিস খোলা হইলেও করোনা মহামারির কারণে সরকারঘোষিত লকডাউনের জন্য পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অফিস কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
‘উল্লেখ্য যে, হাইকোর্ট পারমিশন বিভাগের ফরম ফিলাপ ৩১ আগস্ট ২০২১ ইং পর্যন্ত অনলাইনে চলমান থাকিবে।’
তবে এই ঘোষণায় আইনজীবী নিবন্ধন পরীক্ষা পেছাবে কি পেছাবে না, তা নিয়ে সুষ্পষ্ট বক্তব্য না থাকায় উৎকণ্ঠার মধ্যেই থাকে পরীক্ষার্থীরা।
এর মধ্যে সরকার ঈদ উপলক্ষে চলমান বিধি নিষেধ আট দিনের জন্য শিথিল করা হয়েছে। তবে ২৩ জুলাই থেকে আবার কঠোর বিধিনিষেধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
কাউন্সিল পরীক্ষা নিলে এই পরীক্ষার্থীরা কীভাবে ঢাকায় আসবে, এমন প্রশ্নের মুখে নতুন বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি অবশ্য স্পষ্ট হয়েছে।