কোরবানির ঈদ উপলক্ষে শিথিল শাটডাউনে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু ট্রেন চলাচল। এ সময়ে স্বাস্থ্যবিধি ও সব নিয়ম মেনে যাত্রী পরিবহন নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা। রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে খুশি হলেও যাত্রীদের নিয়ম না মানা ও ভিড় করা নিয়ে রয়েছেন উদ্বেগে।
ঈদে ট্রেনযাত্রার প্রস্তুতি দেখতে বৃহস্পতিবার সকালে কমলাপুর রেল স্টেশন ঘুরে দেখেন রেলমন্ত্রী। তিনি সার্বিক ব্যবস্থাপনায় খুশি বলে জানান সাংবাদিকদের।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমি যেটি পরিদর্শন করলাম, সেখানে সব ঠিক আছে। এখানে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে। ঈদের আগে যাত্রীর চাপ সামলানোর ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা রয়েছে। তবু স্বাস্থ্যবিধি মানার চেষ্টা করা হবে।'
সুজন বলেন, ‘আমাদের মাত্র কয়েকটি স্টেশনে যাত্রী প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করার সুবিধা আছে। আর লোকাল ট্রেনের টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে স্টেশন থেকে। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানা নিয়ে সমস্যা হতে পারে এমন আশঙ্কা আমার ছিল। তবে আমাদের প্রত্যেকের অভিজ্ঞতা আছে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
লোকাল ট্রেনে নিয়মের কিছুটা ব্যত্যয় হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘সব স্টেশন আমরা কন্ট্রোল করতে পারিনি। মানুষ হুড় হুড় করে ট্রেনে উঠে যায়, দাঁড়িয়ে থাকে। এটা নিয়ন্ত্রণ করার যে কৌশল, সেটা তো এখনো ঠিক করতে পারিনি।’
সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে রেলমন্ত্রী বলেন, ‘যাত্রীদের আসন অর্ধেক করায় বাসের ভাড়া বাড়ানো হলেও ট্রেনে বাড়েনি। আমাদের নির্দেশনা অমান্য ও অনিয়মের যদি প্রমাণ মেলে তবে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটতে ভোগান্তি নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এটা অস্বাভাবিক বিষয় নয়। ৪০ থেকে ৫০ লাখ মানুষ যদি একযোগে টিকিট কাটার চেষ্টা করেন, তা হতেই পারে। ট্রেনের সিট ক্যাপাসিটি যেখানে ৭০০, সেখানে টিকিট বিক্রি হচ্ছে ৩৫০টি। এরকম পরিস্থিতিতে মানুষের যে চাপ, সেটা সামাল দেয়া কঠিন।’
রেলের জনবল ঘাটতির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যেই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রেলের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করব। জনবল ঘাটতির জন্য আমরা অনেক কিছু করতে পারি না।’
রেলমন্ত্রী সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নে একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, ‘আপনারা আগে পজিটিভ দিকটা লেখেন, পরে নেগেটিভ দিক তুলে ধরেন।’
কোরবানির ঈদ উপলক্ষে আট দিনের জন্য শিথিল করা হয়েছে শাটডাউন। এ সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু থাকবে ট্রেন।
শিথিল শাটডাউনের সময় ট্রেন কীভাবে চলবে এ ব্যাপারে মঙ্গলবার বিস্তারিত জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে, অনলাইনে ট্রেনের টিকিট বিক্রি করা হবে বুধবার থেকে। আর ট্রেন চালু হবে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে। চলবে ২৩ জুলাই ভোর ৬টা পর্যন্ত।
রেলওয়ে জানিয়েছে, ভ্রমণের দিনসহ পাঁচ দিন আগে আন্তনগর ট্রেনগুলোর অগ্রিম টিকিট ইস্যু করা হবে। যাত্রীদের সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আন্তঃনগর ট্রেনের সব কোচের ধারণক্ষমতার অর্ধেক টিকিট বিক্রি করা হবে। টিকিটগুলো একই সঙ্গে অনলাইন এবং মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে বিক্রি করা হবে। কাউন্টার থেকে আন্তনগর ট্রেনের কোনো টিকিট বিক্রি করা হবে না। আর অনলাইন বা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে বিক্রি করা কোনো টিকিট ফেরত নেবে না কর্তৃপক্ষ।
প্ল্যাটফর্মে ঢোকার মুখে ও ট্রেনে যাত্রীদের অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। ট্রেনে ওঠা এবং নামায় নির্দিষ্ট দরজা ব্যবহার করতে হবে। কুলি, ট্রলি ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে আরও জানিয়েছে, ট্রেনের প্রতিটি কোচ ও ইঞ্জিন চলাচলের আগে স্বাস্থ্যবিধি মেনে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। এসব ট্রেন পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের বিষয়টি অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।